ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক অপহৃত এই ফিলিস্তিনি পরিচালক কে?
(last modified Wed, 26 Mar 2025 14:06:27 GMT )
মার্চ ২৬, ২০২৫ ২০:০৬ Asia/Dhaka
  • হামদান বিলাল
    হামদান বিলাল

পার্সটুডে-প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি পরিচালক হামদান বিলালকে ইহুদিবাদীরা অপহরণ ও মারধর করেছে।

সোমবার রাতে দক্ষিণ পশ্চিম তীরের সুসিয়া গ্রামে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের পর নিখোঁজ হন ফিলিস্তিনি পরিচালক এবং অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র 'দেয়ার ইজ নো আদার ল্যান্ড'-এর অন্যতম স্রষ্টা হামদান বিলাল। পার্সটুডে জানায়, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে এবং আবারও ইহুদিবাদী সরকারের বর্ণবাদী ও দমনমূলক নীতির চেহারা উন্মোচিত করেছে।

হামদান বিলালের সহ-পরিচালক এবং দেয়ার ইজ নো আদার ল্যান্ড তথ্যচিত্রের অন্যতম নির্মাতা যুবাল আব্রাহাম এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন। ওই পোস্টে তিনি বলেছেন: সম্প্রতি একদল বসতি স্থাপনকারী হামদান বিলালকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে মারধর করে। তার মাথা ও পেটে আঘাত করা হয়েছে। এমন আঘাত যে তার মাথা ও পেট থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সেনারা ত্রাণ ও সহায়তা দিতে আসা অ্যাম্বুলেন্সেও আক্রমণ করে এবং বিলালকে তুলে নিয়ে যায়।

ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে যেখানে 'বিলাল'-কে মারধর করা হয় সেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে: ১০ থেকে ২০ জন মুখোশধারী বসতি স্থাপনকারীর একটি দল পাথর ও লাঠি দিয়ে তাকে এবং থামাতে আসা বেশ কয়েকজন ইহুদি কর্মীর ওপরও আক্রমণ করে। আক্রমণকারীরা তাদের গাড়ির জানালা ভেঙে দেয় এবং টায়ারগুলো পাংচার করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মুখোশধারী বেশিরভাগই ছিল কিশোর এবং তাদের হাতে ছিল লাঠি আর ছুরি। তিনজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাদের আইনজীবীর মতে, জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাদের একটি সামরিক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি পরিচালককে গ্রেপ্তারের কারণ ছিল সুসিয়া গ্রামে ফিলিস্তিনিদের ওপর বসতি স্থাপনকারীদের ওপর আক্রমণের চিত্রগ্রহণ।

'দেয়ার ইজ নো আদার ল্যান্ড' তথ্যচিত্রটিতে ফিলিস্তিনের একটি পরিবারের গল্প বলা হয়েছে, যাদের বাড়ি ইহুদিবাদীরা ধ্বংস করে দেয় এবং তারা বাস্তুচ্যুত হয়। বার্লিন, টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার এবং নিউইয়র্কসহ আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতে বিচারক এবং দর্শকদের দ্বারা ছবিটি প্রশংসিত হয়েছিল। সেইসাথে ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়েছিল ছবিটি। বিলাল এবং তার সহকর্মীরা অস্কারের সুযোগটি ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অবিচার ও জাতিগত নির্মূল অভিযান বিষয়ে বিশ্বকে সচেতন করেছিলেন।

'নো আদার ল্যান্ড' তথ্যচিত্রের আরেক নির্মাতা 'বাসাল আদ্রা' অস্কার অনুষ্ঠানে বলেন: 'আমরা বিশ্বকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অবিচার এবং জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধে গুরুতর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।' প্রায় দুই মাস আগে আমি বাবা হয়েছি এবং আমি আশা করি আমার মেয়েকে এখন আমার মতো জীবনযাপন করতে হবে না, একইরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।

তথ্যচিত্রটি অস্কার জেতার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে এই ঘটনাটি ঘটে এবং শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ প্রকাশের যেকোনো প্রচেষ্টার প্রতি ইসরাইলের কঠোর প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিরও প্রতিফলন ঘটায়। আন্তর্জাতিক তথ্যচিত্র সমিতি (আইডিএ) এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবিলম্বে বিলালের মুক্তি এবং তার অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দাবি করেছে। আইডিএ'র বিবৃতিতে বলা হয়েছে: বিলালের পরিবার এবং সম্প্রদায়কে তার অবস্থা, অবস্থান এবং তাকে আটকের কারণ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানও ইহুদিবাদী এই ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এই ঘটনাকে ইহুদিবাদী সরকারের আগ্রাসী নীতির আরেকটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিরোধ-কেন্দ্রিক গণমাধ্যম এই পদক্ষেপকে সত্য ও প্রতিরোধের কণ্ঠস্বরকে নীরব করার জন্য ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

তবে, গতরাত এবং আজ (বুধবার) সংবাদসূত্রে ঘোষণা করা হয়েছে, বিলাল এবং আরও দুই গ্রেপ্তারকৃত ফিলিস্তিনিকে মঙ্গলবার বিকেলে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসার জন্য একটি ফিলিস্তিনি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি পরিচালকের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোক একটি আবেদনে স্বাক্ষর করে অবিলম্বে বিলালের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। চিঠিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে: আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার প্রতি এ ধরনের আচরণ শিল্পের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করে এবং আমরা বিলালের নিরাপত্তা, দ্রুত মুক্তিসহ তার পরিবার ও আইনি পরামর্শের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাই।

আবেদনপত্রে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন: রজার রস উইলিয়ামস, অ্যালেক্স গিবনি, ক্রিস্টিন ওয়াচন, লিজ গার্বস, এজরা এডেলম্যান, ড্যান কুগান, ক্রিস্টি জ্যাকবসন, জুলি গোল্ডম্যান, লি হির্শ, জোসেলিন বার্নস, ফিশার স্টিভেন্স, ডন পোর্টার, রোরি কেনেডি, জেনিস ফোর্ড, লরা নিক্স, মারজান সাফিনিয়া, জুলিয়া বাজা, সাইমন কিলমেরি, জেন সিয়েন, জেহান রবিনসন, স্যান্ডি ডুবোস্কি, ইওরুবা রিচেন, লিসা ভ্যালেন্সিয়া সোয়ানসন, রায়ান ওয়ার্নার, সাব্রিনা শ্মিট গর্ডন, ড্যানিয়েল চ্যালফেন, হাইডি ইউইং, মিটি আলবের্ডি, স্টিভ মিং, সোনিয়া চাইল্ড্রেস, ডেভিড টিগ, সুসান মার্গোলিন, ফ্রান পার্লস্টাইন এবং জেরালিন ড্রেফাস।#

পার্সটুডে/এনএম/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।