শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর উত্তরাধিকার; প্রতিরোধের পতাকা এখনও উঁচুতে উড়ছে
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i152386-শহীদ_সাইয়্যেদ_হাসান_নাসরুল্লাহর_উত্তরাধিকার_প্রতিরোধের_পতাকা_এখনও_উঁচুতে_উড়ছে
পার্স টুডে - সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের এক বছর পর এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ আবারও তাঁর স্মৃতির ছায়ায় প্রভাবিত হয়েছে এবং তাঁর শাহাদাত দ্রুত দখলদারিত্ব বিরোধী আন্দোলনগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি জোরদার ও প্রতিরোধের আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার নবায়নের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
(last modified 2025-09-27T13:26:43+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫ ১৭:৪২ Asia/Dhaka
  • শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
    শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ

পার্স টুডে - সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের এক বছর পর এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ আবারও তাঁর স্মৃতির ছায়ায় প্রভাবিত হয়েছে এবং তাঁর শাহাদাত দ্রুত দখলদারিত্ব বিরোধী আন্দোলনগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি জোরদার ও প্রতিরোধের আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার নবায়নের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ শুক্রবার, বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অপরাধমূলক আক্রমণে শহীদ হন। শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিক থেকে হিজবুল্লাহর প্রধান ছিলেন এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লেবানন ও এ অঞ্চলের উন্নয়নে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

তিনি হিজবুল্লাহকে স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠী থেকে পশ্চিম এশিয়ার সমীকরণের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর ক্যারিজম্যাটিক ব্যক্তিত্ব, অবস্থান প্রকাশে স্পষ্টতা এবং জটিল সংকট পরিচালনার ক্ষমতা ছিল  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য। 

এই কৌশলগত অবস্থানের কারণেই গত বছরের অক্টোবরে এক অভূতপূর্ব আক্রমণে তাঁকে হত্যা করা হয় এবং তা বিশ্ব জনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আর নাসরুল্লাহর শাহাদাত তাঁর পথের শেষ ছিল না। তাঁর শাহাদাতের খবর ঘোষণার পরপরই লেবানন ও ইসলামী বিশ্বে ক্ষোভ ও শোকের ঢেউ বয়ে যায়। লেবাননের জনগণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং তাঁর ছবি আবারও বৈরুতের রাস্তায় রাস্তায় এবং দেশের দক্ষিণের শহরগুলোতে শোভা পায়।

ইতিমধ্যে, গণমাধ্যম শহীদ নাসরুল্লাহর জীবন ও ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক পুনর্ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। অনেক বিশ্লেষক ইহুদিবাদী শত্রুর মোকাবেলায় তার অতুলনীয় সাহসিকতার গুণটি জোর দিয়ে তুলে ধরছেন। বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ থেকে, শহীদ নাসরুল্লাহ কেবল একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, একইসঙ্গে জাতিগুলোর আগ্রাসন ও অপমানের বিরুদ্ধে আশা ও প্রতিরোধের প্রতীকও ছিলেন।

তার হত্যার প্রতিক্রিয়া কেবল লেবাননেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ফিলিস্তিন, ইরাক, ইয়েমেন এবং অন্যান্য দেশের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো শোকবার্তা জারি করেছিল এবং তাদের নেতারা জোর দিয়েছিলেন যে নাসরুল্লাহর রক্ত ​​সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিগুণ প্রেরণা যোগাবে।

ইরানে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বার্তা জারি করেছেন, তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডকে শত্রুর হতাশার লক্ষণ বলে অভিহিত করেছেন। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে এই পদক্ষেপ শক্তির লক্ষণ ছিল না, বরং তা ছিল প্রতিরোধ অক্ষের উত্থান এবং প্রতিরোধের ভারসাম্যের পরিবর্তন সম্পর্কে ইসরায়েলের উদ্বেগের প্রকাশ।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, নাসরুল্লাহর শাহাদাত প্রতিরোধের আলোচনাকে পুনর্ব্যাখ্যা করার একটি সুযোগ। তরুণ প্রজন্ম, যাদের সম্ভবত অতীতের যুদ্ধের সরাসরি অভিজ্ঞতা ছিল না, তারা তাঁর আদর্শের সাথে পরিচিত হচ্ছে এবং লেবানন ও আশপাশের অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও মিডিয়া প্রতিরোধের সাহিত্যকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নাসরুল্লাহর জীবন ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে বই ও বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, বিশ্লেষণাত্মক সভার আয়োজন এবং অসংখ্য তথ্যচিত্র সম্প্রচার তাঁকে সমাজের সাথে আরও গভীরভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টার অংশ। লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্তরে, নাসরুল্লাহর শাহাদাত নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দল এবং আন্দোলন দেশের নিরাপত্তায় হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করছে। এমনকি হিজবুল্লাহর কিছু ঐতিহ্যবাহী সমালোচকও ঘোষণা করেছেন যে এই আন্দোলনের নেতার ওপর আক্রমণ সমগ্র লেবাননের বিরুদ্ধেই একটি পদক্ষেপ।

এই ঘটনাটি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এবং দক্ষিণ লেবানন পুনর্গঠনের আলোচনাকে সরকারের এজেন্ডার শীর্ষে ফিরিয়ে এনেছে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এই হত্যাকাণ্ডের প্রতি বিশ্বব্যাপী জনমতের প্রতিক্রিয়া। অনেক স্বাধীন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমও এই কাজটিকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে প্রতিরোধ নেতাদের শারীরিকভাবে নির্মূল করে অসন্তোষ ও দখলদারিত্ব বিরোধী সংগ্রামের মূল উৎপাটন করা যাবে না, বরং তা এমনকি আঞ্চলিক পরিবেশকে আরও কঠোরতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর অন্যতম, কিন্তু এ হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধের শিখা নিভিয়ে দেয়ার পরিবর্তে একে নতুন জীবন দিয়েছে।

এখন, এই সন্ত্রাসী ঘটনার প্রথম বার্ষিকীতে, বৈরুত থেকে বাগদাদ ও তেহরান পর্যন্ত একটিই কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে: "প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে।" এই বার্তাটি কেবল নাসরুল্লাহর ক্যারিজম্যাটিক ব্যক্তিত্বের কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় না, একইসঙ্গে এটিও দেখায় যে তাঁর পথ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে চলে যাবে আদর্শ হিসেবে এবং স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামে তা অনুপ্রেরণা হিসেবে টিকে থাকবে। #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।