গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তৃতা বর্জন করলেন কুটনীতিকরা
-
নেতানিয়াহুর বক্তৃতার সময় জাতিসংঘের হল খালি হয়ে পড়ে
ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে মঞ্চে উঠতেই শতাধিক কূটনীতিক সভাকক্ষ ত্যাগ করেছেন। গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে হামলার প্রতিবাদে তারা এই ওয়াকআউট করেন।
সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, নেতানিয়াহু মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল একযোগে জাতিসংঘের হল ত্যাগ করেন। তার বক্তব্য চলাকালীন সময়ে হলজুড়ে শোরগোল শোনা যায়। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধি দল করতালির মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে সমর্থন জানালেও ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ পরে উপস্থিত ছিলেন।
আগের মতো এবারও নেতানিয়াহু ভিজ্যুয়াল প্রপ ব্যবহার করেন। তিনি "দ্য কার্স" শিরোনামের একটি আঞ্চলিক মানচিত্র প্রদর্শন করেন এবং তাতে মার্কার দিয়ে দাগ কাটেন। পরবর্তীতে তিনি স্যুটে একটি QR কোড সংযুক্ত করেন এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্ন সম্বলিত একটি বোর্ড তুলে ধরেন যা তিনি শ্রোতাদের সামনে পাঠ করেন।
জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্য, গাজা সংঘাত, ইরানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ঠিক এই সময়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে গাজায় সংঘাত বন্ধ এবং হামাসের হাতে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে চলছিল বিক্ষোভ। এর আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইসরায়েলি ও ইহুদিরা। এদিন ফিলিস্তিনের পক্ষেও নিউইয়র্কে বিক্ষোভ হয়।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ অব্যাহত রাখায় নেতানিয়াহু বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে। এ মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করেছে যাতে ইসরায়েলকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় — যা নেতানিয়াহু সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘে পাঠানো একাধিক চিঠিতে বিশ্বনেতাদের নেতানিয়াহুর ভাষণ বর্জনের আহ্বান জানায়। তারা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধী’ অভিযোগ তোলে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তিনি দায়ী।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের তথাকথিত ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, আহত বা নিখোঁজ হয়েছেন।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যেও দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গাজায় নিহতদের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন সাধারণ নাগরিক। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার প্রায় সব আবাসিক এলাকা, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল। যুদ্ধের কারণে প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী অন্তত একবার হলেও গৃহহীন হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৬