জাতিসংঘ-নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ইরানের পরমাণু ইস্যু বিতর্ক-মুক্ত: তেহরান
https://parstoday.ir/bn/news/event-i153162-জাতিসংঘ_নিষেধাজ্ঞার_মেয়াদ_শেষ_হওয়ায়_ইরানের_পরমাণু_ইস্যু_বিতর্ক_মুক্ত_তেহরান
পার্স-টুডে: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তার পারমাণু বিষয়ক ইস্যু ও এজেন্ডা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে, তাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে এখন অন্য যেকোনো পরমাণু অস্ত্র-মুক্ত রাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচির মতোই বিবেচনা করতে হবে।
(last modified 2025-10-19T08:55:08+00:00 )
অক্টোবর ১৮, ২০২৫ ১৫:৪৬ Asia/Dhaka
  • ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি
    ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি

পার্স-টুডে: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তার পারমাণু বিষয়ক ইস্যু ও এজেন্ডা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে, তাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে এখন অন্য যেকোনো পরমাণু অস্ত্র-মুক্ত রাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচির মতোই বিবেচনা করতে হবে।

জাতিসংঘের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের কার্যকারিতার দশ বছরের মেয়াদ আজ ১৮  অক্টোবর শেষ হয়ে যাওয়ায় ইরানের ওপর আবারও জাতিসংঘের বাতিল-হয়ে-যাওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইউরোপীয় ত্রয়ী তথা ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির প্রচেষ্টার কোনো আইনি ভিত্তি নেই ও সেগুলো বাতিল প্রচেস্টা বলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ঘোষণা করেছেন। 

তিনি আজ জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ভি.এ নেবানজিয়ার কাছে লেখা এক চিঠিতে এটা উল্লেখ করেছেন যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব তার নিজস্ব শর্ত বা ধারাগুলোর আলোকে এখন সন্দেহাতীতভাবে মেয়াদ-উত্তীর্ণ এবং রহিত বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরকচির বিবৃতির পুনরাবৃত্তি করে বলেছে, জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (NPT) আওতায় কেবল নিজ অধিকার ও ওই চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলবে এবং এসবের বাইরে কোনও অতিরিক্ত সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে না।

এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডায় ইরানের পারমাণবিক ইস্যু জিইয়ে রাখার লক্ষ্য বা যুক্তিটি ছিল - এর কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি যাচাই করে দেখা, আর এই লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) কোনও প্রতিবেদনেই ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বা সামরিক লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছে বলে কোনও ইঙ্গিত দেয়া হয়নি, তবুও সংস্থাটি মাঝেমধ্যে প্রমাণহীন কোনো সন্দেহ বা দ্বিধার কথা তুলে ধরলেও তা  মার্কিন সরকার ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখেই তুলে ধরেছে।

বিবৃতিতে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি তথা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) ভেঙে যাওয়ার দায় পুরোপুরি পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর বর্তায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এবং ইউরোপীয় ত্রয়ীর (যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি) তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। আর পশ্চিমাদের এইসব হঠকারিতার নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এইসব পদক্ষেপ ও তৎপরতা ছিল "বহুপাক্ষিক কূটনীতির ওপর একটি বড় আঘাত"।

এ ছাড়াও ইরান জেসিপিওএ-এর "স্ন্যাপব্যাক" প্রক্রিয়া তথা নিষেধাজ্ঞাগুলো আবারও সক্রিয় করা সংক্রান্ত ইউরোপীয় ত্রয়ী কর্তৃক নেয়া পদক্ষেপগুলোর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে যে তারা নিজস্ব বাধ্যবাধকতা বা নিজ নিজ দায়িত্বগুলো পালনে ব্যর্থ হওয়ার পর ও সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কারণে এই প্রক্রিয়া চালু করার  "সমস্ত আইনি এবং নৈতিক অধিকার" হারিয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে মেয়াদোত্তীর্ণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের তথ্যকে অপতথ্য বা ভুল-তথ্য প্রচার হিসেবে উল্লেখ করে এইসব তথ্যকে অবিলম্বে সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছে। এটি কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞা কমিটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার যেকোনো প্রচেষ্টাকে অবৈধ বলে বর্ণনা করেছে এবং সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রকে বিলুপ্ত প্রস্তাবগুলো পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দাবি প্রত্যাখ্যান করারও আহ্বান জানিয়েছে।

ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে গত জুন মাসে কোনো উস্কানি ছাড়াই ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধেরও তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি ওই আগ্রাসনে শিশুসহ এক হাজার জনেরও বেশি ইরানি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে এই আগ্রাসনকে "কূটনীতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান JCPOA-এর বিরোধ-কাঠামোর বিষয়ে ইউরোপীয় অপব্যবহারের বিরোধিতা করার জন্য চীন, রাশিয়া, আলজেরিয়া ও পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ও জাতিসংঘের চার্টার গোষ্ঠীর বন্ধুদের সমর্থন পওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।

ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনীতির প্রতি ইরানের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বিবৃতির শেষাংশে বলেছে কূটনীতির পখ খোলা রাখার পাশাপাশি ইরান পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সহ ইরানি জাতির সব বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষার কাজ করে যাবে। #

পার্স টুডে/এমএএইচ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।