জাতিসংঘের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান ইরানের
-
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পার্সটুডে: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ২০ জুলাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবটি পাস করেছিল, সেটির মেয়াদ ছিল ১০ বছর। এই মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৮ অক্টোবর শেষ হবে। এর ফলে প্রস্তাবটির সব শর্ত ও সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের ওপর থাকা নিয়ন্ত্রণ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক ইস্যুটি এতদিন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আলোচ্যসূচিতে 'অস্ত্র বিস্তার রোধ' শিরোনাম হিসেবে ছিল, কিন্তু এখন সেটি ওই তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। এই তিন দেশ পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের চেষ্টা করছে বলে ইরান অভিযোগ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সচিবালয় এসব বেআইনি পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দিতে পারে না।
ইরান বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদের পুরোনো নিষেধাজ্ঞা কমিটি ও বিশেষজ্ঞ দল পুনর্গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা আইনবহির্ভূত। জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকেও এসব দাবির উল্লেখ দ্রুত মুছে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন ইউরোপের তিন দেশের এই বেআইনি পদক্ষেপের কোনো গুরুত্ব না দেয়। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদ নিজে থেকে প্রস্তাবের মেয়াদ বাড়ানো বা পুরোনো নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই এখন ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবকে শেষ বলে গণ্য করা উচিত এবং পুরোনো প্রস্তাবগুলো (১৬৯৬, ১৭৩৭, ১৭৪৭, ১৮০৩, ১৮৩৫, ১৯২৯) পুনরায় চালু করার দাবিকে অগ্রাহ্য করতে হবে।
১২১ দেশের সমর্থন
ইরানের এই ঘোষণা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সমর্থন পেয়েছে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ১২১টিরও বেশি সদস্য দেশ জোর দিয়ে বলেছে, ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব ২০২৫ সালের ১৮ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে।
ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী (আইনি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক) কাজেম গারিবাবাদি বলেন, “মূল বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের দাবি করছে, সেগুলোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বাধ্য নয়।”
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে এবং ১৮ অক্টোবর ইরান, রাশিয়া ও চীন একত্রে জাতিসংঘ মহাসচিব ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে একটি যৌথ চিঠি দেবে, যেখানে তারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করবে যে, ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং কোনো দেশই পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলো বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতায় নেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য ও গোপন সমর্থনে 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়াকে কার্যকর করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে কয়েকটি দেশও ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তে যোগ দিয়েছে।
১৭ অক্টোবর প্রকাশিত সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “২০২৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত সকল নিষেধাজ্ঞা পুনরায় চালুর পর, ইউরোপীয় কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পরমাণু চুক্তির অধীনে স্থগিত বা বাতিল করা ইইউ'র নিজস্ব নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার কার্যকর করা হবে।”
নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে—ইরানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল ও পরিশোধিত পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা; ইরানের জ্বালানি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, সোনা, কিছু ধাতু, হীরা, নির্দিষ্ট সামুদ্রিক যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার বিক্রি ও সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা।
পশ্চিমা দেশগুলোর এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো- ইরানের ওপর নজিরবিহীন চাপ প্রয়োগ করা—যাতে তেহরান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অবৈধ দাবিগুলো (পরমাণু, ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক নীতি সংক্রান্ত) মেনে নিতে বাধ্য হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ত্রয়ী ইউরোপীয় দেশ (জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন) এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা অভিযানে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে, রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের সামরিক সহযোগিতার কারণে তেহরানকে 'শাস্তি' দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেও এই উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে।
কিন্তু ইরান ও তার মিত্র দেশগুলো স্পষ্ট করেছে যে এই তথাকথিত 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া পুরোপুরি 'অবৈধ', কারণ এই দেশগুলো নিজেরাই জেসিপিওএ (পরমাণু চুক্তি) লঙ্ঘন করেছে এবং চুক্তির আওতায় থাকা কোনো আইনি কাঠামো ব্যবহারের অধিকার তাদের আর নেই।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৮