ইরানের ওপর থেকে সব পরমাণু নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে: জাতিসংঘের প্রতি রাশিয়া
-
ক্রেমলিন, রাশিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী ইরানের ওপর অবশিষ্ট সব নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে শেষ হয়ে যাবে। ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু সমঝোতা (জেসিপিওএ) অনুমোদনের পর যে ১০ বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটির মেয়াদ এই দিনেই পূর্ণ হবে।
আজ (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, " নিষেধাজ্ঞা ও সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াসহ ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের সব বিধান তার কার্যকারিতা হারাবে। নিরাপত্তা পরিষদকে এখন ইরানের পারমাণবিক ইস্যুটি বন্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং তা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ কার্যসূচি থেকে সরিয়ে নিতে হবে।"
মস্কোর মতে, এই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি মূল জেসিপিওএ চুক্তিতেই অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তা এখনো আন্তর্জাতিক আইনে বাধ্যতামূলক।
বিবৃতিতে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব ২২৩১ বাস্তবায়নসংক্রান্ত ডিক্রি “নির্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে”, এরপর ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অব্যাহত থাকবে।
মন্ত্রণালয় আরও জোর দিয়ে বলেছে, রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে ২০ বছরের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি গত ২ অক্টোবর, ২০২৫-এ কার্যকর হয় যা একাধিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য 'একটি শক্ত ভিত্তি' প্রদান করে।
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার ইউরোপের প্রচেষ্টা ব্যর্থ
মস্কো যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিকে ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার তাদের "আক্রমণাত্মক" প্রচেষ্টার জন্য নিন্দা করেছে এবং এটিকে প্রস্তাব ২২৩১-এর এবং তার নির্ধারিত প্রক্রিয়ার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
রুশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের জেদি কিন্তু ভিত্তিহীন দাবি সত্ত্বেও, ইউরোপীয় ত্রয়ীর গুরুতর প্রক্রিয়াগত লঙ্ঘনের কারণে আগের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল বৈধ নয়।”
রাশিয়া অভিযোগ করে, ইউরোপীয় দেশগুলো 'সংঘাতমূলক পথে এগোতে গিয়ে' সব নিয়ম ও বাধা উপেক্ষা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক আইনে, যে পক্ষ ধারাবাহিকভাবে কোনো চুক্তি লঙ্ঘন করে, সে চুক্তির সুবিধা বা প্রক্রিয়া ভোগের অধিকারী নয়।”
রাশিয়া আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৮ সালে একতরফাভাবে জেসিপিওএ থেকে সরে যায় এবং 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতিসংঘ সচিবালয়ও' ইউরোপীয় অবস্থানকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের “আইনগত ও প্রক্রিয়াগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপ” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের “আইন মেনে চলা সদস্যদের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে পারে না।”
রাশিয়া জাতিসংঘ মহাসচিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত “ভুল তথ্য” প্রত্যাহার করতে, যেখানে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের দাবি করা হয়েছে।
বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়, “যদি জাতিসংঘ নেতৃত্ব এই ভুল সংশোধন না করে, তবে তা সনদের ১০০ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।”
রাশিয়া আরও জানায়, নিরাপত্তা পরিষদ কখনোই সচিবালয়কে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল বিষয়ে স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়নি। “এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত” বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাব ২২৩১ মেয়াদ শেষ*
রাশিয়া জানায়, প্রস্তাব ২২৩১ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিটিও 'ইতিহাসে পরিণত হবে'। তবে মস্কো একে একটি 'বড় কূটনৈতিক সাফল্য' হিসেবে অভিহিত করেছে, যা ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কিত সব প্রশ্নের সমাধানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে সহায়তা করেছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, “জেসিপিওএর সফল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অনুপ্রসারণ রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর আওতায় শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।”
রাশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তদারকি কেবল এনপিটি ও ইরান-আইএইএ সুরক্ষা চুক্তির অধীনেই চলবে।
বিতর্কের উৎপত্তি
২০১৫ সালের চুক্তি অনুসারে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এবং ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। এর পর ইরানও ধীরে ধীরে তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে।
চলতি বছরের আগস্টে ইউরোপীয় ত্রয়ী 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া চালু করে জাতিসংঘের পুরনো নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের চেষ্টা করে— যেটিকে ইরান 'অবৈধ' বলে প্রত্যাখ্যান করে।
রাশিয়া ও চীনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদ ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় এবং পশ্চিমা দেশগুলো একতরফাভাবে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল ঘোষণা করে।
রাশিয়া জানায়, এই 'স্ন্যাপব্যাক' ঘোষণা আইনি ভিত্তিহীন এবং তারা ইরান ইস্যুর 'রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমাধানে' অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।
বিবৃতির শেষাংশে রাশিয়া সতর্ক করে, “আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা নতুন ও নিয়ন্ত্রণহীন উত্তেজনা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”#
পার্সটুডে/এমএআর/১৭