গাজায় ইসরায়েলের পরাজয়: যুদ্ধের মাঠে ও রাজনীতিতে প্রতিরোধের বিজয়
-
গাজায় ইসরায়েলের পরাজয়: যুদ্ধের মাঠে ও রাজনীতিতে প্রতিরোধের বিজয়
পার্সটুডে - যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো তাদের এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ের উপর জোর দিয়েছে।
পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মারওয়ান আবদেল আল জোর দিয়ে বলেছেন যে প্রতিরোধ অস্ত্রের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে কখনও উত্থাপিত হয়নি এবং গাজার প্রশাসন এখনও একটি জাতীয় সমস্যা। আবদেল আল ইহুদিবাদী শাসনের প্রকৃতিও তুলে ধরে বলেছেন, আমরা এমন এক শত্রুর সাথে মোকাবিলা করছি যারা বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং ক্রমাগত চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা মিশরের শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এটি ইহুদিবাদী শাসনের পরাজয়ের লক্ষণ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ ইহুদিবাদীদের প্রাথমিক সামরিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা হয়নি এবং তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সাফল্য সামরিক শক্তি, জনসমর্থন, শত্রুর লক্ষ্যকে পরাজিত করা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমীকরণের পরিবর্তনের সংমিশ্রণের ফলাফল। এই সাফল্য কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিক ও মিডিয়া অঙ্গনেও দেখা যায়। বোমাবর্ষণ ও অবরোধ সত্ত্বেও গাজার জনগণ প্রতিরোধের সামাজিক ভিত্তি বজায় রেখেছিল এবং এমনকি শক্তিশালীও করেছিল। লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরাকসহ প্রতিরোধের আঞ্চলিক অক্ষও ফিলিস্তিনের প্রতি নৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন বৃদ্ধি করেছিল।
জেরুজালেমের দখলদার শাসক গোষ্ঠী গাজা যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং এই পদক্ষেপের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই, ইহুদিবাদীরা ঘোষণা করেছিল যে তারা হামাসকে ধ্বংস করতে, গাজা থেকে অধিকৃত অঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং অবশ্যই বলপ্রয়োগে তাদের বন্দীদের মুক্ত করতে চাইছে। তবে, তারা তাদের সমস্ত লক্ষ্যে ব্যর্থ হয়েছে।
ইহুদিবাদী কর্মকর্তারা এমনকি ইহুদিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও স্বীকার করেছেন যে হামাস এখনও জীবিত এবং শক্তিশালী। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী কেবল গাজা যুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়নি, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে হামাসের কাঙ্ক্ষিত শর্ত মেনে নিতেও বাধ্য হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের সক্রিয় উদ্যোগ এবং যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকান এবং ইহুদিবাদীদের কাছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রয়োজন ছিল এই সত্য জনগণের বিজয় এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আঞ্চলিক সমীকরণে তার অবস্থান উন্নত করতে এবং একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সক্ষম হয়েছিল।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ তার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অভিযানের মাধ্যমে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর অজেয়তার মিথকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। আয়রন ডোম ব্যবস্থা সত্ত্বেও, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ অধিকৃত অঞ্চলের গভীরে শত শত রকেট নিক্ষেপ করতে এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছিল।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ অবশেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বন্দীদের মুক্তি, আক্রমণ বন্ধ, ক্রসিং খোলা এবং গাজার আবাসিক এলাকা থেকে দখলদার সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারের মতো শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিরোধকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সমর্থন করেছে। প্রতিরোধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও প্রতিরোধের আখ্যান প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিশ্বের জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্ব মিডিয়া ইহুদিবাদী সরকারের সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের খবর প্রচার করেছে এবং এর বিরুদ্ধে জনমতকে সংগঠিত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ, চাপ এবং অব্যাহত আক্রমণ সত্ত্বেও গাজার জনগণ প্রতিরোধকে সমর্থন করেছে এবং তাদের প্রতিরোধের চেতনা বজায় রেখেছে।
গাজা যুদ্ধ দেখিয়েছিল যে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কেবল তার সামরিক ও কৌশলগত ক্ষমতাই উন্নত করেনি, বরং রাজনৈতিক, গণমাধ্যম এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই যুদ্ধ ফিলিস্তিনি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার ঘটনা যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমীকরণকে প্রভাবিত করবে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।