ইয়েমেনের জনগণের দুরবস্থার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে 'আইসিআরসি'
গত প্রায় তিন বছর ধরে ইয়েমেনে বিরামহীনভাবে সৌদি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। এ আগ্রাসনে ইয়েমেনে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, ইয়েমেনের ওপর কঠোর অবরোধের কারণে কলেরা রোগ ও অপুষ্টিতে প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে শিশু মারা যাচ্ছে। তেহরান সফররত আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)'র প্রধান পিটার মাইয়ুর আজ ইয়েমেনের জনগণের দুরবস্থার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ গতকাল পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। ওই সাক্ষাতে আইসিআরসি'র প্রধান অবিলম্বে ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জনগণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ ও খাদ্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ওই সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ইরান সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও ইয়েমেনের জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘবে সহায়তা এবং ওই দুই দেশে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জন্য প্রস্তুত আছে।
সৌদি আরব আমেরিকার সমর্থন নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পাশাপাশি দেশটির ওপর স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পথে কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। ইয়েমেনে এ দুরবস্থা সৃষ্টি করে সৌদি আরব আসলে কাদের খেদমত করছে এবং এ যুদ্ধ থেকে কারা সবথেকে বেশি লাভবান হচ্ছে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের লন্ডন সফরের প্রাক্কালে বলেছে, ব্রিটিশ সরকার সৌদি আরবের অপরাধযজ্ঞ এবং মানবাধিকার ও জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনে রিয়াদের ভূমিকার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। কারণ রিয়াদের সঙ্গে লজ্জাজনক বাণিজ্য সম্পর্ককে লন্ডন সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গার্ডিয়ান আরো লিখেছে, যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে চলেছেন এবং ইয়েমেনে আগ্রাসন শুরুর প্রথমেই বিমান হামলা চালিয়ে তিনি দেশটির কৃষি অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরপর তিনি কারখানা ও খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন। এসব হামলায় এ পর্যন্ত বহু নাগরিক নিহত হয়েছে যাদের একটা বিরাট অংশ শিশু।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান অন্যায় যুদ্ধে কেবল আমেরিকা, ব্রিটেন ও দখলদার ইসরাইল লাভবান হচ্ছে। কারণ এ দেশগুলো ইয়েমেন যুদ্ধের অজুহাতে সৌদি আরবের কাছে কোটি কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের লন্ডন সফরকালে দু'দেশের মধ্যে দশ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তি হয়েছে। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরকালেও সৌদি আরবের সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি হয়েছে।
যাইহোক, পাশ্চাত্যের সমর্থন নিয়ে সৌদি অবরোধের কারণে ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যদি এখনই সৌদি হামলা বন্ধ ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো না যায় তাহলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২