আমেরিকার প্রতি বিশ্বাস আমাদের পতনের কারণ ছিল: আশরাফ গণি
(last modified Sun, 28 Aug 2022 11:48:33 GMT )
আগস্ট ২৮, ২০২২ ১৭:৪৮ Asia/Dhaka

আফগানিস্তানের পলাতক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, আমেরিকাকে বিশ্বাস করার কারণেই তার সরকারের পতন ঘটেছে।

তিনি মার্কিন পিবিএস টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, ওয়াশিংটন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছিল এবং সে অনুযায়ী মার্কিন সেনারা তালেবানের রোষানল থেকে রক্ষা পায় এবং নিরাপদে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু মার্কিন সেনারা চলে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আফগান সেনারা। কেননা তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতা দখলের পর আফগান সেনাবাহিনীই প্রথম টার্গেটে পড়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পলাতক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেও এবং জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিকে উপেক্ষা করলেও মার্কিনীরা ঠিকই তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে মার্কিনীদের ওপর কখনোই আস্থা রাখা যায় না। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক মহল বহুবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতার পরিণতির ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট গণিকে সতর্ক করে দিয়েছিল।

কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত তালেবান ও মার্কিন প্রতিনিধিদের মধ্যকার বৈঠকে আফগান সরকারকে আমন্ত্রণ না জানানো থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন আফগানিস্তানের জাতীয় সার্বভৌমত্বকে সম্মান তো করেই না বরং তারা আফগান জনগণের সঙ্গে অভিভাবকের মতো আচরণ করে। কিন্তু তারপরও আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারগুলো কখনো জনগণের সাথে মার্কিন সেনাদের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করেনি।

ইরানের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আহমাদ সাঈদ এ ব্যাপারে বলেছেন, মার্কিন সরকার ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কখনো আফগান জনগণের স্বার্থের কথা ভাবেনি এবং তারা কেবল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে। এ অঞ্চলসহ বিশ্বের দেশগুলোর সাথে মার্কিন সহযোগিতা ও আচরণের ধরন থেকে বোঝা যায় আমেরিকা কেবল নিজের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয় এবং প্রতিপক্ষের স্বার্থের কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েন থাকলেও ওই দেশগুলোর জনগণের সাথে মার্কিন সেনাদের আচরণ সুখকর নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জার্মানিতে আমেরিকার সেনা মোতায়েন রাখা বাবদ অর্থ দেয়ার জন্য ওই দেশটির প্রতি আহবান জানিয়েছিল যা কিনা জার্মানির জন্য অবমাননাকর ছিল। অথচ জাপানসহ আরো বহু দেশে মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ওইসব দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এতো কিছু জানার পরও আফগানিস্তানের সাবেক গণি সরকার মার্কিন ফাঁদে পা দিয়েছে। কারণ আমেরিকার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। 

যাইহোক, আমেরিকা আফগানিস্তানের যে বিপুল অর্থ আটকে দিয়েছে তা খুবই অমানবিক এবং আফগানিস্তানের মজলুম জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ। আমেরিকার এ আচরণ আফগান জনগণের কাছে এ বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে যে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এবং আমেরিকার কাছ থেকে যে কোনো সাহায্য নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ অবস্থায় আমেরিকার বিরুদ্ধে আশরাফ গণির বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। #     

 পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৮          

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ