নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আমেরিকা
যে কারণে তালেবানের ব্যাপারে আমেরিকার হঠাৎ ভিন্ন সুর
আফগানিস্তান বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওয়েস্ট তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা তালেবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপে বসতে চাই এবং ওই দেশটির জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য তালেবানের সঙ্গে আলোচনা ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি।
আফগানিস্তান বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় না বসাটা ভালো চিন্তা নয় এবং বিচ্ছিন্নতা বজায় রেখে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ওই দেশটির জনগণের জন্য বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। তবে একই সাথে তিনি এও বলেন, 'তালেবান সরকারের প্রতিনিধিদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। কারণ এর সাথে বিশ্ব নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত'।
সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো তালেবানের ১৩ জন কর্মকর্তার সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে একমত হতে পারেনি এবং নিষেধাজ্ঞা বলবত রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তান বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি তালেবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার যে কথা বলছেন তা আসলে তালেবান ইস্যুতে তাদের নতুন অবস্থান এবং তাদের ব্যাপারে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় তারও একটি রূপরেখা হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা তুলে ধরেছেন।
আফগানিস্তান বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওয়েস্ট তালেবানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে নতুন যে নীতি অবস্থানের কথা জানিয়েছেন সে ক্ষেত্রে তারা আফগান জনগণের সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন। তিনি এও দাবি করেছেন যতদিন পর্যন্ত ওয়াশিংটন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন না করছে ততদিন পর্যন্ত আফগান জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।
বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন সরকার আফগানিস্তানের কোটি কোটি ডলার আটকে দেয়ার কারণেই সেদেশের অর্থনীতি যেমন ধসে পড়েছে তেমনি জনগণও তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় আফগান জনগণকে সহায়তার কথা বলে আমেরিকা কেন তালেবানের সঙ্গে সংলাপে বসতে চাইছে কিংবা সম্পর্ক করতে চাইতে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীন ও রাশিয়া আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে এবং সব পক্ষই তালেবানের ব্যাপারে নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে। সবাই আফগানিস্তান পুনর্গঠনে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউজ এ কারণে চিন্তিত যে তালেবানের থেকে তারা যদি দূরত্ব বজায় রাখে তাহলে আফগানিস্তানকে তারা হাতছাড়া করবে এবং মস্কো ও বেইজিং আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে। ফলে আঞ্চলিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে। এ কারণে মার্কিন কর্মকর্তারা চেয়েছিল তালেবানকে ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিয়ে প্রতিবেশী সব দেশের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ মুখে ঠেলে দেবে এবং তালেবান এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা ও প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
যাইহোক, আফগানিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হচ্ছে ওয়াশিংটন যেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পিছিয়ে না থাকে। এ কারণে তারা আফগান জনগণের সহায়তার কথা বলছে। কিন্তু এখন তারা যতই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলুক না কেন নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখায় আফগান জনগণ যুক্তরাষ্ট্রকে খুব ভালোভাবে চিনতে পেরেছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।