'ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ইউরোপজুড়ে দারিদ্র ও ক্ষুধা নেমে আসবে'
(last modified Mon, 24 Oct 2022 12:51:12 GMT )
অক্টোবর ২৪, ২০২২ ১৮:৫১ Asia/Dhaka

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন ইতালিতে দেয়া এক বক্তৃতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেছেন, চলমান সংঘাতে শান্তি অর্জনের সুযোগ রয়েছে এবং সেই সময় খুব শিগগিরি আমাদের সামনে উপস্থিত হবে। একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপনের সময় ও শর্ত নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করছে। যারা রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করাকে ইউক্রেনের জনগণের সংগ্রামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যা দিচ্ছেন তাদেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন ম্যাকরন।

ম্যকরন বলেন, "চলমান ইউক্রেনের যুদ্ধ আর চলতে পারে না। এই যুদ্ধ ইউরোপে আমাদের জীবনকে বদলে দেবে এবং আমাদেরকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার দিকে নিয়ে যাবে।" একই সময়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শুইগু গতকাল রোববার মার্কিন, ফরাসি এবং ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাথে এক টেলিফোনালাপে বলেছেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধ "অনিয়ন্ত্রিত সংঘাত বৃদ্ধির"  দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ফরাসি প্রেসিডেন্টের অনুরোধ ইউরোপে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আলোকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এই যুদ্ধের শুরুতে মার্কিন দাবি অনুসারে ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করেছিল যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং আমেরিকার পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে বিপুল অস্ত্র এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রুশ সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি তারা আরো বিশ্বাস করেছিল যে একটি প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে ইউক্রেন রাশিয়াকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে। 

যাইহোক ইউক্রেন যুদ্ধের অষ্টম মাস গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া কেবল ইউক্রেনের ৪টি প্রদেশকে তার ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেনি এমনকি ক্রিমিয়ার সেতুতে ইউক্রেনের নাশকতামূলক হামলার কারণে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক আক্রমণ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের বিভিন্ন অবকাঠামোসহ দেশটির বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে এবং এর ফলে বিশাল এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। মোটকথা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরিধি বাড়ানোর সম্ভাবনা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউরোপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বর্তমান যুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয় সম্পর্কে দিনদিন হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং আগের মাত্রায় কিয়েভকে সমর্থন করতে তারা আর ইচ্ছুক নয়। এছাড়াও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইউরোপের যেসব দেশ ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠিয়েছে তাদের অস্ত্রের মজুদও ফুরিয়ে আসছে। তাদের এ ঘাটতি পূরণ করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে এবং এটি তাদের আত্মরক্ষার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। মজার বিষয় হল আমেরিকা যে দেশটি দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পক্ষে রিপাবলিকান দলের কিছু কর্মকর্তা যেমন প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান সংখ্যালঘুদের নেতা কেভিন ম্যাককার্থি বর্তমান ফর্মে কিয়েভে ওয়াশিংটনের সহায়তা অব্যাহত না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

কিন্তু ইউরোপীয়রা যে বিষয়টি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারিনি তা হল ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা এবং বৈরী পদক্ষেপের প্রতি মস্কোর কঠোর এবং অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অষ্টম ধাপের নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করছে তাতে  মস্কো মোটেও দমে যায় নি বরং ইউরোপের এসব কর্মকাণ্ডের মোকাবেলায় মস্কো অত্যন্ত কার্যকর ও কঠোর পাল্টা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। #

পার্সটুডে/ এমবিএ/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ