জুন ০২, ২০২৩ ১৮:৩২ Asia/Dhaka

ব্রিটেনে মুসলমানদের বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ এবং মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়গুলো তদারকি করার জন্য একজন অমুসলিম পরিচালক নিয়োগ দেয়ার প্রতিবাদে লন্ডনের ইসলামিক সেন্টারের সামনে একদল মুসলমান প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

"আমাদের মসজিদে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন" স্লোগান নিয়ে ইসলামিক সেন্টার ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা চ্যারিটি মনিটরিং কমিশনের সিদ্ধান্তের নিন্দা জাানিয়েছেন এবং মুসলমানদের বিষয়ে অব্যাহত হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন যে সংস্থাটির প্রধান সংস্কৃতিমন্ত্রী দ্বারা নিযুক্ত হন এবং যিনি দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য দায়ী তিনি তিন সপ্তাহ আগে ব্রিটেনের ইসলামিক সেন্টারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা চালিয়ে এমা মুডি নামে একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে এর প্রধান হিসেবে  নিয়োগ দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ তার মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থে বিষয়ে সঠিক কোনো ধারণা নেই। অথচ তাকে ইসলামিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এদেশের রক্ষণশীল সরকারের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্রিটিশ ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং পশ্চিমা বিশেষ করে আমেরিকার কাঙ্ক্ষিত ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা।

একই সময়ে ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশনের পদক্ষেপ একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ যেটি ওয়াশিংটনের স্বার্থের সঙ্গে সর্ম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০২০ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির নির্মম শাহাদাত পর ইসলামিক সেন্টার একটি গায়েবানা জানাজার আয়োজন করলে ব্রিটিশ দাতব্য কমিশন ইসলামিক সেন্টারের এই কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রমের তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দেয় এবং ব্যবস্থাপনাকে নানা অভিযোগে দায়ী করে।

ব্রিটিশ রক্ষণশীল সরকার এরইমধ্যে ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে তার একাত্বতা ঘোষণা করেছে। সেই সময় মার্কিন সামরিক বাহিনী তৎকালীন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে কুুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল সোলাইমানিকে বহনকারী গাড়িবহরে ড্রোন হামলা চালালে  তিনি এবং ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের ডেপুটি আবু মাহদি আল-মুহান্দিস বাগদাদ বিমানবন্দরে নির্মমভাবে শহীদ হন।

গত মে মাসের ১০ তারিখে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশনের প্রধান দাবি করেছেন যে জনসাধারণের স্বার্থে "চ্যারিটি"র অবস্থান রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং অস্থায়ী পরিচালক সংস্থার ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করার চেষ্টা করবেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রিটিশ ইসলামিক সেন্টারের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিক করে দেয়ার অধিকার সরকারি প্রতিষ্ঠানের নেই এবং ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশনের পদক্ষেপকেও ইসলামের বিষয়ে একটি অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ বলে মনে করে কেন্দ্র। এর ভিত্তিতে আন্দোলনকারীরা দাতব্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ইসলামিক সেন্টারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানান।

ব্রিটেনের ইসলামিক হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন: ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে এবং মুসলমানদের বিশুদ্ধ ধর্মীয় কার্যক্রমকে বন্ধ করে দিতে এদেশের মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিশুদ্ধ ইসলামকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং মুসলমানদের ওপর ব্রিটিশ ইসলাম চাপিয়ে দিতে চায় যা পশ্চিমা নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।" শাজরাহ দাতব্য কমিশনের অবৈধ আদেশ বাস্তবায়নের কাছে আত্মসমর্পণ না করাকে ব্রিটিশ ইসলামিক সেন্টারের কর্মকর্তাদের দোষ বলে মনে করেন এবং পশ্চিমে ইসলামের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি  জোর দিয়ে বলেন, যদি আমরা  আমাদের বিশ্বাস এবং ঈমানের পক্ষে শক্ত হয়ে না দাঁড়াই তারা আমাদের ইসলামকে দুর্বল করে দেবে এবং ইসলামের ব্রিটিশ সংস্করণ আমাদের ওপর তারা চাপিয়ে দেবে। #

পার্সটুডে/এনএম/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ