আমেরিকার সরকারের প্রতি দেশটির জনগণের আস্থা কমছে
গত সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকার জনগণ তাদের সরকারের প্রতি আস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গ্যালাপ পোলিং ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে যে ২০২২ সালে চালানো তাদের এক জরিপে মাত্র ৩১% মার্কিনী তাদের সরকারকে বিশ্বাস করেন।
২০২২ সালে মার্কিন সরকারের অবস্থান ২০০৬ সালের তুলনায় অনেকটাই আলাদা ছিল। ২০০৬ সালে পরিচালিত একই ধরনের জরিপে প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনীরা তাদের সরকারের প্রতি আস্থা আছে কিনা তা জানতে চাইলে হ্যাঁ উত্তর দিয়েছিলেন। সেমময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম স্থানে ছিল। গ্যালাপ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানা যায় যে প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনীদের তাদের সরকারের প্রতি আস্থা ২০০৬ সাল ছাড়া মাত্র এক বছরে ৫০ ভাগে পৌঁছে। ২০২০ সালে মার্কিন সরকারের প্রতি আস্থা ছিল ৪৬ ভাগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি কয়েকবার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। যেমন ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩১ ভাগ, ২০১৬ সালে ৩০ ভাগ এবং ২০১৩ সালে ২৯ ভাগ।
আমেরিকার সরকারের প্রতি মার্কিন জনগণের অনাস্থা বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেডারেল সরকারের অদক্ষতা এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী পদক্ষেপ গ্রহণ। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে জগণের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাস্থ্য্যসেবা কর্মসূচি যা ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত তা বাতিল করলে এই সমস্যাটি সবার সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। যদিও এই বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য ছিল বেশিরভাগ মার্কিনীদেরকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা। বিশেষ করে পরিসংখ্যান অনুসারে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি মার্কিন নাগরিকদের স্বাস্থ্য বীমা ছিল না। তবে ট্রাম্পসহ অন্যান্য রিপাবলিকানরা মূলত এই ওবামাকেয়ারে বিশ্বাস করে না এবং এখনও মার্কিন কংগ্রেসে এটি বাতিল করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও, গ্যালাপের জরিপ দেখায় যে আমেরিকান জনগণের দুই-তৃতীয়াংশ বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আর্থিক নীতির প্রতি কোনো আস্থা নে এবং তার সরকারের অর্থনৈতিক কর্মদক্ষতা নিয়ে চিন্তিত।
মার্কিন সরকারগুলোর প্রতি আমেরিকার জনগণের অবিশ্বাসের আরেকটি কারণ হলো কর্মকর্তাদের বিশেষ করে প্রেসিডেন্টদের নৈতিক ও আর্থিক দুর্নীতি। এই প্রেক্ষাপটে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময় বিভিন্ন আর্থিক এবং নৈতিক অভিযোগের মুখোমুখি হন এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধে নৈতিক দুর্নীতির অনেক মামলা রয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একজন ব্যক্তি যিনি আদালতে একজন যৌন-নির্যাতনকারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছেন - এবং যিনি একই সাথে আরেকটি ফৌজদারি মামলার আসামি। গোপনীয় সরকারি নথি রাখা ও ন্যায়বিচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে পারিবারিক স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি বুরিসমার একজন নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে। শনিবার (১০ জুন) ফক্স নিউজের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘুষ সংক্রান্ত ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের ৩০ জুন। এই কেলেঙ্কারিটি যখন ঘটে, জো বাইডেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বাইডেনের বড় ছেলে হান্টার বাইডেন ২০১৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই কোম্পানিটির বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন। এদিকে জো বাইডেন মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে তিনি আরও চার বছর হোয়াইট হাউজে দায়িত্ব পালন করতে চান। কিন্তু এনবিসি নিউজ এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকানরা এ নিয়ে সংশয়ে আছেন। এই জরিপে দেখা যাচ্ছে ৭০ শতাংশ আমেরিকান এবং ৫১ শতাংশ ডেমোক্রেট মনে করেন তার আসলে আবার নির্বাচনের দাঁড়ানো ঠিক হবে না এবং জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক মানুষ চান যে তিনি সরে দাঁড়ান। তাদের একটি বড় উদ্বেগ তার বয়স নিয়ে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।