সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৩ ২০:০৬ Asia/Dhaka

আজ পবিত্র বিশে সফর তথা হযরত ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চল্লিশা বা চেহলাম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের শোকানুষ্ঠান ও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি শোকার্ত মুসলিম। এ দিবসকে সামনে রেখে পবিত্র কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আ) পবিত্র মাজার জিয়ারতেও যোগ দিয়েছেন কয়েক কোটি মুসলমান।

কারবালার গভর্নরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর দেশী-বিদেশী জিয়ারাতকারীদের মোট সংখ্যা তিন কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বছর দুয়েক আগে করোনা মহামারীর কারণে ইরানসহ কোনো কোনো দেশ থেকে জিয়ারতকারীদের আগমনের হার বেশ কিছুটা কমে গিয়েছিল। করোনা মহামারীর আগেও বেশ কয়েক বছর ধরে কোটি কোটি শোকার্ত মুসলমান বিশে সফর উপলক্ষে কারবালা জিয়ারত করেছেন।

এ বছর ইরান থেকে অন্তত ত্রিশ লাখ মুসলমান চেহলাম উপলক্ষে ইরাক সফর করেছেন।হযরত ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চল্লিশা বা চেহলাম বার্ষিকী উপলক্ষে জিয়ারতকারীদের এক বড় অংশ যোগ দিচ্ছেন কারবালাগামী পদযাত্রায়। মূল পদযাত্রাটি হয় হযরত আলীর মাজারের শহর তথা ইরাকের পবিত্র নাযাফ শহর থেকে কারাবালা শহর পর্যন্ত যেখানে রয়েছে ইমাম হুসাইনের পবিত্র মাজার। এ ছাড়াও ইরাকের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও শত শত কিলোমিটার পায়ে হেটে ইমামের অনুরাগী মুসলমানরা কারবালায় আসেন। আর যারা কোনো কারণে ইরাক সফরে আসতে পারেননি তাদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে প্রতীকি পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। যেমন, এ ধরনের পদযাত্রা হচ্ছে ইরানের ও লেবাননের শহরগুলোতে।

 শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইনের প্রতি মুসলমানদের অন্তরে প্রোথিত ভালবাসার উত্তাপ কখনও কমবে না বলে মহানবী (সা) তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখ করেছিলেন।  তাঁর শাহাদাতের আদর্শের চৌম্বকীয় আকর্ষণ দিনকে দিন বাড়ছে। শিয়া ও সুন্নি নির্বিশেষে ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে অমুসলিম অনেক মানুষকেও আকৃষ্ট করছে এ মহান ইমামের শাহাদতের দ্যুতি ও উত্তাপ।

অলৌকিক বা মহাবিস্ময়ের বিষয় হল প্রতি বছর এই চেহলাম বা আরবাঈন (চেহলাম বা চল্লিশার আরবি প্রতিশব্দ আরবাঈন) উপলক্ষে বেশ কয়েকদিন জিয়ারতকারীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাসহ প্রায় সব ধরনের সেবা বিনামূল্যে দিয়ে যাচ্ছেন ইরাকের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জাতি ও সাধারণ জনগণ (অবশ্য ইরাক ও ইরান সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের সেবা তৎপরতা দেয়া হচ্ছে)!

এভাবে ইমাম হুসাইনের (আ) প্রতি ভালবাসা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানকে করছে ঐক্যবদ্ধ। এই মুসলমানরা যেন বলতে চান: হে প্রিয় ইমাম হুসাইন! আমরা আপনার ও আপনার সঙ্গীদের অনন্য আত্মত্যাগের আদর্শকে কখনও ভুলবনা এবং জুলুম ও কপট ধার্মিকতার মোকাবেলায় আমরাও সত্যের পতাকাকে উড্ডীন করে রাখতে সব ধরনের আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত। তাই পবিত্র কারবালায় ইমামের মাজার প্রাঙ্গণে মাথার ওপর পবিত্র কুরআন রেখে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইউরোপের কোনো কোনো দেশে পবিত্র কুরআন অবমাননার। এ ছাড়াও কারবালায় সেমিনার বা সমাবেশ হয়েছে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করার উপায় ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে।

ইমাম হুসাইনের আরবাঈনকে ঘিরে এভাবে প্রতি বছর যদি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ও হুসাইনি শাহাদতের আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার নবায়ন অব্যাহত থাকে তাহলে মুসলিম বিশ্বের সব সংকটের সমাধানের পথও বেরিয়ে আসতে পারে এমন মহতী সমাবেশগুলোকে ঘিরে। এই মহতী উপলক্ষকে ঘিরে মুসলিম সরকারগুলোর মধ্যেও ঘনিষ্ঠতা ও ঐক্য বাড়তে পারে যেমনটি বাড়ছে ইরান ও ইরাকের মধ্যে। সন্ত্রাসী ইসলামের মোকাবেলায় সত্যিকারের সংগ্রামী ও ন্যয়বিচারকামী ইসলামের আসল রূপ ফুটিয়ে তুলতেই সাহায্য করছে আরবাঈন। আশা করা যায় ইমাম হুসাইনের শহীদি নুরের অক্ষয় আকর্ষণ আমাদের আত্মাগুলোকে দিনকে দিন করে তুলবে পবিত্রতর ও আধ্যাত্মিক ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর।

আরবাঈনের প্রাক্কালে ইরান ও ইরাকের সীমান্ত সংলগ্ন শালামচেহ-বসরা রেল-সংযোগ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার ঘটনাও ছিল পশ্চিম এশিয়াসহ গোটা এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের জন্য আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ এবং নানা ধরনের সহযোগিতার দিকসহ সামরিক বা নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই ইসলামের শত্রু-মহল বেশ বিদ্বেষী ও আতঙ্কের দৃষ্টি দিয়ে লক্ষ্য করছে ইমাম হুসাইনের আরবাইন-কেন্দ্রীক মহাসমাবেশ ও তৎপরতাগুলো।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ