গুগলকর্মী বরখাস্তের সঙ্গে নিম্বাস প্রজেক্টের সম্পর্ক
(last modified Wed, 01 May 2024 09:13:57 GMT )
মে ০১, ২০২৪ ১৫:১৩ Asia/Dhaka
  • গুগলকর্মী বরখাস্তের সঙ্গে নিম্বাস প্রজেক্টের সম্পর্ক

যদিও প্রযুক্তি জগতের জায়ান্ট গুগল ফিলিস্তিনপন্থি হওয়ার কারণে তার কিছু কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে তবে এই কোম্পানিতে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতিবাদকারীরা ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গুগলের মধ্যে স্বাক্ষরিত "নিম্বাস"' চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বন্ধ করেনি এবং বলেছে যে তারা গণহত্যার জন্য কাজ করবে না।

প্রায় এক মাস আগে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার জন্য গুগল তার একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে বরখাস্ত করেছিল। "আমি এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে অস্বীকার করি যা গণহত্যাকে সমর্থন করে," গুগলের একটি কনফারেন্স কলের মাঝখানে তিনি উচ্চস্বরে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন।

মূল গল্পটি উল্লেখ না করে (যেমন ইসরায়েল দ্বারা ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা) গুগলের মুখপাত্র এই কর্মচারীকে বরখাস্ত করার কারণ সম্পর্কে বলেছেন, এই ব্যক্তিকে একটি অফিসিয়াল অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করার জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল।"

যাইহোক গুগলের কর্মীরা ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কোম্পানির ১.২ বিলিয়ন ডলার  চুক্তির বিরুদ্ধে যা নিম্বাস প্রজেক্ট নামে পরিচিত তার বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক, সানিভেল এবং ক্যালিফোর্নিয়া সহ বিভিন্ন শহরের অফিসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রজেক্ট নিম্বাস নতুন করে আলোচনায় আসে। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। 

প্রজেক্ট নিম্বাস

প্রজেক্ট নিম্বাস চুক্তির অধীনে গুগলের ক্লাউড কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তা পাচ্ছে ইসরাইল। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের শুধু চেহারা দেখেই চিহ্নিত করতে পারবে তাদের আদ্যোপান্ত।

ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারির ক্ষেত্রে ইসরাইলি বাহিনীকে বেগ পেতো হতো। শত শত ক্যামেরার দিকে সর্বদা নজর রাখতে হতো। বিপুল জনশক্তি নিয়োগ করেও তা নিখুঁতভাবে করা প্রায় অসম্ভব ছিল। এ ছাড়া তা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষও। ইসরাইল এ সমস্যার সমাধান করতে দ্বারস্থ হলো গুগল ও অ্যামাজনের। গুগলের কাছে তাদের ক্লাউড কম্পিউটিং ও এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব রাখল। ইসরাইল এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করল গুগল। 

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং গুগল ও অ্যামাজনের মধ্যে ১২০ কোটি ডলারে প্রজেক্ট নিম্বাস চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরের বছর ২০২১ সালের এপ্রিলে জনসম্মুখে চুক্তিটির ঘোষণা আসে।

টাইম ম্যাগাজিন জানায়, ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ প্রজেক্টটি দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে চুক্তির বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে এবার সবকিছু অফলাইনে হয়েছে এবং মূল চুক্তির ওপর ইসরাইলকে ১৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে গুগল। 

গুগল ক্লাউড দিয়ে যা করা যায়

গুগল ক্লাউড বা কম্পিউটিং সেবা ব্যবহার করে যেকোনো ফিলিস্তিনি বা কোনো দেশের যে কোনো ব্যক্তির নাম, চেহারা এবং শারীরিক গঠন চিহ্নিত করতে পারবে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এমনকি ‘ইমোশন ডিটেকশন’ প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের চেহারার অভিব্যক্তি শনাক্ত করে সেটি ইতিবাচক না নেতিবাচক তা চিহ্নিত করা যাবে। এ প্রযুক্তি যে কোনো ব্যক্তির শারীরিক ভাষা এবং চেহারার অভিব্যক্তি দেখে বলে দিতে পারবে তারা কী করতে যাচ্ছে।

অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রেই বর্ণবাদ-নিরপেক্ষ ফলাফল প্রদানে ব্যর্থ। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ‘ইমোশন ডিটেকশন’ প্রায় ক্ষেত্রেই শ্বেতাঙ্গ বাদে অন্য বর্ণ বা জাতের মানুষের প্রতি নেতিবাচক ফলাফল প্রদান করে থাকে।

গুগলের এই প্রযুক্তির সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের যে কাউকে ইসরাইলি বাহিনী চাইলেই গ্রেপ্তার করতে পারবে। অভিযোগ হিসেবে ব্যক্তির অভিব্যক্তি তাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে বলে দাবি করবে। এই প্রযুক্তি ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকর্তাদের আরও সুযোগ করে দেবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হেনস্থা করার। এজন্য প্রজেক্ট নিম্বাস বিভিন্ন মহলে বেশ বিতর্কিতও। এমনকি গুগল ও অ্যামাজনের অনেক কর্মী প্রজেক্ট নিম্বাসের বিরোধিতা করে চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রাচীর

ইহুদিবাদী ইসরাইল অনেক বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এখন ইসরাইলকে সমর্থনকারী দেশগুলোও একই নীতি গ্রহণ করেছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দাবিকারী দেশগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দেয়া হচ্ছে।

ফ্রান্স  যেদিন ৯৩ মিটারের স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমেরিকানদের দান করেছিল এবং এটি নিউইয়র্ক উপকূলের কাছে একটি জায়গায় স্থাপন করেছিল সেদিন কেউ ভাবে নি যে এই দেশে দখলদার ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রতিরোধকামীদের গত ৭ অক্টোবরের আল আল আকসা তুফান অভিযানের পর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কলঙ্কের শব্দ আরো বেশি জোরে শোনা যাবে।

ঐতিহাসিক এই ঘটনার পরে যখন ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী তার অস্তিত্ব সংকট নিয়ে আগের চেয়ে আরো বেশি লড়াইয়ের মুখোমুখি তখন এই অবৈধ সরকারকে সমর্থনকারী দেশগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার সমস্ত স্লোগানকে উপেক্ষা করছে এবং ফিলিস্তিনের সমর্থক এবং ইসরাইলের সমালোচকদের মোকাবেলা করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়োগ করেছে। এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সরকার এবং পুলিশ বাহিনী ছাড়াও তারা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল কর্পোরেশনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ