হলোকাস্ট; ইসরাইলি অপরাধের প্রতি সরকারের সমর্থনের বিষয়ে মার্কিন জনগণের নীরবতা বিপজ্জনক
(last modified Wed, 08 May 2024 20:30:00 GMT )
মে ০৯, ২০২৪ ০২:৩০ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলি অপরাধের প্রতি সরকারের সমর্থনের বিষয়ে মার্কিন জনগণের নীরবতা বিপজ্জনক
    ইসরাইলি অপরাধের প্রতি সরকারের সমর্থনের বিষয়ে মার্কিন জনগণের নীরবতা বিপজ্জনক

হলোকাস্টের মতো ঘটনা কেন ঘটে? এমনটা ঘটার কারণ হলো জনগণ যখন চোখ বুজে অন্যের অন্যায় নির্দেশ পালন করে এবং এ ক্ষেত্রে শয়তানি উদ্দেশ্যের প্রভাবকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে চলে।

চ্যাপেল হিলের উত্তর ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাইকেল শোয়ালবে সম্প্রতি এক নিবন্ধে সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,

ইসরাইলি অপরাধের প্রতিবাদ যারা করছেন তাদের সঙ্গে যে প্রক্রিয়ায় আচরণ করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে মার্কিন জাতি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী জাতিতে পরিণত হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন,

৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বেসামরিক নাগরিক। গাজার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয়েছে এবং গাজার হাসপাতালগুলোতে বোমা ফেলা হয়েছে। গাজার ১০ লাখের বেশি মানুষ বাধ্যতামূলক অনাহার এবং মৃত্যুর সম্মুখীন। এসবের প্রতিবাদে যেসব মার্কিন ছাত্র-ছাত্রী বিক্ষোভ করছে তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নিয়েছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে গণহত্যায় জড়িত হয়ে থাকতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে এসব ছাত্র-ছাত্রী।

কিন্তু মার্কিন প্রশাসন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদেরকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে এবং গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে সহমর্মী সব মানুষকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। আর তাহলো- চুপচাপ থাকুন। সব কিছু যেভাবে চলছে সেটাকেই মেনে নিন। লাইনচ্যুত হলে আপনিও অক্ষত থাকবেন না।

আমরা জানি সবাইকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগ মানুষ গ্রেপ্তার এবং এ ধরণের সম্ভাব্য পরিণতিকে ভয় পায়। এ কারণে বেশিরভাগ মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করার সম্ভাবনা কম, এমনকি কথা বলার সম্ভাবনাও কম। এভাবে তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে এড়িয়ে যাচ্ছে আর তাহলো- সমাজের মানবিক মূল্যবোধের প্রাতিষ্ঠানিক রক্ষক বলে দাবিদার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে সহিংসতায় জড়িত হতে পারে

বাকস্বাধীনতা ও সহিংস উপায়ে প্রতিবাদ দমন কখনোই একসঙ্গে যায় না। এই দ্বিচারিতার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন সব কথা বলছে যা সাধারণ যুক্তি ও প্রমাণের ধারে-কাছেও নেই।

ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে এবং ভাঙচুর করছে। আর এ কারণেই তারা সেখানে পুলিশ পাঠাতে বাধ্য হয়েছে।

কিন্তু তাদের এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। সব প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাংবাদিকেরা এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থানীয় টিভির একজন রিপোর্টার পুলিশি হস্তক্ষেপের পর বলেছেন, আমরা পাঁচ দিন ধরে এই বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করছি, এর মধ্যে এই প্রথম আমরা সহিংসতা দেখলাম। অন্যান্য সাংবাদিকও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ সম্পর্কে একই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।

ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনার কর্মকর্তারা তাদের বিবৃতিতে আরও দাবি করেছেন যে, তারা ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়া সংক্রান্ত নানা প্রতিবেদনের কারণে উদ্বিগ্ন।

সাংবাদিকদের নানা বক্তব্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দলিল-প্রমাণেও এই সত্যটা উঠে এসেছে যে, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেটাকে ইহুদিবিদ্বেষ বলা হচ্ছে তা আসলে ইহুদিবিদ্বেষ নয়। ইসরাইলের অন্যায় আচরণের সমালোচনাকে ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বলা হচ্ছে ইহুদিবিদ্বেষ মূলক বক্তব্য বেড়ে গেছে।  অবশ্য এর আগে কোনো কোনো ইসরাইলি কর্মকর্তা মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন যে, ইসরাইল বিরোধিতাকে তারা ইহুদি বিদ্বেষ হিসেবে গণ্য করে প্রকৃতপক্ষে ইসরাইলের বিরোধিতা কমাতে চান, তারা এই কৌশলে ইসরাইল বিরোধী তৎপরতা বন্ধ করতে চান।  তাদের আরেকটি কৌশল হলো, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সহিংস করে তোলা। এটা করতে তারা পুলিশকে ব্যবহার করছে। নিজেরাই উসকানিমূলক তৎপরতা চালিয়ে এরপর তা দমন করার জন্য পুলিশি পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে তারা প্রচার চালায়।  যারা খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেনি তারা এই ভেবে বিভ্রান্ত হতেই পারেন যে, বিক্ষোভকারীদের কারণেই পুলিশ নিষ্ঠুর হতে বাধ্য হয়েছে। 

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হলোকাস্ট বা গণহত্যা তখনি ঘটে যখন জনগণ অমানবিক নির্দেশ  অনুসরণ করে এবং তারা যে বড় ধরণের অন্যায়ে জড়িয়ে পড়েছে তা ভুলে থাকতে চায়। রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনগণের মধ্যে এই বিপজ্জনক ঐকতান ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র আন্দোলন। তারা গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সবাইকে সজাগ করতে চাইছে। কিন্তু এই বিবেক জাগানিয়া আন্দোলনকে নির্মম উপায়ে দমনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে তা চূড়ান্তভাবে মার্কিন জাতিকে একটি অপরাধী জাতিতে পরিণত হওয়ার দিকেই নিয়ে যাবে। আমি বলতে চাইছি নাৎসি জার্মানিতে হিটলারের প্রতি সেই জনসমর্থনের কথা।   

সূত্র:

SCHWALBE, MICHAEL. 2024. University Leaders Are Teaching Us How Holocausts Happen. ACADEME BLOG.

পার্সটুডে/এসএ/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ