শিশু হত্যাকারী ইসরাইল অলিম্পিক গেইমে অংশ নিয়েছে কার আশকারায়?
(last modified Sat, 27 Jul 2024 12:14:19 GMT )
জুলাই ২৭, ২০২৪ ১৮:১৪ Asia/Dhaka
  •  শিশু হত্যাকারী ইসরাইল অলিম্পিক গেইমে অংশ নিয়েছে কার আশকারায়?

পার্সটুডে: সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান, প্রচারাভিযান এবং রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীরা প্যারিস অলিম্পিক থেকে ইহুদিবাদী ক্রীড়াবিদদের বহিষ্কারের দাবি জানানো সত্ত্বেও ফরাসি কর্তৃপক্ষ ইহুদিবাদীদের স্বাগত জানিয়ে দেখিয়েছে যে তারা তাদের উপস্থিতিতে খুশি।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক কর্মী ও অনলাইনে সক্রিয় কর্মীরা বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে ফ্রান্স থেকে ইহুদিবাদীদের বিতাড়নের দাবি জানাচ্ছে। পার্স টুডে অনুসারে,  এই প্রচারাভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ভাষ্য হল "অলিম্পিক গেমসের মানবিক মূল্যবোধ উদযাপন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নিষ্ঠুর ও গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।' অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গাজায় ইসরাইলের পাশবিক অপরাধযজ্ঞের প্রতিক্রিয়া জানাবে। এমন একটি হত্যাকাণ্ড যেখানে অলিম্পিক ক্রীড়াবিদরা ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি বহু বছর ধরে আইওসি কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ার কারণে এই প্রত্যাশা ছিল। এটা জানা সবারই উচিত যে আইওসির দুটি প্রধান বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রথম,'একটি শান্তিপূর্ণ সমাজের প্রচার করা যেটি মানুষের মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে যত্নশীল থাকবে' এবং দ্বিতীয়,'মৌলিক সার্বজনীন নৈতিক নীতিকে সম্মান করা।'

কিন্তু প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান বা আইওসি কর্তৃক ফিলিস্তিনি অলিম্পিক কমিটির স্বীকৃতি এই আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষকে গাজার নিপীড়িত জনগণের পক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য করেনি। ফিলিস্তিনের প্রতি কোনো সহানুভূতি নেই, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতা নেই এবং অন্য কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই! এসব বিষয় ঘোষিত স্লোগান নীতি এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বাস্তব কর্মক্ষমতার মধ্যে একটি স্পষ্ট বিপরীতমুখী অবস্থান নির্দেশ করছে।

আমরা যদি দুই বছর আগে ফিরে যাই তাহলে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির দ্বিমুখী নীতি আমাদের কাছে আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠে। যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেই দিনগুলিতে আইওসি যে পদক্ষেপ নিয়েছিল আমরা আজ তার বিপরীতে অবস্থান দেখি। তখন এই কমিটি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানিয়েছিল। একজন আইওসি ভাইস-প্রেসিডেন্ট সেই সময়ে বলেছিলেন, 'যুদ্ধ হল অলিম্পিক আদর্শের বিরোধী' এবং তিনি বলেছিলেন, আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করি। তারা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার অধিকার হারিয়েছে।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির এই অবস্থানের কারণে রুশ ক্রীড়াবিদরা ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসাবে অংশগ্রহণ করবে এবং তাদেরকে কঠোর শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন তারা রাশিয়ান পতাকা বা সঙ্গীত ছাড়াই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। কিন্তু এরই মধ্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বাখকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে ইসরাইলকে প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কি না। এর উত্তরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন,  "এ নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। এর পরে ঘোষণা করা হল যে ৮৭ ইসরাইলি অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ এই দখলদার শাসকের পতাকাতলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।

 রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ স্পষ্টতই ইসরাইলের মাধ্যমে সংঘটিত গাজা ধ্বংসের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলার নতুন দফায় প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল "দ্য ল্যানসেট" গণনা করেছে যে যদি আমরা যদি পরোক্ষ মৃত্যু এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া হাজার হাজার লোককে বিবেচনা করি তাহলে ইসরাইলি হামলার ফলে ফিলিস্তিনি মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৮৬ হাজারে পৌছাবে। এটি  এমন একটি অপরাধ যেটিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা আরেহ নেইয়ার গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। ফলে অনেক সংস্থা ইহুদিবাদী ইসরাইলি ক্রীড়াবিদদের এবং এই শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত কিছুকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।

কিন্তু কেন ইসরাইলকে বয়কট করা উচিত?

ইসরাইলকে বয়কট করার পেছনে যেসব কারণ উল্লেখ করা হতে পারে তা হল গাজায় এই সরকার কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের দীর্ঘ তালিকা:

১৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ শিশুর সংখ্যা

১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নারী শহীদের সংখ্যা

৫২০ জন মেডিকেল কর্মীদের শহীদদের পরিসংখ্যান

খেলাধুলার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীরা

একই সময়ে ফিলিস্তিনি ক্রীড়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধের কারণে অলিম্পিকের বিশ্ব ক্রীড়া ইভেন্টে ইসরাইলকে বর্জন করা অর্থবহ করে তুলতে পারে:

৩৫০ জন: ক্রীড়াবিদ, রেফারি এবং ক্রীড়া কর্মীদের শহীদদের পরিসংখ্যান (ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান)

২৫০ ফুটবলার: ফুটবলে সক্রিয় ক্রীড়াবিদদের শহীদদের পরিসংখ্যান

৫৫টি ক্রীড়া ভবন: গাজার বোমা হামলায় ক্রীড়া ভবনের সংখ্যা মাটিতে মিশে গেছে

৮০ শতাংশ: গাজায় ক্রীড়া সুবিধা ধ্বংসের পরিমাণ

স্টেডিয়ামকে ডিটেনশন সেন্টারে পরিণত করা: ফিলিস্তিনি বন্দীদের রাখার জন্য এসব কেন্দ্রের অপব্যবহার। 

১৬০ জন: সাংবাদিক শহীদের সংখ্যা

সুইডেনের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী হেলেন সিলার্ট সম্প্রতি বলেছেন যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির দক্ষিণ আফ্রিকা, বেলারুশ এবং রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরাইলকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা বলে না। এটা দ্বিমুখী নীতি যা পশ্চিমা বিশ্বের ভণ্ডামি।

ক্রীড়া জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করেন যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি যদি তার বর্তমান চর্চার পরিবর্তন না করে তবে অলিম্পিকের চেতনার কিছুই থাকবে না।

 

পার্সটুডে/ এমবিএ /২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ