জাপানের ওপর মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলার প্রভাব কি শেষ?
(last modified Sun, 01 Jun 2025 08:28:06 GMT )
জুন ০১, ২০২৫ ১৪:২৮ Asia/Dhaka
  • জাপানের ওপর মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলার প্রভাব কি শেষ হয়েছে?
    জাপানের ওপর মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলার প্রভাব কি শেষ হয়েছে?

পার্সটুডে- জাপানে মার্কিন পরমাণু বোমা হামলার ধ্বংসাত্মক প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অব্যাহত রয়েছে। এই হামলার ফলে মানুষের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনও ঘটেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমার সাহায্যে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে এই দু'টি শহর ধ্বংস হয়ে যায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ হতাহত হয়।

পার্সটুডে'র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মহাবিপর্যয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও জাপান এখনও এই হামলার প্রভাবে নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সেই স্মৃতি জাপানের পিছু ছাড়ছে না।

আক্রমণের কারণে কেবল মানুষ নিহত হয়েছে তাই নয়, পরিবেশের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে তেজস্ক্রিয় দূষণ, ইকোসিস্টেম ধ্বংস, স্থানীয় জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। তীব্র পারমাণবিক বিকিরণের কারণে ডিএনএতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয় এবং বিকৃত চেহারার মানুষের জন্ম হতে পারে।

হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলার কিছু প্রভাব এখানে তুলে ধরা হলো।

১. তেজস্ক্রিয় দূষণ: পারমাণবিক বিস্ফোরণগুলো ইউরেনিয়াম-২৩৫ এবং প্লুটোনিয়াম-২৩৯ এর মতো তেজস্ক্রিয় কণা পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণ মাটি ও বাতাসকে দূষিত করে এবং কয়েক দশক ধরে বিশাল এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলে। বিস্ফোরণের পর বছরের পর বছর ধরে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

২. ইকোসিস্টেম ধ্বংস: পরমাণু বিস্ফোরণ এবং এর ফলে সৃষ্ট তীব্র তাপ (৪০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত) আশেপাশের এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণী ধ্বংস করে দেয়। স্থানীয় নদী ও পানির উৎসগুলো ছাই ও বিষাক্ত পদার্থের মাধ্যমে দূষিত হয়ে পড়েছিল। এর ফলে জলজ জীবন প্রভাবিত হয়েছে, বিভিন্ন গবেষণায় এখনও এ সংক্রান্ত তথ্য বেরিয়ে আসছে।

৩. জলবায়ুর উপর প্রভাব: পারমাণবিক বিস্ফোরণগুলো বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণে ধুলো এবং ধোঁয়া ছড়িয়ে দিয়েছিল, যার ফলে তাপমাত্রা সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। যদিও এই প্রভাব একটি বৃহৎ আকারের পারমাণবিক যুদ্ধের তুলনায় সীমিত ছিল, কিন্তু স্থানীয় জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটিয়েছে ঐ দুই হামলা।

৪. কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের উপর নেতিবাচক প্রভাব: তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে সেখানকার মাটিতে কৃষিকাজকে বহু বছরের জন্য কঠিন করে তুলেছিল। ফসল এবং গবাদি পশু দূষণের শিকার হয়েছিল। 

৫. জীবিতদের মধ্যে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি এবং পারমাণবিক বিকিরণের সংস্পর্শে আসার সাথে সম্পর্কিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তী প্রজন্মের বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেও জিনগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়েছে। জাপান সরকার বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মাসিক অর্থ প্রদান করছে যাতে শারীরিক প্রভাবের পাশাপাশি মানসিক প্রভাবও মোকাবেলা করতে পারে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক হামলা কেবল একটি মানবিক বিপর্যয়ই ছিল না, বরং এর ফলে নানা ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এখনও এর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে গেছেন। বারাক ওবামাও হিরোশিমা সফরের সময় পারমাণবিক বোমা হামলার জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান। এমন ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ক্ষমা না চাওয়ার অর্থ হলো, তারা এটাকে অন্যায় মনে করছে না এবং নিজেদের স্বার্থে ভবিষ্যতে আবারও এমন কাজ করতে দ্বিধা করবে না।#   

পার্সটুডে/এসএ/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।