ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কৌশলগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী?
(last modified Sat, 17 Aug 2024 13:51:17 GMT )
আগস্ট ১৭, ২০২৪ ১৯:৫১ Asia/Dhaka
  • ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কৌশলগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী?
    ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কৌশলগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী?

পার্সটুডে-ব্র্যান্ডেস ইউনিভার্সিটির এক গবেষক তাঁর একটি গবেষণায় এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা ইরানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

আমেরিকার বিখ্যাত একজন বিশ্লেষক ও সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া ওয়াশিংটন পোস্টে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তাঁর লেখাটির শিরোনাম ছিল: "ইরানের ওপর আমেরিকার পরাজয়কে কোনোভাবেই কৌশল বলা যায় না। ওই নিবন্ধে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার গৃহীত কৌশলগুলোর ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করেছেন। পার্সটুডে'র মতে, ওই নিবন্ধে লেখক উল্লেখ করেছেন যে ইরানের প্রতি ওয়াশিংটনের নীতিগুলো একটি সুসংগত কৌশলের পরিবর্তে সর্বাধিক চাপ প্রয়োগের ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্লেষণে সেদিকে সংক্ষিপ্ত নজর বুলানো যাক:

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কৌশল স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার পেছনে যে নীতিটি কাজ করেছে তা হলো সুসংগত কৌশলের পরিবর্তে সর্বাধিক চাপ প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করা। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে পরমাণু সমঝোতা থেকে একতরফাভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করে এসেছে। বারাক ওবামার অধীনে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ছিল ৩৭০। ট্রাম্পের অধীনে ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০০ তে। সে সময় ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিষেধাজ্ঞার দেশ হয়ে উঠেছে। পরমাণু সমঝোতার অপরাপর অংশীদার দেশ-ইউরোপীয় শক্তি, রাশিয়া এবং চীনও এই নীতির বিরোধিতা করেছিল। আমেরিকা ওই নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করে সেইসব দেশকেও ইরানের সাথে ব্যবসা করার ওপর কার্যত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

কিন্তু এই নীতির ফল কী হল? পরমাণু চুক্তির বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত হয়ে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মতে ইরানের এখন সমঝোতায় সম্মত সীমার চেয়ে ৩০ গুণ বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। পরমাণু সমঝোতায় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরমাণু জ্বালানি উৎপাদনের সময় এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন গত মাসে বলেছেন ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন থেকে মাত্র এক থেকে দুই সপ্তাহ দূরে রয়েছে।

অপরদিকে ইরান আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে বাইরের চাপের জবাব দিয়েছে। এই দলগুলোর মধ্যে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাকি ও সিরিয়ার প্রতিরোধ বাহিনী। এই "প্রতিরোধ অক্ষ" সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইসরাইলকে তার দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক যুদ্ধে নিমজ্জিত করেছে। এমনকি লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী জাহাজগুলোর শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জাহাজকেই আটকে দিয়েছে এবং ইরাক ও সিরিয়াকে সহযোগী দেশে পরিণত করেছে৷ যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকে ইরানের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের নীতি ব্যর্থ হয়েছে।

সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ব্যর্থতার কারণ কি? ব্র্যান্ডেস ইউনিভার্সিটির গবেষক হাদি কাহেলযাদেহ তাঁর এক গবেষণায় এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা ইরানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অপরদিকে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ইরান নিজেদের অবস্থানকে সঠিক বলে ভাবতে শুরু করেছিল। এ কারণে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য ইরানের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়।

এমনকি মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতোসংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ধর্মীয় ও সামরিক ব্যবস্থার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় এবং বর্তমানে প্রকৃত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সর্বোপরি ওয়াশিংটন ইরানের বিরুদ্ধে বিরোধিতা এবং চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করার ফলে সুসঙ্গত কৌশলের অভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়। চাপ প্রয়োগের হাতিয়ারের দিকে মনোনিবেশ না করে, আমেরিকা এবং তার মিত্রদেরেউচিত এমন একটি নীতি অনুসরণ করা যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অস্তিত্বকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেবে এবং উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে। এরকম পদক্ষেপ নেওয়া হলে আর যাই হোক অন্ততপক্ষে অস্থিতিশীল এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘ এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পথ বন্ধ করতে পারে।#

পার্সটুডে/এনএম/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ