ফিলিস্তিনি জনগণকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিক আইনের ঔপনিবেশীকরণ বিলোপ করতে হবে
পার্সটুডে: মিডল ইস্ট আই এক নিবন্ধে লিখেছে, আন্তর্জাতিক আইন ঔপনিবেশিক নীতিতে আবদ্ধ থাকার ফলে এবং পশ্চিমা পক্ষপাতমূলক আচরণ ইউরোপ-কেন্দ্রিক জ্ঞান উৎপাদনে কাজ করার ফলে পদ্ধতিগতভাবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সহিংসতা ও নিপীড়ন চলার মধ্য দিয়ে বিশ্বের জনগণের ইচ্ছা এবং সরকার বা প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপের মধ্যে বিরজমান পার্থক্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলেছে এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আইন নিজেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মিজান বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক আইনের কার্যাবলীর পুনর্মূল্যায়ন করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন বিভিন্ন স্তরে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে এবং শান্তি মানবাধিকার এবং পরিবেশ সুরক্ষা দেয়ার দাবি করে আসছে।
যাইহোক ইতিহাসের প্রমাণ হিসাবে এই ইস্যুটি যাকে আমরা আন্তর্জাতিক আইন বলছি তা পশ্চিমের ঔপনিবেশিক মানসিকতার সেবায় এবং তথাকথিত উদারপন্থী পশ্চিমা সমাজকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
এছাড়াও, যেমনটি আমরা দেখেছি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে কিন্তু তাদের পদক্ষেপ যথেষ্ট হয়নি অর্থ্যাৎ ইসরাইলকে গাজার ওপর পাশবিক হামলা চালানে থেকে এখন পর্যন্ত বিরত রাখতে পারে নি।
এ বিষয়ে মিডল ইস্ট আই এক নিবন্ধে লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের ঔপনিবেশিক শিকড় এবং পশ্চিমা কুসংস্কার বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ অঞ্চলকে কোনঠাসা করেছে; আন্তর্জাতিক আইনের ঔপনিবেশিক শিকড় এবং পশ্চিমা পক্ষপাতগুলিও ইউরোকেন্দ্রিক জ্ঞান উৎপাদনে কাজ করছে এবং পদ্ধতিগতভাবে অন্যান্য অঞ্চল এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে চলেছে।
পশ্চিমাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিমুখী নীতি
প্রায় একমত যে গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক যুদ্ধ শুধু গণহত্যাই নয়, এর মধ্যে ঘরবাড়ি ধ্বংসের মতো অন্যান্য বড় অপরাধও রয়েছে। যাইহোক, পশ্চিমা দেশগুলো 'আন্তর্জাতিক আইন মানে না' বলে রাশিয়ার নিয়মিত সমালোচনা সত্ত্বেও এই দেশগুলো ইহুদিবাদী শাসনের প্রতি অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেনি। সোভিয়েত-পরবর্তী যুগে দাবি করা হয় যে তথাকথিত 'উদার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা' মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে উন্নত করেছে; কিন্তু এই উদার মূল্যবোধগুলো গ্লোবাল সাউথের সমতা বা সমৃদ্ধিতে খুশি হয় না বরং ফিলিস্তিনিসহ জনগণকে নিপীড়নের জন্য কাজ করে।
এছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যের নিরঙ্কুশ ভেটো ক্ষমতা যা সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো মধ্যে সমান সম্পর্ককে ক্ষুণ্ন করে বিশ্ব রাজনীতিতে ফাটল সৃষ্টি করেছে। মিডল ইস্ট আই-এর মতে, এ ছাড়াও অনেক এলাকাকে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় পরিণত করতে ভেটো ক্ষমতা এবং সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গাজার ওপর কোনো ব্যাপক পদক্ষেপ স্থগিত করেছে, অন্যদিকে পশ্চিমা সরকারগুলো দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এবং আন্তর্জাতিক আইন উপনিবেশিকরনমুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
ঔপনিবেশিক সম্পর্ক
প্রকৃতপক্ষে, আধুনিক আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা মূলত ঔপনিবেশিক সম্পর্কের দ্বারা গঠিত। যদিও ১৯৪৫-পরবর্তী সময়টি একটি উপনিবেশকরণ আন্দোলনের সাক্ষী ছিল যা আন্তর্জাতিক আইনের ঔপনিবেশিক শিকড়কে ক্ষুন্ন করেছিল, বিশ্বব্যবস্থা স্নায়ুযুদ্ধের সময় সদ্য স্বাধীন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ধারাবাহিকভাবে কোনঠাসা করে রেখেছিল; এই ঔপনিবেশিক শিকড়গুলো গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ক্ষতির জন্য নয়া-ঔপনিবেশিক আন্তর্জাতিক আইনকে সমর্থন করেছিল।
এটা জানা উচিত যে জাতিসংঘ যেমন দেখিয়েছে এটি সমসাময়িক সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন এই সত্যটির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে যে জাতিসংঘের সংস্কার প্রয়োজন এবং এর ভিতরে থাকা নানা সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাই গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশি।
এই প্রেক্ষাপটে, ইহুদিবাদী শাসকদের অবৈধ দখল এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বাস্তুচ্যুত ও দুর্ভোগ ভালভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে; অতএব, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক কৌশলের মধ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনিদের ফিরে যাওয়ার অধিকারের নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
এছাড়াও, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে আন্তর্জাতিক সংস্থা, আদালত, সরকার এবং বিশ্ব জনমত দ্বারা সমর্থন করা উচিত। বিশ্ব আদালত যেমন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে ধ্বংস করতে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ উপস্থিতির কারণে যে কোনো বাধার অবসান ঘটানো নিশ্চিত করা সকল দেশের দায়িত্ব।#
পার্সটুডে/এমবিএ/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।