উপদেষ্টাগণ, ল্যাভরভকে আবার বিভ্রান্ত করবেন না, জাংজোরের কাল্পনিক করিডোর তৈরি হবে না
(last modified Thu, 05 Sep 2024 08:17:24 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪ ১৪:১৭ Asia/Dhaka
  •  উপদেষ্টাগণ, ল্যাভরভকে আবার বিভ্রান্ত করবেন না, জাংজোরের কাল্পনিক করিডোর তৈরি হবে না

পার্সটুডে: এটা মনে হচ্ছে যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে এবং তারা মনে করছে যে আর্মেনিয়ার সঙ্গে তাদের সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে অলীক জাংজোর করিডরকে সর্বোত্তম উপায় হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়াকে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে তা করতে গিয়ে যেনো কোনোভাবেই ইরানের স্বার্থ বিরোধী না হয়।

দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে যোগাযোগের রুট নিয়ে আলোচনা করতে বাকুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক সফরের পরে রাশিয়ার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এ বিষয়ে তাদের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে এটা বোঝা যাচ্ছে যে জনাব পুতিনের দলে বিভ্রান্তিকর উপদেষ্টাদের একটি গ্রুপ রয়েছে। এটি দেখায় যে এই অঞ্চলের ভূগোল সম্পর্কে ইরান কর্তৃক ঘোষিত কিছু নীতি এবং মূল বিষয়গুলো রাশিয়ার কর্তৃপক্ষকে শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে যাতে আল্লাহ না করুন তারা এবার অন্য অঞ্চলে একই ভুলের মাশুল দিতে না হয়!

ইরানের সংবাদ মাধ্যম তাসনিমের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানাচ্ছে যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাকু সফরের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ রাশিয়ার চ্যানেল ওয়ানের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা দ্রুত বাকু এবং ইয়ারাবানের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি শেষ করার এবং দুই দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের যে বাধা রয়েছে তা অপসারনের চেষ্টা চলছে।

তবে তিনি তার স্বাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে আর্মেনিয়ান সরকারকে একটি বাধা হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত, আর্মেনীয় নেতৃত্বই আর্মেনিয়ার সিভনিক অঞ্চল থেকে যোগাযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বাধা দিচ্ছে।" লাভরভ আরো  বলেন,  আর্মেনিয়ার দ্বারা জাংজোর বন্ধ করার কারণে এই অঞ্চলে যোগাযোগ খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।"

রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই অবস্থান মিডিয়া থেকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এবং মস্কোর "জাংজোর" নামক করিডোর খোলার ইচ্ছা সম্পর্কে জল্পনা সৃষ্টি করেছে যা আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র থেকে আর্মেনিয়া অঞ্চলের মধ্য দিয়ে নাখচিভান অঞ্চলে পূর্ব-পশ্চিম রুট হবে।

রাশিয়া, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র, আর্মেনিয়া এবং তুরস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবার এই করিডোরের প্রতি তেহরানের স্পষ্ট বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন যা সীমান্ত ও অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আনবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র "মারিয়া জাখারোভা" এর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর রাশিয়ার এই অবস্থানের প্রতি তাদের মনোযোগ তীব্র বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি তার বিবৃতিতে বলেছেন যে জাংজোর একটি রুট যা আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের প্রধান অঞ্চলকে আর্মেনিয়ার সিভনিক হয়ে নাখচিভানের সাথে সংযুক্ত করতে পারে। জাংজোরকে অবরোধমুক্ত করার বিষয়টি অবশ্যই আর্মেনিয়ার সাথে ত্রিপক্ষীয় শান্তি আলোচনার কাঠামোতে আলোচনা করা হবে।

ইরানের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জাখারোভা সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা জাংজোর করিডোর সম্পর্কে ইরানের পক্ষের উদ্বেগ দেখেছি এবং আপনাদের স্পষ্টতার জন্য তেহরানের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।" তবে এ বিষয়ে মস্কোর অবস্থান একেবারে নিশ্চিত। "আমরা এই সত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছি যে সমাধানটি অবশ্যই আর্মেনিয়া,আজারবাইজান এবং এই অঞ্চলের প্রতিবেশীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।"

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ

রাশিয়ান কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি পয়েন্ট মনে করিয়ে দেওয়া উচিত:

প্রথমত, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন বিবৃতি দিয়েছে যা ইরানের প্রত্যাশার বিপরীত। রাশিয়ানরা ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এবং তেহরানের স্পষ্ট ও সঠিক অবস্থানের বিষয়ে ভালোভাবে অবহিত হয়েছে যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যেকোন ধরনের করিডোরের বিরুদ্ধে যেমন জাংজোর এবং অন্যান্য যা নাখচিভানকে আজারবাইজানের সাথে সংযুক্ত করে।

দ্বিতীয়ত, মস্কোর কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে যার এই অঞ্চল বিশেষ করে দক্ষিণ ককেশাসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে সবসময় আমেরিকা ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এবং যারা বিশ্বে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর পর তেহরান বিশ্ব মোড়লদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে মৌলিক নীতি ও কৌশল নিশ্চিত করেছে।

তৃতীয়ত, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দেশের কোনো অংশে তার সীমান্ত এবং তার নিরাপত্তাগত সীমানার ভেতরে কোনো পরিবর্তন মেনে নেয় না।

চতুর্থত, কোনো নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণ ককেশাসের কোনো দেশের নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান অন্যদের চেয়ে অগ্রাধিকারযোগ্য নয়; তাহলে কেন আমাদের রাশিয়ান বন্ধুরা মনে করেন যে তাদের আর্মেনিয়ার সাথে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য জ্যাংজোর করিডোর ব্যবহার করা উচিত?

পঞ্চমত, মস্কো বা রাশিয়া যখন ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের চরমে তখন আমেরিকানরা ন্যাটোর চামড়ায় সাপের মতো দক্ষিণ ককেশাসে পথ খুলতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ন্যাটো ও আমেরিকার সামনে সর্বশক্তি দিয়ে একা দাঁড়িয়েছে যেখানে বাইডেন সরকার ঘোষণা করে যে জাংজোর করিডোর খোলার ক্ষেত্রে ইরান একমাত্র বাধা। রাশিয়ার এই বিষয়টির দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত যে জাংজোর করিডোরের একই ইস্যুতে যখন এই দেশটি নিজেই গত দুই বছর ধরে ইউক্রেন ইস্যুতে জড়িত  তখন ইরান এবং সর্বোচ্চ নেতা একাই এই ইস্যুতে সুবিধাভোগী পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হয়েছিল।

কেন রাশিয়া এখন এই ঘোষণা দিল যে ইরান স্পষ্টভাবে তার অবস্থান ঘোষণা করেছে এবং এই ইস্যুটি বিশ্বে একটি নির্দিষ্ট ইস্যু হয়ে উঠেছে এবং অথচ এই ইস্যুতে ইরানের অবস্থানের বিষয় এর সঙ্গে পক্ষগুলো অবগত আছে। এটি একটি আশ্চর্যজনক বিষয়!

ষষ্ঠ দফা হল যে দুই দেশের কর্তৃপক্ষ একটি কৌশলগত সম্পর্ক আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এক ধরনের কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ইচ্ছার লক্ষণ। আর এটি এমন একটি ইস্যু যা সিনিয়র রাশিয়ান কর্মকর্তাদের দ্বারা জোর দেয়া হচ্ছে বিশেষ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ বিষয়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে জনাব পুতিনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুস্পষ্ট চুক্তি এবং কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারে দুই দেশের লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন অবস্থান বিস্ময়কর! এটা মনে হয় যে রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য "কৌশলগত সম্পর্ক" এর ব্যবহারিক অর্থ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা উচিত।

সপ্তম হচ্ছে, এটা মনে হচ্ছে যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে এবং তারা মনে করছে যে আর্মেনিয়ার সঙ্গে তাদের সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে অলীক জাংজোর করিডরকে সর্বোত্তম উপায় হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়াকে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে তা করতে গিয়ে যেনো কোনোভাবেই ইরানের স্বার্থ বিরোধী না হয়।  

এটা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো যে জাংজোর করিডোর খোলার অর্থ হল ইউরোপের দিকে ইরানের একটি গেট বন্ধ করে দেওয়া এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিবেশীদের সংখ্যা ১৫ থেকে কমিয়ে ১৪ করা।

ইরান ও রাশিয়া যে "কৌশলগত সম্পর্কের" ধারণা খুঁজছে, সে অনুযায়ী এ ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া কৌশলগত সম্পর্কের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চূড়ান্ত বিষয় হল যে সম্ভবত তারা যদি জাংজোর বা নন-জাংজোরে করিডোর নামে কিছু খুলতে চায় তবে পশ্চিমারা অবশ্যই তা প্রতিরোধ করবে এবং তারপর এই সংঘাত উত্তর-পশ্চিম ইরানের খুব সংবেদনশীল সীমান্তের ঠিক পাশেই সংঘাতের এক নতুন কেন্দ্র উন্মোচিত করবে।

কোনো দেশ যদি মনে করে যে অন্যের খরচে জ্বালাও-পোড়াও ও সংঘাতের নতুন ফ্রন্ট খুলে তার সীমানার বাইরে তার সমস্যার সমাধান করতে পারবে তাহলে পৃথিবীর কোনো স্থানই নিরাপদ থাকবে না এবং তখন বিশ্বে স্থায়ী বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকবে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ