ইসরাইলি বর্বরতা ও সন্ত্রাসের নজিরবিহীন মাত্রায় স্তম্ভিত আন্তর্জাতিক আইনবিদরা
(last modified Sat, 21 Sep 2024 13:38:49 GMT )
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ ১৯:৩৮ Asia/Dhaka
  • মানবাধিকারের শত শত বছরের প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করছে ইসরাইল
    মানবাধিকারের শত শত বছরের প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করছে ইসরাইল

পার্স-টুডে-আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও নীতিমালার অন্যতম প্রধান একটি দিক বা ধারা হল যুদ্ধের সময় কেবল সশস্ত্র ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালানো যাবে। কিন্তু ফিলিস্তিনের দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল চিকিৎসক, সাংবাদিক, ত্রাণকর্মী ও হাসপাতাল-কর্মী এবং নারী ও শিশুসহ সব ধরনের বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে যাচ্ছে।  

সম্প্রতি লেবানন ও সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষের কাছে থাকা বেতার যোগাযোগের পেজারগুলো এবং পরদিন বেশ কিছু সংখ্যক ওয়াকিটকি জাতীয় বেতারযন্ত্র একসঙ্গে বিস্ফোরিত হলে গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত ও হতবাক হয়েছে। ইসরাইলের  ওই নৃশংস ও অপ্রত্যাশিত সাইবার-সন্ত্রাসী হামলায় লেবানন ও সিরিয়ায় অন্তত কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও তিন হাজার জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। লেবাননের হিজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্য এই হামলায় শহীদ হয়েছেন। আহতদের অনেকেরই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে এবং অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছেন। বেতার যোগাযোগের ওই যন্ত্রগুলোর উৎপাদনে জড়িত কোম্পানিগুলোর সহায়তায় ইসরাইল এই হামলা চালিয়েছে। 

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা ইসরাইলের এইসব অপরাধকে নৃশংস ও বর্বরোচিত এবং জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলোর প্রকাশ্য লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছেন। সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্য না করে সব ধরনের লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্বিচার হামলা জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন।  

ইসরাইল কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে বা সামরিক লোকদের ওপর যথাযথ টার্গেট নিয়ে এসব হামলা চালায়নি। বিস্ফোরণগুলো ঘটানোর সময় সামরিক ও বেসামরিক লোকদের আলাদা করা নিয়ে মাথা ঘামায়নি ইসরাইল। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অ্যালোন্সো ডানকেলবার্গ গুরমেন্দি বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইসরাইলের উচিত ছিল বেতার যোগাযোগের এইসব যন্ত্র কাদের কাদের হাতে রয়েছে তা ভালোভাবে যাচাই করে দেখা এবং কেবল সামরিক টার্গেটের ওপর তথা প্রতিরোধকামীদের ক্ষেত্রে এসবের বিস্ফোরণ ঘটানো। কিন্তু এইসব বিচার-বিশ্লেষণ না করেই নির্বিচারে অন্ধের মত একই সময়ে যন্ত্রগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে লন্ডনের এই বিশেষজ্ঞ ইসরাইলকে অপরাধী বলে মনে করেন।

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, নৈতিকতা ও সংঘাত বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জানাইনা ডিল বলেছেন, এইসব হামলা কেবল বেসামরিক নাগরিকদেরকেই বিপদাপন্ন করেছে তা নয়, তা আইনি দিক থেকেও অগ্রহণযোগ্য। এই পেজারগুলোর বিস্ফোরণ ঘটেছে ঘর-বাড়িতে, দোকানপাটে, গাড়িতে ও এমনকি দাফন অনুষ্ঠানেও। এ থেকেই স্পষ্ট যে ইসরাইল যুদ্ধের প্রাথমিক মানবীয় নীতিগুলোও মেনে চলছে না।   

আন্তর্জাতিক মানবীয় আইন অনুযায়ী সাংবাদিক, চিকিৎসক ও হাসপাতালকর্মীসহ বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালানো নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলি নৃশংস ও পাশবিক হামলার শিকার হচ্ছেন এ ধরনের ব্যক্তিরা এবং এমনকি নারী ও শিশুরাও।  হিজবুল্লাহর একজন সদস্যের নয় বছর বয়স্ক কন্যা ফাতিমা জাফর আবদুল্লাহও ইসরাইলের এমন নৃশংসতার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছে।  

হিজবুল্লাহর এক সদস্যের নয় বছর বয়স্ক কন্যা ফাতিমা জাফর আবদুল্লাহও ইসরাইলি পেজার-নৃশংসতায় শহীদ হয়েছে

 

আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কেন্দ্রের এ্যালেন নোহলি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেসব ব্যক্তি সরাসরি সংঘাতে জড়িত নয় কখনও এমন ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালানো উচিত নয়। তিনি বলেছেন, বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর হামলার পক্ষে কোনো যুক্তিই থাকতে পারে না, এমনকি এইসব বেসামরিক ব্যক্তি যদি হিজবুল্লাহরও হয়ে থাকেন। এ ধরনের অপরাধ সামরিক অপরিহার্যতার নীতিরও লঙ্ঘন। 

লেবাননে পেজার নামক বেতার যন্ত্রগুলোতে যেভাবে বোমার ফাঁদ পেতে রেখে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। প্রচলিত অস্ত্র বিষয়ক কনভেনশনের সংশোধিত প্রোটকল অনুযায়ী এ ধরনের বোমা ব্যবহার যা হঠাৎ করে কোনো আলামত বা পূর্ব-অনুমান ছাড়াই বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তা নিষিদ্ধ বা বেআইনি।

যুদ্ধ নামক বইয়ের লেখক ও জেনেভা গ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট-এর অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ক্লাফামও ক্ষতি করা ও হত্যার উদ্দেশ্যে এমন সব যন্ত্রের ব্যবহারকে আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে কোনো সরকারি কর্মী বা তার অনুগত কারো নির্দেশে এ ধরনের বিকল্প বিস্ফোরক-যন্ত্র ব্যবহার করাও বেআইনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী।  

ইসরাইলের এসব অপরাধ অবৈধ এই সন্ত্রাসী সরকারের নানা গোপন অভিযান ও সন্ত্রাসী তৎপরতাগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসরাইল এইসব তৎপরতার মাধ্যমে সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধের নীতি-নৈতিকতার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে আসছে। বিশ্ব-সমাজের উচিত নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণ হরণকারী এমন পৈশাচিক ও মানবিক আইন বিরোধী নৃশংসতা বন্ধের জন্য কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো।  

উল্লেখ্য, লেবাননের হিজবুল্লাহ সময়মত যথাস্থানে ইসরাইলি এই হামলার কঠোর জবাব দেবে বলে ঘোষণা করেছে। লেবাননে ইসলামী ইরানের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতও এই হামলায় আহত হওয়ায় তেহরান তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কঠোর প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ