নিজের উপনিবেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হবে কি ব্রিটেন?
(last modified Wed, 25 Sep 2024 03:42:31 GMT )
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৯:৪২ Asia/Dhaka
  •  নিজের উপনিবেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হবে কি ব্রিটেন?
     নিজের উপনিবেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হবে কি ব্রিটেন?

পার্সটুডে- ব্রিটিশ সরকার যদি নিজেকে মানবাধিকারের রক্ষক বলে দাবি করতে চায় তবে উপনিবেশবাদী শাসক হিসেবে অতীতে নিজের ক্রীতদাস ব্যবসা ও ঔপনিবেশিক অপরাধগুলোর দায় স্বীকার না করে থাকতে পারে না। 

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে আগেভাগে সেই পুরনো প্রশ্নটি আবার নতুন করে সামনে এসেছে: সাবেক উপনিবেশবাদী শাসক ব্রিটেন তার ঐতিহাসিক অপরাধযজ্ঞ বিশেষ করে ক্রীতদাস ব্যবসার দায় গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে তার ক্ষতিপূরণ দেবে নাকি দেবে না? পার্সটুডের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন এই প্রশ্ন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ কমনওয়েলথভুক্ত বেশিরভাগ দেশ এক সময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ছিল এবং এবারের কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের আগে এসব দেশ লন্ডনের কাছ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে।

ক্ষতিপূরণের দাবি জোরালো হচ্ছে

এবারের কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে এই সংস্থার পরবর্তী মহাসচিব পদের দৌড়ে অংশ নিচ্ছেন আফ্রিকার তিনটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ওই তিন মন্ত্রীই সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সুস্পষ্টভাবে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিরলি বোচওয়ে বলেছেন, ক্ষতিপূরণ শুধু আর্থিকভাবে হতে হবে তা নয় এটির বিভিন্ন রূপ থাকতে পারে। তিনি বলেন: “আর্থিক ক্ষতিপূরণ একটি ভালো উপায়, তবে অর্থ-বহির্ভূত উপায়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়েও ইদানিং আলোচনা হচ্ছে।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকার ক্ষতিপূরণের দাবি মেনে নেয়ার পরিবর্তে এ সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিতে ভয় পাচ্ছে কেন? কমনওয়েলথকে নিজের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে  না বলেই কি তার এই অনীহা?

পদাধিকারবলে কমনওয়েলথের সভাপতি রাজা চার্লস এই সংস্থার পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলনে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ক্রীতদাস বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ওই মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে ব্রিটিশ সরকার এখন পর্যন্ত কোনো দেশকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়নি। এখানে পর্যবেক্ষকরা যে প্রশ্নটি করছেন তা হলো, ব্রিটিশ সরকার কি তাহলে দুঃখ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করবে নাকি নিজের অতীতকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখার মাধ্যমে এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার রক্ষার পথে হাঁটবে?

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ কমনওয়েলথ স্টাডিজের পরিচালক কিংসলে অ্যাবট বিশ্বব্যাপী ক্ষতিপূরণের দাবি জোরালো হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, ব্রিটিশ সরকার ক্রীতদাস ব্যবসা করে যে ঔপনিবেশিক শাসনে থাকা দেশগুলোর ক্ষতি করেছে সে বিষয়ে এখন আর কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু এখন এ প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, ব্রিটিশ সরকার কি নিজের অতীত অবস্থানে অটল থাকবে নাকি ক্ষতিপূরণ দেয়ার যে রব উঠেছে তাতে সাড়া দেবে?

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ২০২৩ সালে এক বক্তব্যে লন্ডনের অযৌক্তিক অবস্থান সমর্থন করে বলেছিলেন, “আমাদের ইতিহাস নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করা সমস্যা সমাধানের সঠিক উপায় নয়।” প্রশ্ন উঠতে পারে, এ ধরনের কথা কি নিজের দায় অস্বীকার করার অপচেষ্টা নয়? কেন আমরা অতীতের একটি বিষয়কে ‘নিষ্পতি না করেই’ সেটিকে অবধারিত ইতিহাস হিসেবে মেনে নেব? বিশেষ করে যখন বিষয়টির সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে?

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্রিটিশ সরকার যদি নিজেকে মানবাধিকারের রক্ষক বলে দাবি করতে চায় তবে উপনিবেশবাদী শাসক হিসেবে অতীতে নিজের ক্রীতদাস ব্যবসা ও ঔপনিবেশিক অপরাধগুলোর দায় গ্রহণ না করে থাকতে পারে না।  কিংসলে অ্যাবট যেমনটি বলেছেন, ক্ষতিপূরণ যে সব সময় আর্থিকই হতে হবে এমনটি নয় বরং অর্থপূর্ণ ক্ষমা প্রার্থনা, আনুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহাসিক দায় স্বীকার এবং ব্রিটিশ সরকার যে অতীতে এমন অপরাধ করেছে সে সংক্রান্ত মেমোরিয়াল প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি আকারেও ক্ষতিপূরণ হতে পারে।

কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এবারের সম্মেলনে এ ব্যাপারে ব্রিটেনের ওপর চাপ আরো বাড়বে। এই চাপ প্রশমনে সবার আগে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের অতীত অপরাধের দায় স্বীকার করা। পরিশেষে বলতে হয়, ব্রিটিশ সরকার কি কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোকে নিজের সমকক্ষ হিসেবে মেনে নেবে এবং দায় মেনে নিয়ে যথাসম্ভব ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে? আসন্ন কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন পর্যবেক্ষকরা।#

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/২৫

ট্যাগ