মার্কিন-ইসরাইলি প্রচারণার বড় পরাজয়: নির্বাচনে হিজবুল্লাহর জয়ের কারণ বিশ্লেষণ
(last modified Tue, 27 May 2025 05:08:06 GMT )
মে ২৭, ২০২৫ ১১:০৮ Asia/Dhaka
  • লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের পৌর ও স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে হিজবুল্লাহর বিশাল জয়
    লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের পৌর ও স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে হিজবুল্লাহর বিশাল জয়

পার্সটুডে: একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের পৌর ও স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে হিজবুল্লাহর জয় প্রমাণ করে যে, শত্রুদের নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও এই দলের জনপ্রিয়তা এখনও অটুট রয়েছে।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও নাবাতিয়ায় গত ২৪ মে (শনিবার) পৌর ও স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ও শেষ ধাপ অনুষ্ঠিত হয়। হিজবুল্লাহ ও আমাল আন্দোলন সমর্থিত 'উন্নয়ন ও আনুগত্য' জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং শাকরা, জুয়া, আইত্রুন ও নাবাতিয়ার মতো বিভিন্ন শহর ও গ্রামে এগিয়ে থাকে।

ইরানের আরবী ভাষার স্যাটেলাইট চ্যানেল আল-আলম-এর বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, লেবাননের বিশ্লেষক নাসের নাসেরউদ্দিন বলেছেন, "এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হলো যে, দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে। এই ফলাফল লেবাননের ভবিষ্যত সংসদের গঠনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে এবং সরকার ও মন্ত্রিসভা গঠনে প্রভাব ফেলবে। একইসাথে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ-আমাল জোটের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।"

নাসেরউদ্দিন আরও যোগ করেন, "লেবাননের পৌর নির্বাচনের সময় আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস কিছু প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কাজ করার চেষ্টা করে এবং ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ভোটের ফলাফল হিজবুল্লাহবিরোধী শক্তির প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।"

তিনি জোর দিয়ে বলেন, "হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যখন ইসরাইলের 'পেজার' অপারেশন চালানো হয়, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও হিজবুল্লাহর কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতাকে হত্যা করা হয় এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল যখন লেবাননে আগ্রাসন বাড়ায়, তখন মানুষের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম দেখিয়ে দিয়েছেন যে, হিজবুল্লাহ ব্যক্তি-নির্ভর দল নয়। তারা দ্রুত নিজেদের পুনর্গঠন করে ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব দিয়েছে এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে।"

এই লেবাননি বিশ্লেষক আরও বলেন, "লেবাননের মানুষ, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা সবসময় বলে আসছেন যে, মার্কিনীদের কখনই বিশ্বাস করা যায় না। আমেরিকা লেবাননের সরকার ও জনগণকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে বললেও ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে তারা কিছুই করেনি। সাম্প্রতিক হামলাগুলো প্রমাণ করেছে যে, ইসরাইল আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছে এবং তারা লেবাননে হামলা করার জন্য সুযোগ খুঁজছে। লেবানন সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সহায়তা নেওয়া, যাতে ইসরাইলি দখলদারদের আগ্রাসন বন্ধ করা যায়।"

লেবাননে শিয়া ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়কে হিজবুল্লাহর সফল প্রচেষ্টার ফল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সিরিয়ায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় হিজবুল্লাহ খ্রিস্টান অধ্যুষিত গ্রামগুলোকে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছে। লেবাননের অনেক খ্রিস্টান গ্রামও আছে যেখানে হিজবুল্লাহ বাসিন্দাদের সহায়তা দিয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেই। খ্রিস্টান সম্প্রদায় এই সহায়তা দেখে হিজবুল্লাহর সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে এবং তাদের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে।"

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, "ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ লেবাননের মুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০০০ সালে ইসরাইলের ১৮ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটে এবং হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের মুখে ইসরাইলি সেনাবাহিনী লজ্জাজনকভাবে পিছু হটে। এই মুক্তির পর ২৫ বছরে ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, কিন্তু প্রতিরোধ শক্তি সবসময় তাদের জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে। হিজবুল্লাহ বারবার ইসরাইলি ট্যাংক ধ্বংস করেছে এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। নির্বাচনে হিজবুল্লাহর বিজয় এবং দক্ষিণ লেবাননের মুক্তির বর্ষপূর্তি দুটি বড় ঘটনা। লেবাননের মানুষ, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা, জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা সবসময় প্রতিরোধের পক্ষে থাকবে এবং দখলদারিত্বের অবসান না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।"

তিনি বলেন, "লেবাননের মানুষ শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ'র কথা ও স্লোগানের সাথে একমত; আর তা হলো- প্রতিরোধ চলতে থাকবে। ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর অস্ত্র সবসময় প্রস্তুত থাকবে এবং লেবাননি সেনাবাহিনীর পাশে থাকবে।"

পার্সটুডে/এমএআর/২৭