বিবিসি কিভাবে হিজবুল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের পক্ষে অপপ্রচার চালায়
(last modified Sat, 28 Sep 2024 14:40:06 GMT )
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪ ২০:৪০ Asia/Dhaka
  • বিবিসি কিভাবে হিজবুল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের পক্ষে অপপ্রচার চালায়?
    বিবিসি কিভাবে হিজবুল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের পক্ষে অপপ্রচার চালায়?

হিজবুল্লাহর সীমিত পর্যায়ের হামলার দিকে দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো, বিশেষ করে বিবিসি গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের দিক থেকে মানুষের দৃষ্টিকে সরিয়ে নেয়ার চালাকি করছে।

এভাবে বিবিসিসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ইহুদিবাদী ইসরাইলের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এইসব মিডিয়া নানা বিশেষ শব্দ, সংবাদ-কাঠামো ও ঘটনাবলীর পুন-উপস্থাপনের মাধ্যমে সত্যকে বিকৃত করছে। কেবল তা-ই নয়, এমনকি সত্যকে বিকৃত করে এইসব মিডিয়া সুপরিকল্পিতভাবে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের পক্ষে সাফাই বা অপব্যাখ্যা দিচ্ছে ও এইসব অপরাধকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে। বিবিসি নানা কৌশল বা চালাকির মাধ্যমে কিভাবে এই কাজগুলো করে তা এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরছি: 

১. শব্দ ও ভাষার অপপ্রয়োগ 

যেমন বিবিসি তার প্রতিবেদনে লেবাননের ওপর ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযানকে উল্লেখ করছে 'উত্তেজনা হ্রাসের জন্য হামলা জোরদার কিংবা নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি-ভিত্তিতে হামলা জোরদার'-এমন বাক্যের মাধ্যমে! এভাবে ইসরাইলি আগ্রাসনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরছে এবং বেসামরিক জনগণকে হত্যা ও লেবাননের অবকাঠামোর ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোকে যৌক্তিক বলে তুলে ধরছে। বিবিসির একটি রিপোর্টে ইসরাইলি আগ্রাসনকে উল্লেখ করা হয়েছে 'এক দুঃসাহসিক ও জটিল অভিযান' হিসেবে। এভাবে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের তীব্রতার প্রশংসা করা হয়েছে এর অপব্যাখ্যা ও সাফাই দিয়ে। 

২. আত্মরক্ষার অধিকারের নামে আগ্রাসনকে বৈধতা দেয়া

পশ্চিমা গণমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরাইলি আগ্রাসনকে বৈধতা দিচ্ছে আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলের রয়েছে বলে উল্লেখ করে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়াই। অথচ এইসব মিডিয়া হিজবুল্লাহরও একই ধরনের অধিকার থাকার কথা এড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন, বিবিসি হিজবুল্লাহর সীমিত ও অকার্যকর হামলা অব্যাহত থাকাকে ইসরাইলের জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে। অথচ সীমান্তে নয় হাজার ৬০০টি হামলার মধ্যে ইসরাইলের হামলার সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৪৫টি। বিবিসি ইসরাইলের হামলাকে বৈধ প্রতিরক্ষা বা আত্মরক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং লেবাননের বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের শহীদ হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।

৩. ইসরাইলি প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন প্রচার করা কোনো আপত্তি ছাড়াই 

বিবিসি ইসরাইলের এই বিজ্ঞাপনটি প্রচার করেছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাখা হয়েছে লেবাননের জনগণের ঘড়-বাড়িতে! গাজায় হামাসের কথিত অস্ত্র-ভাণ্ডার ও ক্ষেপণাস্ত্র গুদামের কল্প-কাহিনীও প্রচার করা হয়েছিল হাসপাতাল ও স্কুলগুলোতে হামলার অজুহাত হিসেবে। একই ধরনের মিথ্যাচার করা হয়েছে লেবাননের বেসামরিক লোকদের হত্যার ব্যাপারেও। ইসরাইলের একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে হিজবুল্লাহর অনেক ক্ষেপণাস্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে বৈঠকখানায় যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কম্পিউটার প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ওই ভিডিও।
৪. হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকিকে বড় করে দেখানো ও ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞকে ছোট করে দেখানো
বিবিসির এক রিপোর্টে হিজবুল্লাহর সীমিত মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলোকে খুব বড় করে দেখানো হয়েছে। অথচ লেবাননে ইসরাইলের হামলা ছিল এতই ব্যাপক ও ধ্বংসাত্মক যে কেবল এক দিনেই শত শত বেসামরিক লেবাননি শহীদ ও আহত হয়েছে এবং প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ হয়েছে শরণার্থী। অথচ ইসরাইলের এত ব্যাপক বর্বরতাকে বিবিসি উল্লেখ করেছে সীমিত ও আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে।  

৫. হিজবুল্লাহর হামলার প্রকৃত কারণগুলো গোপন করা 

হিজবুল্লাহ ইসরাইলে তার হামলার লক্ষ্যকে সীমিত চাপ প্রয়োগ হিসেবে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও যুদ্ধ বন্ধ জন্য নিবেদিত বলে উল্লেখ করে এসেছে। বিবিসি হিজবুল্লাহর এই মানবিক লক্ষ্যকে এড়িয়ে গিয়ে উপনিবেশবাদ-বিরোধী এই আন্দোলনকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছে। একজন ইসরাইলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বলেছে, হিজবুল্লাহ 'আগাগোড়াই ইহুদি-বিদ্বেষী'! এভাবে হিজবুল্লাহর সংগ্রামী পদক্ষেপগুলোর প্রকৃত কারণগুলো তুলে ধরা থেকে বিরত থেকেছে বিবিসি। 

৬. ইসরাইলের কথিত লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে ইসরাইলি বর্ণনা বিনা শর্তে মেনে নেয়া

ইসরাইল বলেছে যে লেবাননের বেসামরিক জনগণের ওপর বা আবাসিক এলাকার ওপর ইসরাইল হামলা চালায়নি বরং হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপরই বোমা বর্ষণ করেছে ইসরাইল! অথচ হতাহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু। বিবিসিও ইসরাইলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচার করেছে যে হিজবুল্লাহর দুই হাজারেরও বেশি অবস্থানে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা! অথচ এ দাবি কতটা সত্য সে বিষয়ে কোনো তদন্ত করারই দরকার মনে করেনি বিবিসি এবং বেসামরিক লেবাননীদের হতাহতের পরিসংখ্যানও এড়িয়ে গেছে বিবিসি! 

৭. আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ইসরাইলি রেকর্ডগুলো গোপন রাখা 

আন্তর্জাতিক জোট ও সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে আসছে এবং ইসরাইলের দখলদারিত্ব সংক্রান্ত অপরাধগুলোকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে উল্লেখ করে এসেছে। কিন্তু বিবিসি কখনও ইসরাইলের এইসব অপরাধ তুলে ধরে না, বরং ইসরাইলি বর্ণনাগুলোকেই তুলে ধরে জোর দিয়ে।  যেমন যোগাযোগের বেসামরিক বেতার যন্ত্রগুলোতে বোমা পেতে রেখে সেসবের বিস্ফোরণ ঘটানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও বিবিসি ও পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলো তা এড়িয়ে গেছে।  

৮. জনমতের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখা 

হিজবুল্লাহর সীমিত পর্যায়ের হামলার দিকে দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো, বিশেষ করে বিবিসি গাজা ও লেবাননে ইসরাইলের ব্যাপক অপরাধযজ্ঞের দিক থেকে মানুষের দৃষ্টিকে সরিয়ে নেয়ার চালাকি করছে। ফলে সন্ত্রাসী ইসরাইল কোনো বাধা বা প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সন্ত্রাসী আগ্রাসন অব্যাহত রাখছে আরও তীব্র মাত্রায়।

৯. ইসরাইলি আগ্রাসনকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরে লেবাননী কর্মকর্তাদের নিন্দা করা

বিবিসি ইসরাইলি আগ্রাসনকে 'স্বাভাবিক অধিকার' হিসেবে উল্লেখ করে লেবাননের প্রতিরোধকে নেতিবাচক ও হুমকিমূলক হিসেবে তুলে ধরছে। এভাবে বিবিসি ইসরাইলের উপনিবেশকামী লক্ষ্যগুলোকে ইতিবাচক ও সঠিক হিসেবে তুলে ধরছে এবং ইসরাইলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকে বৈধতা দিচ্ছে।  

এভাবে বিবিসিসহ মূলধারার পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সুপরিকল্পিতভাবে সত্যকে বিকৃত করে ইসরাইলের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ