'আমাদের উচিত ইরানকে উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ করা': কিছু প্রতিক্রিয়া
(last modified 2024-10-15T03:45:58+00:00 )
অক্টোবর ১৫, ২০২৪ ০৯:৪৫ Asia/Dhaka
  • তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টিআরটি’র মহাপরিচালক জাহিদ সুবাজি
    তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টিআরটি’র মহাপরিচালক জাহিদ সুবাজি

পার্সটুডে- তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রেডিও ও টিভি চ্যানেল টিআরটি’র মহাপরিচালক জাহিদ সুবাজি ইরানবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ইসমাইল পেকিন বলেছেন: ইরানের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তা হবে মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করার শামিল।

টিআরটি’র মহাপরিচালক সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ টিআরটি’র ফার্সি টিভি চ্যানেল চালু হবে। তিনি এই খবর জানাতে গিয়ে ইরানবিরোধী দু’টি বাক্য উচ্চারণ করেছেন: “…আমরা ইরানকে ডিস্টার্ব করতে চাই।  আমাদের উচিত ইরানকে উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ করা।”

বাক্যগুলো তুর্কি টেলিভিশনের কোনো ভাষ্যকারের ব্যক্তিগত অভিমত নয় বরং দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রেডিও-টিভির প্রধান কর্মকর্তা এবং তুর্কি সরকারের নীতি বাস্তবায়নকারী একজন পদস্থ কর্মকর্তার মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছে। তার এ বক্তব্য থেকে টিআরটি’র ফার্সি ভাষার সম্ভাব্য চ্যানেল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে খানিকটা আঁচ করা যায়। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, টিআরটি’র মহাপরিচালকের এ বক্তব্য তুরস্কের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

তুরস্কের মাদারল্যান্ড পার্টির নেতা দোগো প্রিনচেক এ সম্পর্কে বলেন: “টিআরটি’র মহাপরিচালকের বক্তব্য কোনো অবস্থায় সরকারি শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। কেবলমাত্র আমেরিকা ও ইসরাইলের দোসরদের পক্ষেই এ ধরনের বক্তব্য মুখে উচ্চারণ করা সম্ভব। যে কাজের মাধ্যমে ইরানকে কষ্ট দেয়া যায় তা আমেরিকা ও ইসরাইলকে সন্তুষ্ট করবে। তুরস্কের প্রকৃত বন্ধুদের সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্ক নষ্ট করার, হুমকিগ্রস্ত করার বা এসব দেশকে ডিস্টার্ব করার অধিকার টিআরটি’র মহাপরিচালকের নেই। ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব তুরস্কের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং ইরানকে বাদ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পরিকল্পনা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। টিআরটি’র মহাপরিচালককে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে। যদি টিআরটি’র ফার্সিভাষী চ্যানেল চালু করা হয়ও তারপরও এটিকে ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী করার কাজে লাগাতে হবে।  একে ইরানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি চ্যানেল হিসেবে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকা ও ইসরাইলের হুমকি মোকাবিলা করার কাজে লাগতে হবে।”

এছাড়া, টিআরটি’র মহাপরিচালকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের জাফর পার্টির নেতা ওমিদ ওজদাগ নিজের অফিসিয়াল টুইটার পেজে লিখেছেন: “জাহিদ সুবাজি টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে বলেছেন: ‘আমরা অচিরেই ফার্সি টিভি চ্যানেল চালু করব। আমাদের উচিত ইরানকে অসন্তুষ্ট করা।’ দেখেশুনে মনে হচ্ছে ক্ষমতাসীন একেপি ইরানের মোকাবিলায় আমেরিকা ও ইসরাইলকে সন্তুষ্ট করার পথ বেছে নিয়েছে। টিআরটি অচিরেই ইরানবিরোধী অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করবে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে ভুল বলে মনে করি। তবে এই সিদ্ধান্ত ভুল নাকি সঠিক সে বিতর্ক বাদ দিয়েও বলা যায়, যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েও থাকে তাও ক্যামেরার সামনে তা প্রকাশ করা উচিত নয়। এটি কৌশলগত মূর্খতার শামিল। ২২ বছর হয়ে যাওয়ার পর এখনও শিখলেন না কীভাবে একটি দেশ চালাতে হয়।”

এদিকে তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল ইসমাইল পেকিন এ সম্পর্কে বলেন: “আমি টিআরটি’র মহাপরিচালকের বক্তব্য শুনে হতবাক হয়েছি। ইরানবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নেয়ার অর্থ পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা যদি এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, লেবানন ও দক্ষিণ ককেশাসের সঙ্গে সহযোগিতা থাকতে হবে। আমাদেরকে পরস্পরে মিলে একটি শান্তির বলয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  এজন্য আমাদেরকে শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল থাকতে, মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ স্বার্থ রক্ষা করতে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকতে হবে।”

এখানেই শেষ নয়, টিআরটি’র মহাপরিচালকের বিস্ময়কর বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া এখনও আসছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তুর্কি সরকারের এই শীর্ষ গণমাধ্যম কর্মকর্তা কীভাবে এ ধরনের ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক বক্তব্য দিতে পারলেন? কী এমন ঘটনা ঘটল যে, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে এমন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিলেন? যখন বিশ্ব মুসলিম ও মানবতার দুশমন, কুদস দখলদার ইসরাইল পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে নিজের আগ্রাসী পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের অপরাধযজ্ঞ করে যাচ্ছে এবং গাজা উপত্যকা ও লেবাননের নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে এবং এই অপরাধযজ্ঞ মোকাবিলার একমাত্র উপায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করা তখন টিআরটি’র মহাপরিচালকের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক বক্তব্য ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার মিত্রদের স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া আর কি লক্ষ্য দেয়া হতে পারে? তাহলে কি ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের মাখামাখি সম্পর্ক এতদিন গণমাধ্যমে যতটুকু প্রকাশ হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ? ইসরাইলের জ্বালানি ও ইস্পাতের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি তুরস্ক কি এখন তেল আবিবের গণমাধ্যম সংক্রান্ত চাহিদাও মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তুর্কি সরকারকে এই বিশ্বখ্যাত প্রবাদ বাক্যটি মনে রাখা উচিত: “যে নিজে কাঁচের ঘরে বসবাস করে অন্যের ঘরে ঢিল মারা তার উচিত নয়।” তাদের মতে, তুরস্ক সরকার ও দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের উচিত বুদ্ধিদীপ্ত ও গঠনমূলক নীতি গ্রহণ করে প্রতিবেশী দেশগুলো বিশেষ করে গ্রিস, সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও আর্মেনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার দিকে অগ্রসর হওয়া এবং গোটা অঞ্চলে সংলাপ ও সহযোগিতার পথ বেছে নেয়া।#

পার্সটুডে/এমএমআই/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ