জার্মানির দাবি
'ইহুদিদের ওপর নাৎসীদের জুলুমের কারণে ইসরাইলে আমরা অস্ত্র পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি'
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এই দেশটি গত তিন মাসে ইহুদিবাদী ইসরাইলে প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ ইউরো যা ১০ কোটি ১ লাখ ডলারের সমতুল্য সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে।
গাজায় গণহত্যার সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সত্ত্বেও জার্মান সরকার গত তিন মাসে ইসরাইলে ১০ কোটি ১ লাখ ডলারের বেশি সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। পার্সটুডের মতে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই তথ্যে দেখা যায় যে জার্মান সরকার ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন দিয়ে এই ক্ষেত্রে তার নীতির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এই দেশটি গত তিন মাসে ইসরাইলে প্রায় ১০ কোটি এক লাখ ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। এই পরিসংখ্যানগুলো বামপন্থী দল "বুন্ডেনিস সাহরা ওয়াজেনকনেচট বা (বিএসডব্লিউ)'র এক প্রশ্নের জবাবে প্রকাশ করা হয়েছে। অঙ্কের এই পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ যা গত সপ্তাহে জার্মানির অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই দেশের সংসদের অর্থনৈতিক কমিটির কাছে রিপোর্ট করেছে৷
স্থানীয় প্রতিনিধি ও সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
বিএসডব্লিউ পার্টির প্রতিনিধি সেভিম ডগডেলেন জার্মান সরকারের এই পদক্ষেপকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। স্থানীয় মিডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি জোর বলেন, "ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়ে জার্মান জোট সরকার অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছাকে বিবেচনা করার পরিবর্তে গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধাপরাধে ইন্ধন জোগাচ্ছে।"
জার্মান সরকার সম্প্রতি তেল আবিব থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর ইসরাইলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি আবার শুরু করেছে এই শর্তে যে জার্মানি অস্ত্র ব্যবহারে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করা হবে। মার্চের শুরুতে গাজায় গণহত্যাকে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বার্লিনের বিরুদ্ধে নিকারাগুয়ার মামলার পর জার্মানি ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহে নীতির পক্ষে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাফাই
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বারবক এই বিষয়ে তার সরকারের নীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন যে ইসরাইলে সমস্ত অস্ত্র রপ্তানির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সতর্কতা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী করা হয়েছে। প্যারিসে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, "আমরা প্রতিটি ইস্যু অত্যন্ত যত্ন সহকারে পরীক্ষা করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। তৃতীয় পক্ষের কাছে সামরিক রপ্তানির জন্য বিশেষ নিয়ম রয়েছে যার মধ্যে ইসরাইল রয়েছে।"
জার্মানি দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের একটি প্রধান মিত্র ছিল এবং চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বারবার জার্মানি নাৎসীদের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে ইসরাইলি সরকারের নিরাপত্তার জন্য জার্মানির বিশেষ দায়িত্বের ওপর জোর দিয়েছেন৷ কিন্তু সমালোচকরা বিশ্বাস করেন যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি জার্মানির দ্ব্যর্থহীন সমর্থন বার্লিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং বিশ্ব মঞ্চে দেশটিকে আরো একঘরে করে ফেলেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক হামলার শুরু থেক ৪৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে এবং এক লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু। ইসরাইল বর্তমানে গাজায় গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি মামলার মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার অভাবের মতো ভয়ানক পরিস্থিতিতে বসবাস করে চলেছে।
পার্সটুডে/এমবিএ/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।