মার্কিন সহায়তার অবসান; স্বাধীন সেনাবাহিনী এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা শিল্প চায় ইউরোপ
-
মার্কিন সহায়তার অবসান; ইউরোপ স্বাধীন সেনাবাহিনী এবং সমন্বিত প্রতিরক্ষা শিল্প চায়
পার্সটুডে-জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ঘোষণা করেছে, যদিও ইউরোপের ব্যাপক প্রতিরক্ষা বিনিয়োগের প্রয়োজন,তবু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামরিক ও নিরাপত্তা সহায়তা প্রত্যাহার ইউরোপের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং স্বাধীন প্রতিরক্ষা খাত তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে তারা সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারবে।
বার্তা সংস্থা ইরনা'র উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আমেরিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ইউরোপের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার বিষয়টিকে উজ্জীবিত করবে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক গতিশীলতা এবং ট্রাম্পের নয়া প্রশাসন পদ্ধতির প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ পেতে যাচ্ছে।
ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক সভাপতি মারিও দ্রাঘি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপীয় অর্থনীতির কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিলেন।
ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি ইউরোপের ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতার অক্ষ এবং প্রাণ হিসাবে বিবেচিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে বলা হয়েছে-সামরিক প্রতিরক্ষা খাতে সমন্বয় ও সংহতির অভাব। এই সমন্বয়হীনতার ফলে ইউরোপ তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করছে।
বর্তমানে, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের সামরিক সরঞ্জামের ৭৮ শতাংশ ক্রয় করে বিদেশী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে। ওই পরিমাণের মধ্যে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো ৬৩ শতাংশ সরবরাহ করে।
দ্রাঘির প্রতিবেদনে ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সম্প্রসারণের জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ইইউ সরকারগুলোর আর্থিক মডেলে মৌলিক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল বা আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি যাই হোক না কেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সাবেক ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেন যে ইউরোপের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় অতিরিক্ত ৫০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ প্রয়োজন।
ঘাটতি মোকাবেলায় দ্রাঘি মহাদেশের দেশগুলোর কাছ থেকে বৃহত্তর ইইউ একীকরণ এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসাথে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য 'ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থা' নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরিরও প্রস্তাব করেছেন। সাবেক ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন যে, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয়ের ন্যাটোর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে হবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপে আরও স্বাধীন প্রতিরক্ষা খাতের দিকে পদক্ষেপের ফলে ইউরোপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে না, তবে এটি একটি প্রয়োজনীয় এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন। দ্রাঘি বিশ্বাস করেন যে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখার জন্য, ইউরোপের উচিত তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্ শক্তিশালী করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
প্রতিবেদনের চূড়ান্ত অংশে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা একীকরণের পথ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প কৌশল ২০২৪ এবং ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প কর্মসূচির (EDIP) মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন পুরো মহাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের ভবিষ্যত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য দুটি মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রথমত, এই সত্যটি বোঝা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো একই স্তরের সামরিক সহায়তা প্রদান করবে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা না করা হলে ইউরোপ তাদের ঐতিহাসিক প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ইউরোপে আরও স্থিতিস্থাপক, প্রতিযোগিতামূলক এবং স্বাধীন সামরিক বা প্রতিরক্ষা খাত তৈরির জন্য এই পরিবর্তনগুলো খুবই প্রয়োজনীয়।#
পার্সটুডে/এনএম/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।