গাজায় বাহিনী গঠনের মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধীতায় কেন চীন-রাশিয়া?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154060-গাজায়_বাহিনী_গঠনের_মার্কিন_প্রস্তাবের_বিরোধীতায়_কেন_চীন_রাশিয়া
পার্সটুডে-গাজা নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে চীন ও রাশিয়া।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ১৫, ২০২৫ ১৭:০০ Asia/Dhaka
  • গাজায় বাহিনী গঠনের মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধীতায় কেন চীন-রাশিয়া?

পার্সটুডে-গাজা নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে চীন ও রাশিয়া।

পার্সটুডে অনুসারে,গাজা নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবিত প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে জমা দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়া ও চীন খসড়া থেকে "শান্তি কমিশন" সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। মস্কো ও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে সংশোধিত সংস্করণের প্রতি তাদের আপত্তি জানিয়েছে।

১৪ নভেম্বর শুক্রবার রাশিয়া ও চীন গাজা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবের সংশোধিত সংস্করণের প্রতি তাদের আনুষ্ঠানিক আপত্তি ঘোষণা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জমা দেওয়া খসড়াটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ও গাজা পুনর্গঠনের ২০-দফা পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ এই অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংশোধিত খসড়াটিতে প্রাথমিক সমালোচনার জবাবে ছোটখাটো পরিবর্তন আনা হয়েছে, তবে গাজা পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী "শান্তি কমিশন" গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই সংস্থাটি শান্তি বাহিনীর তত্ত্বাবধান করবে এবং গাজার সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ, ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, মিশর ও ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার সাথে সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

রাশিয়া এবং চীন, ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে, খসড়ার মূলনীতি থেকে "শান্তি কমিশন" সম্পূর্ণরূপে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে। এই দুই দেশের কূটনীতিকরা অর্ধেকেরও বেশি অংশকে "অপর্যাপ্ত", "অস্পষ্ট" বা "প্রয়োজনীয় বিবরণের অভাব" বলে বর্ণনা করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে শান্তি বাহিনী কেবল নিরাপত্তা পরিষদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করা উচিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এমন একটি অ্যাডহক সংস্থা হিসাবে নয়।

দুটি দেশ গাজায় যেকোনো বিদেশী শক্তির উপর জাতিসংঘের পূর্ণ তত্ত্বাবধানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের একটি স্পষ্ট পথসহ ফিলিস্তিনি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য খসড়াটিকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করে। রাশিয়া এবং চীন সতর্ক করেছে যে তারা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই খসড়াটিতে ভেটো দেবে।

চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণ:

১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ

মার্কিন প্রস্তাবিত প্রস্তাবে গাজা পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী "শান্তি কমিশন" প্রতিষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই কমিশন গাজার সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ, ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, মিশর ও ইসরায়েলের সাথে সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের মতো কাজগুলো গ্রহণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন ও রাশিয়া বিশ্বাস করে যে এই ধরনের কমিশন সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি প্রভাবের অধীনে আসতে পারে এবং কার্যকরভাবে এই অঞ্চলে তাদের স্বার্থ স্থিতিশীল করার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

২. ফিলিস্তিনিদের ভূমিকা নির্মূল করা

খসড়া লেখায় গাজার ক্রান্তিকালীন সময়কাল পরিচালনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনও ভূমিকা নেই। চীনা ও রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এর অর্থ ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে উপেক্ষা করা এবং পরিকল্পনার রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

৩. নিরাপত্তা পরিষদকে দুর্বল করা

রাশিয়ান ও চীনা কূটনীতিকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে আন্তর্জাতিক বাহিনী কেবল নিরাপত্তা পরিষদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করা উচিত, একটি অ্যাডহক কমিশন হিসেবে নয়। তারা অর্ধেকেরও বেশি লেখা "অস্পষ্ট এবং বিস্তারিত বিবরণের অভাব" বলে উল্লেখ করেছে এবং বিশ্বাস করে যে এই পরিকল্পনাটি নিরাপত্তা পরিষদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।

৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা

চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটেও বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুটি দেশ বিশ্বের সংবেদনশীল অঞ্চলে, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ায় ওয়াশিংটনের প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করেছে। গাজায় মার্কিন পরিকল্পনার বিরোধিতা এই সামষ্টিক নীতির অংশ।

চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার পরিণতি:

১. আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্যের ব্যর্থতা

এই বিরোধিতা নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে বাধা দেয়। ফলস্বরূপ, যুদ্ধবিরতি এবং গাজার পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত এবং জটিল হয়ে পড়ে।

২. আরব দেশগুলির ক্রমবর্ধমান ভূমিকা

চীন ও রাশিয়া, কিছু আরব দেশসহ তাদের বিরোধিতা নিবন্ধন করেছে। এই ঐক্য ইঙ্গিত দেয় যে আরব রাষ্ট্রগুলি গাজার প্রশাসনে মার্কিন প্রভাবের প্রতিও সংবেদনশীল এবং ভবিষ্যতে আলোচনায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে আলজেরিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ আরব রাষ্ট্রগুলি গাজার প্রশাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন ভূমিকার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘোষণা করেছে যে তারা একটি স্পষ্ট কাঠামো ছাড়া স্থিতিশীলকরণ বাহিনীতে অংশগ্রহণ করবে না। পাকিস্তান এবং জর্ডানও যেকোনো প্রস্তাবে রাষ্ট্র গঠন সহ ফিলিস্তিনি অধিকারের স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়েছে। জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জোর দিয়ে বলেছেন যে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ আকর্ষণ করার জন্য এই বাহিনীকে "শান্তি রক্ষা" এর উপর মনোনিবেশ করা উচিত, "বাস্তবায়ন" এর উপর নয়।

৩. অব্যাহত মানবিক সংকট

শান্তি প্রতিনিধিদলের বিষয়ে চুক্তির অভাবের অর্থ হল গাজায় মানবিক সহায়তা এবং পুনর্গঠন সহজতর করার জন্য একটি স্পষ্ট ব্যবস্থার অভাব। এটি এই অঞ্চলে মানবিক সংকটকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।

৪. পূর্ব-পশ্চিমের গভীরতর বিভাজন

বিরোধীরা আবারও নিরাপত্তা পরিষদে পশ্চিমা এবং পূর্ব শক্তির মধ্যে বিভাজন প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা গাজা সংকটের সরাসরি ব্যবস্থাপনা খুঁজছে, চীন এবং রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের স্বাধীন ভূমিকা এবং ফিলিস্তিনি অধিকার বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছে। এই ব্যবধান পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

উপসংহার

গাজায় মার্কিন প্রস্তাবিত প্রস্তাবের প্রতি চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতা ওয়াশিংটন ও ইসরায়েলের প্রভাব, ফিলিস্তিনি ভূমিকার অবসান এবং নিরাপত্তা পরিষদের দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই উদ্ভূত। এই বিরোধিতা তথাকথিত শান্তি প্রক্রিয়া এবং গাজার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এই পদক্ষেপের পরিণতি আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের ব্যর্থতা, মানবিক সংকট অব্যাহত থাকা এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার তীব্রতা বৃদ্ধির মতো। পরিশেষে, এই বিরোধিতা দেখায় যে গাজার ভবিষ্যৎ কেবল অভ্যন্তরীণ ফিলিস্তিনি চুক্তির সাথেই নয়, বরং বিশ্ব শক্তির প্রতিযোগিতার সাথেও জড়িত।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।