'নোবেল শান্তি পুরস্কার' ভেনেজুয়েলায় ওয়াশিংটনের যুদ্ধের হাতিয়ার
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154656-'নোবেল_শান্তি_পুরস্কার'_ভেনেজুয়েলায়_ওয়াশিংটনের_যুদ্ধের_হাতিয়ার
পার্সটুডে: ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর ভেনেজুয়েলার বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করার কিছুদিন পরই ট্রাম্প প্রশাসন কারাকাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও গোপনে আক্রমণাত্মক  সামরিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
(last modified 2025-12-02T12:50:01+00:00 )
ডিসেম্বর ০২, ২০২৫ ১৮:৩৩ Asia/Dhaka
  • মারিয়া কোরিনা মাচাদো ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
    মারিয়া কোরিনা মাচাদো ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

পার্সটুডে: ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর ভেনেজুয়েলার বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করার কিছুদিন পরই ট্রাম্প প্রশাসন কারাকাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও গোপনে আক্রমণাত্মক  সামরিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

‘মিডল ইস্ট আই’-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলায় ক্ষমতায় থাকা নিকোলাস মাদুরো, সবসময়ই ভেনেজুয়েলার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আধিপত্য কায়েমের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এবং একই সঙ্গে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপমূলক নীতি ও গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার নিন্দা করেছেন। বিপরীতে মাচাদোর অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন—তিনি প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা সমর্থন করেছেন এবং ভেনেজুয়েলায় বিদেশি হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এমন একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় নোবেল কমিটি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এর আগে হেনরি কিসিঞ্জারের মতো সমালোচিত রাজনীতিক পুরস্কার পেয়েছেন, কিন্তু মহাত্মা গান্ধির মতো বিশ্বশান্তির প্রতীক কখনো পাননি। অনেকের মতে, এসব উদাহরণ প্রমাণ করে যে, নোবেল পুরস্কার দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা শক্তির রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই পুরস্কারের ইতিহাসের দিকে তাকালেও একই চিত্র ফুটে ওঠে:

  • ১৯১৮ সালে রসায়নে পুরস্কার দেওয়া হয় ফ্রিটজ হাবারকে– যিনি বিষাক্ত গ্যাস আবিষ্কার করেছিলেন।
  • ১৯২৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কার পান ইয়োহানেস ফিবিগার– যিনি এমন একটি ক্যান্সার আবিষ্কারের দাবি করেছিলেন যা পরে প্রমাণিত হয় অস্তিত্বহীন।
  • ১৯৪৯ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কার দেওয়া হয় আন্তোনিও এগাস মোনিজকে– যিনি ধ্বংসাত্মক 'লোবোটমি' পদ্ধতির উদ্ভাবক।
  • ২০০৮ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পুরস্কার পান এমন একজন যার গবেষণা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির অর্থায়নে সম্পন্ন হয়েছিল।

এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে, নোবেল পুরস্কার কখনোই বৈজ্ঞানিক বা নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড ছিল না; বরং প্রায়শই এটি পশ্চিমা ক্ষমতা ও স্বার্থ সুসংহত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফরাসি বিখ্যাত লেখক জাঁ-পল সার্ত্র যখন সাহিত্যে নোবেল পান, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, "তোমাদের পুরস্কার নিয়ে চলে যাও।”

এই পুরস্কারের মূলে রয়েছে আলফ্রেদ নোবেলের উইল (ইচ্ছাপত্র); যিনি বিস্ফোরক আবিষ্কার করে 'মৃত্যুর ব্যবসায়ী' উপাধি পেয়েছিলেন এবং পরে এই পুরস্কারের মাধ্যমে নিজের জন্য একটি ইতিবাচক উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আজ এই উত্তরাধিকার শান্তি ও অগ্রগতির প্রতীকের চেয়ে বরং পশ্চিমা ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

বাস্তবতা এই যে, বিশ্ব এক গভীর নৈতিক ও অস্তিত্বগত সংকটে নিমজ্জিত। নোবেল পুরস্কার এই সংকটের সমাধান নয়, বরং তারই লক্ষণ। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের সম্মান জানানোর পরিবর্তে আমাদের উচিত গাজা, সুদান, ভেনেজুয়েলা ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে নিরীহ শিকারদের জন্য শোক পালন করা– যারা পশ্চিমা সামরিকতাবাদের বিস্তারের শিকার।

আজকের নোবেল মানবতার প্রতীকের চেয়ে বরং পশ্চিমের সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক আবরণ, যা বর্তমান ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এবং অবিরাম সহিংসতাকে ন্যায্যতা দিতে ব্যবহৃত হয়।#

পার্সটুডে/এমএআর/২