সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬ ০১:৪২ Asia/Dhaka
  • সৌদিতে হজযাত্রীর 'নিরাপত্তায়' আবারও ইসরাইলি কোম্পানি নিয়োগ!:রিপোর্ট

সম্প্রতি আলকুদস বার্তা সংস্থা ও মিশরের দৈনিক আলআহরাম  ইসরাইলি রেডিও’র বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সৌদি সরকার হজ মওসুমে পবিত্র কাবা ঘরের মেহমান তথা হজযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে দখলদার ইসরাইলের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে এই সহযোগিতার চুক্তি ২০১০ সালে শুরু হয় এবং ওই চুক্তি এখনও বহাল রয়েছে। সৌদি সরকার সব সময়ই এ ধরনের চুক্তির খবর অস্বীকার করে এসেছে অথবা সেসব গোপন রেখেছে।

দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা করে মুসলিম উম্মাহর পিঠে ছুরি মারার কাজ সৌদি সরকার অতীতেও বহুবার করেছে।

কায়রোস্থ সৌদি দূতাবাস আল-আহরাম পত্রিকার এই খবর অস্বীকার করলেও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি সরকারের ঘনিষ্ঠতা এতোটাই বাড়ছে যে বিশ্বের নানা অঞ্চলে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌদি জেনারেল থেকে শুরু করে দেশটির প্রিন্স বা শাহজাদাদের প্রকাশ্য  সাক্ষাৎ ও এ সংক্রান্ত সফরের খবর অস্বীকার করা রিয়াদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।  

ইসরাইলের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা জেনারেল ডোর গোল্ডের সঙ্গে সৌদি জেনারেল আনোয়ার এশকি 

দৈনিক আলআহরাম ইসরাইলি রেডিওর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘জি-ফোর এস’ নামের ইসরাইলি কোম্পানি সৌদি বিমানবন্দরে হজযাত্রীদের অবতরণের সময় থেকে শুরু করে সৌদি আরব থেকে বের হওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত হাজিদের ওপর নজরদারি ও তাদের নিরাপত্তা বিধান করবে হাতে ঘড়ির মত লাগিয়ে রাখা একটি ইলেকট্রনিক চেইনের মাধ্যমে। পানি ও আঘাত প্রতিরোধে সক্ষম এই চেইন ‘জিপিএস’-এর মাধ্যমে ইসরাইলি ওই কোম্পানির কেন্দ্রীয় কমান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। 

জেরুজালেমে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনোয়ার এশকি (সাবেক সৌদি জেনারেল)

সৌদি দৈনিক ‘ওকাজ’সহ দেশটির গণমাধ্যম এ ধরনের পদক্ষেপকে হজযাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষার সহজ উপায় বলে অভিহিত করেছে এবং সৌদি সরকারের এ জাতীয় পদক্ষেপের ফলে মিনা ট্র্যাজেডির মত ঘটনাগুলো ঠেকানো সম্ভব হবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

প্রশ্ন হল এ জাতীয় কোনো ব্যবস্থা কি মুসলিম কোনো দেশের কোনো কোম্পানিকে দিয়ে করা সম্ভব হত না? কারণ, ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদিবাদীদের শত্রুতা সর্বজনবিদিত বিষয়।পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে, মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতার ক্ষেত্রে ইহুদিরাই সবচেয়ে কঠোর। প্রতিদিন যখন ফিলিস্তিনিদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে দখলদার ইহুদিবাদী সেনাদের হাত এবং নারী  ও  শিশুসহ লাখ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনি আর আরব মুসলমান হত্যাকারী ইসরাইলি নিরাপত্তা কোম্পানিই যে গত ৫ বছরে সৌদি আরবে হাজি হত্যার ঘটনাগুলোয় জড়িত নয় তা কে বলবে?

সৌদি সরকার গত বছরের মিনা ট্র্যাজেডির তদন্ত শুরু করার কথা ঘোষণা করলেও আজ পর্যন্ত ওই তদন্তের ফলাফল ঘোষণা করেনি।

অনেক সমালোচক বলছেন যে সরকার সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সন্ত্রাসী তৎপরতা ও গণহত্যায় ব্যস্ত সে সরকার হারামাইন শরিফাইনের খাদেম হওয়ার দাবিদার হলেও মিনা ট্র্যাজেডির তদন্ত করার সময় পাচ্ছে না!

  মিউনিখে সাবেক সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স  তুর্কি ও  সাবেক ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে  ইয়ালুনের উষ্ণ করমর্দন

‘জি ফোর এস’ হচ্ছে এমন এক কোম্পানি যার বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক ইহুদিবাদীরা। এতে ব্রিটিশদেরও কিছু শেয়ার রয়েছে। বহু বছর ধরে এই কোম্পানি সৌদি আরবে হাজিদের নিরাপত্তা দেখার কাজ করছে সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায়। গত বছরের মিনা ট্র্যাজেডির পর ও চলতি বছরে এই কোম্পানির কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে এবং কোম্পানিটি এখন হজযাত্রীদের হাতে ইলেকট্রনিক চেইন লাগানোর দায়িত্ব পেয়েছে!

‘জি ফোর এস’ ইসরাইলি আটক-কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার নানা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে এসেছে। ফিলিস্তিনিদের বন্দি রাখার জন্য পশ্চিমতীরসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনে নানা কারাগার তৈরি করেও ইসরাইলকে সেবা দিয়েছে এই কোম্পানি।  ইসরাইলি পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীকেও নানা ধরনের নিরাপত্তা-সেবা এবং সিস্টেম সরবরাহ করেছে এই কোম্পানি।

মুসলমানদের প্রথম কিবলার পবিত্র শহর বায়তুল মুকাদ্দাসের ইসলামী উচ্চ পরিষদের সাবেক অভিভাবক ও আল-আকসা মসজিদের সাবেক ইমাম শেইখ আকরামা সাবেরি সৌদি আরবে ‘জি ফোর এস’ কোম্পানিকে তৎপরতা চালাতে দেয়ার বিরোধিতা করেছেন ইসরাইলের নিরাপত্তা খাতে এই কোম্পানির ব্যাপক অবদানের প্রেক্ষাপটে। হজের কাজে ইসরাইলের শরিক, সেবক ও ইহুদিবাদী কোনো কোম্পানিকে ব্যবহার করা তিনি হারাম তথা অবৈধ বলেও ঘোষণা করেছেন।

ইসরাইলি রাবাই (পুরোহিত) ড্যাভিড রোজেনের সঙ্গে সাবেক সৌদি রাজা আবদুল্লাহ

দখলদার শক্তির সেবকও দখলদার ও একই অপরাধের শরিক হিসেবে বিবেচিত হয় ঠিক যেভাবে আগ্রাসী শক্তির সাহায্যকারীরাও আগ্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হয়।  

‘জি ফোর এস’ ইসরাইল-সেবক কোম্পানি হওয়ায় ইউরোপের অনেক দেশে এবং বিশ্বের নানা অঞ্চলে এ কোম্পানির ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমাদের সেবাদাস আরব সরকারগুলোর ভূখণ্ডে অবাধে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এই ইহুদিবাদী কোম্পানি।

১৬টি আরব দেশে সক্রিয় ‘জি ফোর এস’ কোম্পানি ২০১৩ সালে আরব দেশগুলো থেকে আয় করে ৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ইসরাইলের অর্থনৈতিক বিষয়ক পত্রিকা ‘গ্লোবস’ও আরব বিশ্বে ‘জি ফোর এস’ কোম্পানির তৎপরতা ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধির খবর দিয়েছে।

একজন সাবেক ইসরাইলি জেনারেলের সঙ্গে সৌদি প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সাল 

এই কোম্পানির নানা শাখা কাজ করছে জেদ্দা, তায়েফ ও রিয়াদসহ সৌদি আরবের নানা শহরে। দুবাই বিমানবন্দরসহ পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর নানা অঞ্চলেও সক্রিয় রয়েছে ‘জি ফোর এস’ ।

পবিত্রতম শহর মক্কা ও মদিনা যে দেশে রয়েছে সে দেশে এমন একটি কোম্পানির পদচারণা কেবল যে কলঙ্কজনক তাই নয়, মুসলমানদের বৃহত্তম সামষ্টিক ইবাদত হজের নিরাপত্তার সঙ্গে এমন একটি কোম্পানিকে জড়িত করা ও কোম্পানিটিকে ইসরাইলের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির সুযোগ করে দেয়া মুসলমানদের প্রতি অত্যন্ত বড় ধরনের উপহাসও বটে। মুসলিম বিশ্বের জনগণ ও নেতৃবৃন্দকে এই অতি বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। # 

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/১১



 

 

 

              





 

 

 

ট্যাগ