আজ মিনা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বার্ষিকী: সৌদি শাসকরা কি বিচারের ঊর্ধ্বে?
(last modified Fri, 01 Sep 2017 14:52:57 GMT )
সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৭ ২০:৫২ Asia/Dhaka
  • আজ মিনা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বার্ষিকী: সৌদি শাসকরা কি বিচারের ঊর্ধ্বে?

আজ পবিত্র দশই জিলহজ। হৃদয়-বিদারক মিনা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বার্ষিকী। বিশ্বের বহু মুসলমানের ঈদ এ দিনে হয়ে পড়ে গভীর শোকে শোকাচ্ছন্ন।

দুই বছর আগে এই দিনে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রী যখন হজের চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা পালনের অংশ হিসেবে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভগুলোতে কঙ্কর বা পাথরের টুকরো নিক্ষেপের জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করে এই বিশেষ এলাকাগামী একটি বিশেষ সড়ক ছাড়া অন্য সব সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ২০৪ নম্বর সড়কে হজযাত্রীদের ভিড় অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায় এবং এক  পর্যায়ে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে শহীদ হন ৪২ টি দেশের নারী ও পুরুষসহ সাত হাজারেরও বেশি হজযাত্রী যাদের মধ্যে ৪৬৪ জন ছিলেন ইরানি নাগরিক।

বলা হয় যে বর্তমান সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানকে বহনকারী গাড়ি ও তার রক্ষীদের গাড়ি বহর হঠাৎ ট্রাফিক আইন অমান্য করে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভগামী দুই সমান্তরাল পথের একটি পথের মধ্যে খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকায় হজযাত্রীরা অন্য পথটির দিকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে শুরু করেন। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে বের হওয়ার পথ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ থাকায় দেখা দেয় অস্বাভাবিক ভিড় ও পদদলনের মর্মান্তিক ঘটনা। 

এ ছাড়াও সৌদি নিরাপত্তা রক্ষীরা নীরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে থাকায় ও আহত হজযাত্রীদের উদ্ধারের এবং সময়মত সেবার ও চিকিৎসার উদ্যোগ না নেয়ায় বিপুল সংখ্যক হজযাত্রী আহত অবস্থায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পিপাসার্ত অবস্থায় মারা যান। এমনকি অর্ধমৃত বা আহত অনেক হজযাত্রীকে মৃত লাশের সঙ্গে একত্র করে ময়লার গাড়িতে চড়িয়ে মাটির নীচে দাফন করার ফলেও হজযাত্রীদের প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা জানিয়েছেন। 

ইরান ছাড়া অন্য যে কয়েকটি দেশের বহু সংখ্যক হাজি প্রাণ হারান সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, মালি, মিশর, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। 

সৌদি ওয়াহাবি রাজতান্ত্রিক সরকার ১৯২৫ সালে হিজাজে জবরদখল কায়েমের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের সুন্নিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যার দায় এড়ানোর মতো এই হত্যাযজ্ঞের দায়-দায়িত্বও স্বীকার করেনি। বরং সৌদি রাজা সালমান তার ভাষায় তৎকালীন যুবরাজ নায়েফের 'ভালো হজ-ব্যবস্থাপনার' জন্য তাকে অভিনন্দন জানান। 

সৌদি সরকার মিনার সড়কগুলোতে বসানো বহু সংখ্যক ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরা বা সিসি-টিভির ক্যামেরাগুলোর রেকর্ড দেখানোর দাবিও অস্বীকার করে আসছে।

সৌদি দরবারি আলেমরাও ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, মিনার ট্র্যাজেডি একটি দৈব-দুর্ঘটনা মাত্র এবং এর দায়-দায়িত্ব কেবল আল্লাহর ওপরই বর্তায়। 

উল্লেখ্য একই বছরে হজ মওসুম শুরুর প্রাক্কালে কাবা ঘরের পাশে মসজিদুল হারামের একটি আঙ্গিনায় ক্রেন ধসে পড়ার এক ঘটনায় ১০০ জনেরও বেশি হজযাত্রী শহীদ হন। এ ঘটনায়ও দশজন ইরানি হাজি শাহাদাত বরণ করেছিলেন।

সৌদি সরকার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র মাধ্যমে মিনার ঘটনার নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবি নাকচ করে আসছে যদিও বিশ্বের মুসলমানরা মনে করেন যে মক্কা ও মদিনার মতো পবিত্র স্থানগুলোর তৎপরতা আন্তর্জাতিক ইসলামী কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত এবং সেখানে ওয়াহাবি গোষ্ঠীর দখলদারিত্বেরও অবসান ঘটানো উচিত। #    

পার্সটুডে/এমএএইচ/১     

ট্যাগ