নভেম্বর ২২, ২০২১ ১৮:৪৭ Asia/Dhaka

আজকের আসরে তারই ধারাবাহিকতায় আরো কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, সিস্তানীরা ইরানের মূল অধিবাসী এবং আর্য বংশীয়।

সিস্তানী কিংবা যাবুলী ভাষা ইরানের শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগুলোর অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীন ফার্সী ভাষার বিখ্যাত যে সাতটি লাহজে অর্থাৎ উচ্চারণভঙ্গি বা ডায়ালেক্ট ছিল, সিস্তানী ভাষা ছিল তাদের একটি। যাই হোক আজও তাহলে আমরা সিস্তানেই ঘুরে বেড়াবো। এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আরও একটু পরিচিত হবার চেষ্টা করবো।

সিস্তানের জনগণ বিয়েকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যে তাদের বিশেষ কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি সিস্তানের মহিলারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মতৎপর। ঘরকন্নার বাইরে শিশু প্রতিপালন তো রয়েছেই, এমনকি কৃষিকাজ এবং পশুপালনের ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। সিস্তানি সমাজে তাই নারীদের বেশ সম্মান রয়েছে। সিস্তানী জনগণের মাঝে তালাক বিষয়টি বেশ ঘৃণিত। ব্যতিক্রম ছাড়া তালাকের ঘটনা এই সমাজে খুবই কম। সিস্তানে আবহাওয়াগত বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। প্রদেশের উত্তরের হামুন হ্রদ এবং সিস্তান অঞ্চলে সারাবছর জুড়েই ভ্রমণপিপাসু এবং সৌখিন শিকারীরা যাওয়া-আসা করে। হ্রদের মাঝখানে একটা ছোট্ট পাহাড় আছে। পাহাড়টির নাম হলো খাজা পাহাড়। এই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিরাজ করে , তা যে-কোনো মানুষকেই মুগ্ধ করবে।

এখানে আরো একটি মজার জিনিস রয়েছে। জিনিসটি অনেকটা নৌকার মতো। এটি সিস্তানের একান্তই নিজস্ব মানে স্থানীয় এক ধরনের নৌকা। এর নাম হলো তুতান। হামুন হ্রদের বিশেষ বাঁশ দিয়ে এই বিশেষ ধরনের নৌকা তৈরী করা হয়। সিস্তান ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ এই তুতান চালানো। 'পোড়াশহর' এখানকার আরেকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। সিস্তান থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে প্রাদেশিক মূল শহর যাহেদানের দিকে যেতে পোড়াশহরটি পড়ে। পোড়াশহরটি খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ থেকে ২২০০ সাল পর্যন্ত সিস্তানের রাজধানী ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালে এটি ছিল বিশ্বের সবচে বড়ো শহর এবং তৎকালীন প্রাচ্য সভ্যতার কেন্দ্র।

এখানকার কিছু কিছু নিদর্শন এখনো অক্ষুন্ন রয়েছে। এই এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে কিছু স্থাপত্য নিদর্শন এবং চতুর্ভূজ আকৃতির কিছু ভবনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এগুলো ছয় থেকে দশ রুম বিশিষ্ট। রুমগুলো অবশ্য পৃথক পৃথক। ছোট ছোট দেয়াল দিয়ে একটি রুমকে অপরটি থেকে আলাদা করা হয়েছে। এছাড়া দরোজা-জানালা, সিঁড়ি, ইট তৈরীর চুল্লি, নকশা করা মাটির পাত্র, কাঠ-পাথর এবং স্টিলের বিচিত্র সামগ্রীও পোড়াশহর খনন করে পাওয়া গেছে।
যাবুলের আরেকটি প্রাচীন নিদর্শন হলো সাম দূর্গ। এই দূর্গটি যাহেদান থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরত্বে যাবুলের দিকে যেতে পড়ে। দূর্গটির আকৃতি বিসমবাহু চতুর্ভূজের মতো বলে দেখতে খুব একটা সুন্দর বলা যাবে না।

কেল্লাটির দৈর্ঘ পুব থেকে পশ্চিমে ৩৮৬ মিটার এবং দক্ষিণ থেকে উত্তরে ২৯৬ মিটার। দূর্গটির দুইটি গেইট, একটি উত্তরে আরেকটি দক্ষিণে। উভয় গেইটেই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আছে। কেল্লায় অবশ্য ৩৬টির মতো টাওয়ার আছে। এগুলোর মধ্যে ৯টি বেশ বড়ো, বাকিগুলো ছোট ছোট। সাম কেল্লাটি পার্থিয়ান রাজবংশের শাসনামলে তৈরী। খাজা পাহাড় এবং তার উপরে আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষ সিস্তান অঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই পাহাড়টি একটি দ্বীপের মতো হামুন হ্রদের মাঝখানে অবস্থিত। পাহাড়ের ওপরে অগ্নিমণ্ডপ এবং বড়ো বড়ো কক্ষ অনেকগুলো ভবন দেখতে পাওয়া যায়। এসব ভবনে প্রাচীন প্লাস্টারিং এর কারুকাজ, দেয়ালচিত্র ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।

ঐতিহাসিক ভবন এবং ভবনের প্রাচীন প্লাস্টারিং এর কারুকাজ, দেয়ালচিত্র ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছিলাম বিরতির আগে। অগ্নিমণ্ডপের স্থাপত্যকাল খ্রিষ্টিয় প্রথম শতাব্দীর বলে মনে করা হয়। আর আশপাশের ধ্বংসাবশেষগুলোকে আশকানী এবং সাসানী যুগের বলে ধরা হয়। ঐতিহাসিক এসব নিদর্শনের বাইরে যে জিনিসটি সিস্তানের একান্ত নিজস্ব সম্পদ বলে বিবেচিত, তাহলো এখানকার স্থানীয় গণসঙ্গীত। এসব সঙ্গীত সিস্তানের স্থানীয় কবিদের নিজস্ব রচনা। শহর কিংবা গ্রামের জনগণের মাঝে এগুলোর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এসব গান সুন্দর তো বটেই, এছাড়াও যেগুণটির কারণে এই গণসঙ্গীতগুলোর এতো মর্যাদা, তাহলো এসব গানের অন্তর্নিহিত তথ্য।

গানের কথায় তৎকালীন জনজীবনের চিত্র, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি ফুটে উঠেছে খুব সুন্দরভাবে। ফলে প্রতিটি গানই যেন তৎকালীন ইতিহাসের প্রামাণ্য তথ্য। সহজ-সরল এই গানগুলোর সংখ্যা এতো বেশি যে, এ আসরে সেগুলোর উল্লেখ সম্ভব নয়। গানের ভেতরে সিস্তানের নদী-প্রকৃতি-শহর-গ্রাম প্রভৃতির নামেরও বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন হিরমান্দ নদী। প্রাণসঞ্জীবনী প্রবহমান এই নদীর কথা যেমন সঙ্গীতে আছে , তেমনি আছে জনগণের বিভিন্ন পেশার কথাও।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ