নভেম্বর ২৯, ২০২১ ১৬:৩৬ Asia/Dhaka

বেলুচিস্তানের আয়তন এক লাখ তিয়াত্তর হাজার বর্গকিলোমিটার। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তের শেষ সীমানা নির্ধারিত হয়েছে এই প্রদেশের মাধ্যমে।

বেলুচিস্তানের উত্তর প্রান্ত মিলেছে সিস্তান এবং আফগানিস্থানের সাথে। পূর্ব প্রান্ত মিলেছে পাকিস্তানের সাথে। এর দক্ষিণে হলো ওমান সাগর আর পশ্চিমে কেরমান প্রদেশ। দক্ষিণ, পূর্ব ও কেন্দ্রীয় ইরান জুড়ে বিস্তৃত পর্বতমালা বেলুচিস্তানের সাথে গিয়ে মিশেছে। যার ফলে বেলুচিস্তান অঞ্চলটি বেশ উঁচু। বেলুচিস্তানের উঁচু এলাকাগুলোর মধ্যে জাবালে পীরশুরান পর্বতমালা,মালেক সিয়কূহ, মিরজাভে কূহ, তাফতান পর্বতমালা এবং বাযমান পর্বতমালার নাম করা যায়।

ওমান সাগরের সাথে দূরত্ব ভেদে এবং আঞ্চলিক উচ্চতার তারতম্যের কারণে বেলুচিস্তানের আবহাওয়ায় ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এলাকার এই আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য কিংবা বৈপরীত্য সত্যিই বিস্ময়কর। আবহাওয়াগত বৈচিত্র্যের দিক থেকে বেলুচিস্তানকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক, শুষ্ক আবহাওয়াময় অঞ্চল। এই ভাগে পড়বে তাফতান পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চল। এখানে আবহাওয়া মোটামুটি নাতিশীতোষ্ণ। কারণ এ এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো ঝর্ণা। দুই, দিবারাত্রির আবহাওয়াগত ব্যাপক তারতম্যপূর্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। এই শ্রেণীতে পড়বে যাহেদান, খশ এবং এই দুই শহরের মধ্যবর্তী গ্রামগুলো।
তিন, দিবারাত্র ব্যাপক তপ্ত আবহাওয়াময় অঞ্চল। ইরানশহর থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিকের এলাকাগুলো এই শ্রেণীভুক্ত। চার, সমুদ্র উপকুলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ এবং আর্দ্র। তীস , চ'বাহর এবং কোনার্ক বন্দরগুলো এই শ্রেণীভুক্ত।

বেলুচিস্তান ইরানের উর্বর এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে পানির স্বল্পতার কারণে এখানকার সব এলাকা কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। আবহাওয়াগত তারতম্যের কারণে মোটামুটি সবধরনের শস্যই এখানে উৎপন্ন হয়। সুমাত্রা দ্বীপের রবার গাছের মতো এমনকি বাংলাদেশী আমগাছ-ডুমুরগাছের মতো বড়ো বড়ো গাছও এখানে দেখতে পাওয়া যায়। এসব ছাড়াও বিভিন্ন ফসল যেমন গম, যব, চাউল ইত্যাদিও এখানে উৎপন্ন হয়। তবে বাগানে উৎপন্ন ফল-ফলাদির মধ্যে রয়েছে খুরমা খেজুর, কলা, আম, নারিকেল, যেইতুন এবং কমলা জাতীয় সব ধরনের ফল। 
বেলুচিস্তান লুত মরুভূমির পাশে হওয়ায় এখানে বায়ুপ্রবাহ প্রায় সবসময় বেশি থাকে। তবে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলে বাতাসের উষ্ণতা এবং আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে-কমে।

বেলুচিস্তানের বায়ুপ্রবাহ প্রায় সবসময় বেশি থাকে। তবে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলে বাতাসের উষ্ণতা এবং আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে-কমে। যেমন উত্তুরে বাতাসের প্রবাহ মোটামুটি বসন্ত এবং শরতে অনুভূত হয়। এই বাতাস সিস্তান হ্রদের আর্দ্রতাসহ বয়ে যায় বলে তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা থাকে। তবে গ্রীষ্ম ঋতুতে বাতাসে উষ্ণতার মাত্রা এতো বৃদ্ধি পায় যে , স্থানীয় লোকজন ছাড়া ঐ আবহাওয়া সহ্য করা কঠিন। আবার শীতকালে আর্দ্রতার মাত্রা কখনো কখনো এতোবেশি কমে যায় যে, এর ফলে তুষারপাত ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় আবহাওয়া থাকে ভীষণ ঠাণ্ডা। অন্যদিকে দক্ষিণা বাতাস সমুদ্রের আর্দ্রতা নিয়ে এসে বৃষ্টিপাত ঘটায়। যার ফলে দেখা দেয় বন্যা।

আর এই বন্যার কারণে এখানে উর্বর পলি এসে জমে, ঐ পলিতে সবুজ গাছ-গাছালি আর তৃণ যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি খেজুর বাগান আর কৃষিক্ষেতেরও উন্নতি ঘটে। বেলুচিস্তান শিকার করার জন্যেও উত্তম একটি এলাকা। বলা যায় ইরানের মধ্যে শিকারের জন্যে শ্রেষ্ঠ একটি এলাকা হলো বেলুচিস্তান। কেননা; এখানে রয়েছে জনমানবশূন্য জঙ্গলাকীর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকা। বিরল প্রজাতির বিচিত্র পশু-পাখির বাস রয়েছে এখানে। বেলুচিস্তানের বিখ্যাত কিছু পাখি হলো : কাব্ক-এটি তিতির জাতীয় পাখি, তিহু, এই পাখিটিও তিতির জাতীয় তবে তিতিরের চেয়ে ছোট। রংটা ধূসর হলুদ। বুকের নীচে একটুখানি কালো। এই পাখির মাংস বেশ সুস্বাদু। মিনা, কোয়েল , রাজহাঁস , পাতিহাঁস এবং আরো অনেক জাতের পাখি।

বেলুচিস্তানের বিরল প্রজাতির বিচিত্র পশু-পাখির কথা। শিকারী প্রাণীও এখানে এতো বেশি দেখতে যাওয়া যায় যে , ইরানের অন্যান্য অঞ্চলে তা বিরল। শিকারী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে : ভালুক , চিতাবাঘ , নেকড়ে , শেয়াল ইত্যাদি। বেলুচিস্তানি হরিণ এখানে প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়।
বেলুচিস্তানের অধিবাসীরা বেশ কষ্টসহিষ্ণু, পরিশ্রমী এবং অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী। এরা বিপদ-আপদে এতো বেশী ধৈর্যশীল যে, বোধ হয় সমগ্র ইরানে তার জুড়ি মেলা ভার।

বিশ্বস্ততা, অতিথি পরায়নতা, মহত্ব, দানশীলতায় বালুচদের ঐতিহ্য প্রবাদতুল্য। বিশেষ করে অতিথি পরায়নতা এদের প্রকৃতিগত। বালুচদের সবার মাঝেই এই বৈশিষ্ট্যটি সহজ লক্ষ্য। যাই হোক বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার পর বালুচদের স্বভাব-প্রকৃতি সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ