নভেম্বর ৩০, ২০২১ ১৮:১৮ Asia/Dhaka

যাহেদান শহর ঘুরে দেখার আগে বোধ করি এই প্রাদেশিক শহরটির ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবস্থানের সঙ্গে খানিকটা পরিচিত হওয়া মন্দ হবে না। সিস্তান বেলুচিস্তানের উত্তরাঞ্চলে কেন্দ্রীয় শহরটি অবস্থিত।

ইরানের জনসংখ্যাবহুল শহরগুলোর মধ্যে যাহেদানের অবস্থান বারোতম। যাহেদানের বেশিরভাগ মানুষ ফার্সি ভাষাতেই কথা বলে। তবে সিস্তানি ভাষাভঙ্গির কিছুটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেকেই বেলুচি ভাষায় কথা বলে। 
যাহেদানের পূর্বদিকে রয়েছে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্ত। শহরের আশেপাশে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। যেমন ওশতোরান পর্বত, আঞ্জিরদান পর্বত, জিকু, পিরখান এবং মালেক সিয়াহ পর্বত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকাল পর্যন্ত এই যাহেদান ছিল একটি ছোট্ট গ্রাম। অনেকটা অজোপাড়া গাঁর মতো এই গ্রামটির নাম ছিল 'দেজঅপ'। এরকম নামকরণের কারণ ছিল যাহেদানের আশেপাশের জল টইটুম্বুর ঝরনা এবং অসংখ্য খালের উপস্থিতি। দেজঅপ একটি বেলুচি শব্দ। দেজ এবং অপ-এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে যৌগিক শব্দটি। বেলুচি ভাষায় 'অপ' মানে ফার্সি 'অব'। ব ধ্বনিটি একই বর্গীয় প-ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়ে অপ হয়ে গেছে। অর্থ কিন্তু পাল্টায় নি। অব মানে হলো পানি। আর দেজ মানে হলো ফুটন্ত। দেজঅপ মানে হলো ফুটন্ত পানি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই শহরটির প্রতি সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। বাণিজ্যিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে দ্রুত শহরটি আবাদ হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। কখনও যদি আপনি যাহেদান সফরের চিন্তা করেন তাহলে জেনে রাখবেন যাহেদানের আবহাওয়া বছরের বেশিরভাগ দিনই থাকে গরম এবং শুষ্ক। গ্রীষ্মের সময় দিনের বেলা ব্যাপক গরম থাকে তবে রাতের বেলা তুলনামূলকভাবে থাকে ঠাণ্ডা। যাহেদানে সাধারণত বরফ পড়ে না। শীতকালে এখানকার আবহাওয়া থাকে দিনের বেলায় উপভোগ্য ঠাণ্ডা আর রাতে শীতল। 

যাহেদান শহরের আবহাওয়ার কথা। যাহেদান শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর বাণিজ্যিক অবস্থান। এই শহরের বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত। এ কারণেই সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাজার। কেনাবেচা ও বাণিজ্যের সকল কাজই মোটামুটি এই শহরে চলে এসেছে অনেক আগে থেকেই। আমরাও তাই যাহেদান শহর দেখার সূচনা করবো এখানকার একটি প্রাচীন বাজার পরিদর্শন করার মধ্য দিয়ে। এই বাজারটির নাম হলো যাহেদান ঐতিহ্যবাহী মার্কেট। মার্কেটটির বৈশিষ্ট্য হলো পুরো বাজারটিই ছাদে ঢাকা। ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে এই বাজারটি নির্মিত হয়েছিল। বাজারের স্থাপত্যশৈলী ইরানের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাজারের মতোই কাঁচা ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত। সেইসঙ্গে ইরানের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী বাজারের ছাদ যেমন গম্বুজে ঢাকা যাহেদান মার্কেটের ছাদও তেমনি। 
যাহেদান বাজার ছাড়াও এখানে রয়েছে রাসুলি নামের আরো একটি ট্র্যাডিশনাল মার্কেট। এই বাজারটি দেখার মতো। বিশেষ করে বিচিত্র রঙিন কাপড়ের জন্য দর্শনীয় একটি বাজার এটি। এসব রঙিন কাপড় সাধারণত বেলুচি নারীদের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব পোশাক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই প্রদেশের মানুষের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরে। তাছাড়া এই বাজারে পাকিস্তানি এবং ভারতীয় বিচিত্র খাদ্য সামগ্রী, ফল-ফলাদি, মশলাপাতি ইত্যাদি পাওয়া যায়। 
এবারে আমরা বাজার ছেড়ে যাবো যাহেদানের একটি প্রসিদ্ধ জামে মসজিদের দিকে। মসজিদের নাম হলো মাক্কি জামে মসজিদ। এই মসজিদটি মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। শহরের যে-কোনো প্রান্ত থেকেই মসজিদটিকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বিশিষ্ট সুন্নি আলেম মাওলানা আবদুল আজিজ মোল্লাযাদে নির্মাণ করেন। শুরুতে এই মসজিদটির ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছিল ছয় শ মিটারের ওপর। পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কল্যাণে দুই দফা মসজিদটির আয়তন বাড়ানো হয়। মসজিদটির ডিজাইন এবং ভেতরের অসাধারণ কারুকাজগুলো ইরানি শিল্পীরাই করেছেন। এই মসজিদটিকে বিশ্বের সুন্নি মুসলমানদের বৃহৎ মসজিদগুলোর একটি বলে মনে করা হয়।
মিউজিয়াম বা যাদুঘরের সঙ্গে আমরা সবাই মোটামুটি কমবেশি পরিচিত। দর্শনীয় স্পট হিসেবে মিউজিয়ামের গুরুত্ব বেশি না থাকলেও যারা দৃষ্টির গভীরে প্রবেশ করতে চান তাদের জন্য থাকে মূল্যবান বহু উপাদান। একটি দেশ ও অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবার চমৎকার একটি মাধ্যম হলো এই যাদুঘর। যাহেদানে রয়েছে তেমনি একটি যাদুঘর। যোগাযোগ বিষয়ক এই যাদুঘরটির নাম দেওয়া হয়েছে পোস্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন মিউজিয়াম। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্নির্মিত ভবনে এই যাদুঘরটি কার্যক্রম চলে আসছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ