ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ ১৭:৫২ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসর থেকে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে বেড়াচ্ছি। এখানকার সবচেয়ে বড়ো প্রদেশ সিস্তান ও বেলুচিস্তানের দৈর্ঘ্য এক লাখ একাশি হাজার পাঁচ শ' আটাত্তর বর্গকিলোমিটার।

বলেছিলাম যে নাম থেকেই বোঝা যায় প্রদেশটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি সিস্তান এবং অপরটি বেলুচিস্তান। এরিমধ্যে আমরা সিস্তানের সঙ্গে খানিকটা পরিচিত হবার চেষ্টা করেছি এবং গত আসর থেকে প্রাদেশিক মূল শহর যাহেদানের সঙ্গেও কিছুটা পরিচিত হয়েছি।

যাহেদান শহর ঘুরে দেখার ধারাবাহিকতায় আজও আমরা এই প্রাদেশিক শহরটির বিভিন্ন দিকের সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। গত আসরেই বলেছিলাম যে একটি দেশ ও অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবার চমৎকার একটি মাধ্যম হলো যাদুঘর। যাহেদানে রয়েছে তেমনি একটি যাদুঘর। যোগাযোগ বিষয়ক এই যাদুঘরটির নাম দেওয়া হয়েছে পোস্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন মিউজিয়াম। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্নির্মিত ভবনে এই যাদুঘরটির কার্যক্রম চলে আসছে। আমরা আজকের ভ্রমণেরও শুরুতে ওই যাদুঘরটি একবার ঘুরে দেখার চেষ্টা করবো।

আমরা জাহেদনের ডাক ও যোগাযোগ বিষয়ক যাদুঘরে রয়েছি এখন। এই যাদুঘরে পোড়া শহরের বহু রকমের স্ট্যাম্প, সিল, কবুতর ঘরের রেপ্লিকা, পোস্টম্যান বা রানারের ভাস্কর্য, ইরানের বিভিন্ন সময়কালের ডাকটিকেট, পুরাতন অনেক টেলিফোন সেটসহ অন্যান্য বিচিত্র সরঞ্জাম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে এই যাদুঘরে।  এইসব সরঞ্জাম ও নিদর্শন গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখলে এই শহরের ইতিহাস সম্পর্কে মোটামুটি  একটা প্রামাণ্য ধারণা পাওয়া যায়। যাদুঘর ভবনের স্থাপত্য শৈলীর নকশা ইরানের দক্ষিণ ও মরু আঞ্চলিক ভবনের স্থাপত্য কৌশলের সঙ্গে মিল রয়েছে। ভবন নির্মাণে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মাটি ও ইট।

১৯৩২ সালে এই বিল্ডিংটিকে প্রথমে পোস্ট এবং টেলিগ্রাফ অফিস হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছিল।  সময়ের পরিক্রমায় এখানে যুক্ত হয়েছে বেতার কার্যক্রমও। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এই ভবন থেকেই শুরু হয় রেডিওর কার্যক্রম। প্রথমে এক কিলোওয়াট রেডিও ট্রান্সমিটার স্থাপনের মাধ্যমে এই রেডিও কেন্দ্রটির কাজ শুরু হয়েছিল। এই রেডিও স্টেশন থেকে তখন সিস্তানি এবং বালুচি ভাষায় প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হতো। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রেডিও স্টেশন হিসেবে এই রেডিওর অনুষ্ঠানমালা নির্মিত হতো। পরবর্তীকালে উনিশ শ তেষট্টি সালে এখানে যুক্ত হয় এক শ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার। এই আপগ্রেডেড বা উন্নত ট্রান্সমিটার স্থাপনের মাধ্যমে রেডিওর অনুষ্ঠান নির্মাণ এবং সম্প্রচার শক্তি ব্যাপক বেড়ে যায়।

যাহেদান শহরের যোগাযোগ বিষয়ক যাদুঘর তথা রেডিও স্টেশনের কথা। এই রেডিও স্টেশনে আপগ্রেডেড বা উন্নত ট্রান্সমিটার স্থাপনের ফলে স্থানীয় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রেডিও প্রোগ্রামের পাশাপাশি উপমহাদেশের বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতের জন্যও যথাক্রমে উর্দু এবং হিন্দি ভাষাতে অনুষ্ঠান প্রচারের কাজ শুরু হয়ে যায়। এরপর অবশ্য রেডিও এবং পোস্ট বিল্ডিং অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। তখন ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থা ভবনটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দু হাজার পাঁচ সাল থেকে ওই জাতীয় সংস্থা ভবনটিকে পোস্ট এবং যোগাযোগ বিষয়ক যাদুঘর হিসাবে সংরক্ষণ করে আসছে।

এবার একটু শহরের বাইরে ঘুরে এলে কেমন হয়। শহরের বাইরে গেলে উপভোগ করার সুযোগ হবে এখানকার মানে যাহেদান শহরের চমৎকার সব প্রাকৃতিক নিদর্শন ও সৌন্দর্য। যাহেদান শহর থেকে পঁচাশি কিলোমিটার দূরত্বে একটি গ্রাম রয়েছে লদিয নামে। এই এলাকাটিতে প্রস্তর যুগে মানে এখন থেকে আশি হাজার কিংবা এক লাখ বছর আগে জনবসতি ছিল। একটি মানবগোষ্ঠী বসবাস করতো এই এলাকায়। এখনও এই এলাকায় রয়েছে অনন্য সাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিশেষ করে ভ্রমণকারীরা প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিকে দারুণ পছন্দ করে। লদিজ এলাকার আবহাওয়া শরৎ এবং শীত ঋতুতে এমনকি বসন্তের সূচনাতেও থাকে বেশ উপভোগ্য। তবে গ্রীষ্ম ঋতুতে আবহাওয়া থাকে গরম।

লদিজ এলাকার আবহাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছিলো বিরতির আগে। এই গ্রামে দেখার মতো যেসব নিদর্শন রয়েছে সেগুলোর মধ্যে গুহা এবং লদিজ ঝরনার কথা প্রথমেই উল্লেখযোগ্য। পণর মিটার দৈর্ঘ্য এবং ছয় মিটার প্রস্থের এই গুহাটি প্রাগৈতিহাসিক কালের। এর তিন মিটার উঁচু ছাদ থেকে সারা বছর ধরেই ফোঁটা ফোঁটা পানি চুইয়ে পড়ে। এই চুইয়ে পড়া পানি থেকেই জন্ম নিয়েছে একটি ঝরনা। ঝরনাটিরও নাম লদিজ ঝরনা।  ঝরনাময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ানোর মজা যে কী রকম সেটা ভ্রমণ পিয়াসি মাত্রই বোঝেন নিশ্চয়ই। যাহেদানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা অপূর্ণ থেকে যাবে যদি এখানকার হমুনের কথা বলা না হয়। হমুন হলো ইরানের তৃতীয় বৃহৎ হ্রদ। তিনটি ছোটো ছোটো হ্রদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে হমুন হ্রদ। এগুলো হলো পুজাক, সাবেরি এবং হিরমান্দ।

ইরানের প্রাচীন ইতিহাস ও সাহিত্যে এই হ্রদগুলোর উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। গোরকানি বাদশাহ তৈমুর লং এই হ্রদ সম্পর্কে বলেছেন: "সিস্তানের আমির আমাকে হমুন হ্রদে নৌকা ভ্রমণে নিয়ে গেছেন। তিনি আমাকে বলেছেন: রুস্তমের শাসনামলে এই হ্রদটির আয়তন এখন যতোটা দেখছেন তার চেয়ে অনেক বেশি ছিলো" ...। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ