ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২ ১৩:৪০ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম:

  • মতামত জনগণের কথা বলার কোনো লবিস্ট নেই-প্রথম আলো
  • ‘কোনও গুমের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনী জড়িত নয়’-মানবজমিন
  • ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়ে মির্জা ফখরুল সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ অপরাধ করেছেন’ড.সেলিম-ইত্তেফাক
  •  রিজার্ভ থেকে ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ -যুগান্তর
  • এক বছরে পার্বত্য অঞ্চলে ২২ খুন-কালের কণ্ঠ

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • দুর্নীতি রুখতে ২৬ বছর চালিয়েছেন ধরনা, যোগীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন সেই প্রতিবাদী শিক্ষক-সংবাদ প্রতিদিন
  • অর্থনীতির বৃদ্ধি কি সমাধা করতে পারবে বেকারত্ব, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যক্ষেত্রের খামতিগুলি?-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • প্যাংগং হ্রদের ওপর সেতু বানাচ্ছে চীন! বেআইনি জমি, বলল কেন্দ্রীয় সরকার  -আজকাল

এবার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

‘কোনও গুমের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনী জড়িত নয়’-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-মানবজমিন

নিরাপত্তাবাহিনী কোন গুমের সঙ্গে জড়িত নয়। যারা গুম হচ্ছেন তারা কিছু দিন পরই উদ্ধার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ গুম হয়না। কেউ আত্মগোপন করে, পরে আবার ফিরে আসে।

আজ শনিবার রাজধানীর মানিকমিয়া এভিনিউতে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ভুল তথ্যের জন্য এমনটি হয়েছে। লবিস্ট নিয়োগের নামে কারা কিভাবে বিদেশে টাকা পাঠিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই তাদেরকে সামনে আনা হবে।

পাহাড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পাহাড়ে কিছু সমস্যা আছে। সেনাবাহিনী কাজ করছে। সেখানে অনেক ধরণের ষড়যন্ত্র কাজ করে। শান্তি চুক্তি অনুযায়ী সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

এক বছরে পার্বত্য অঞ্চলে ২২ খুন-কালের কণ্ঠ

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় গত এক বছরে সন্ত্রাসীদের হাতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জনসংহতি সমিতির সদস্যদের কাছে থাকা সব ধরনের বেআইনি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা। তিনি প্রশ্ন করেন, সে সময়ে সব অস্ত্র জমা দেওয়া হলে নতুন করে অস্ত্রের ঝনঝনানি হচ্ছে কেন?

এক্সক্লুসিভ-লুনার মুখে ইলিয়াস আলী গুমের চাঞ্চল্যকর তথ্য-মানবজমিনের এ প্রতিবেদনে অনেক কথাই তুলে ধরেছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা। এতে লেখা হয়েছে, সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী এখনো নিখোঁজ। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তিনি আসলে কোথায়? নাকি তিনি গুমের শিকার হয়েছেন। পরিবার অবশ্য বিশ্বাস করে তিনি আবার ফিরে আসবেন। বিশেষ করে তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাহসিনা রুশদীর লুনা। ১০ বছর হয়ে গেল ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। আসলে সেদিন কীভাবে, কোথা থেকে ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেয়া হয় তা নিয়ে মিডিয়ায় হাজারও খবর ছাপা হয়েছে। কিন্তু তার স্ত্রী লুনা কখনো মুখ খুলেননি। মানবজমিন অনুসন্ধান টিমের সদস্য কাজী সুমন তার মুখোমুখি হয়েছিলেন সম্প্রতি।

তার কাছে দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। এরই ভিত্তিতে আজকের এই প্রতিবেদন।

২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল। রাত তখন ১২টা। বনানী থানা থেকে একটি ফোন আসে জ্যেষ্ঠপুত্র আবরার ইলিয়াসের মোবাইলে। দৌড়ে মা তাহসিনা রুশদীর লুনার রুমে যান আবরার। কাঁচা ঘুমে আচ্ছন্ন মাকে ডেকে তোলেন। বলেন, পুলিশ জানিয়েছে আমাদের গাড়ি নাকি বনানী থানায়। তখনও স্বামী এম ইলিয়াস আলীর বিপদ আঁচ করতে পারেননি লুনা। অনেকটা স্বাভাবিক চিন্তা নিয়ে পুত্রকে বলেন, আমাদের ড্রাইভার আনসারকে ফোন দাও। পুত্র জানান, আনসারকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন লুনা বলেন, তাহলে তোমার বাবাকে ফোন দাও। উদ্বিগ্ন পুত্র জানান, বাবার ফোনও বন্ধ। পুত্রের জবাব পেয়ে দিশাহারা হয়ে যান লুনা। দু’জনের ফোন একসঙ্গে বন্ধ কেন? তখন থেকে নানা দুশ্চিন্তা তার মাথায় আসতে থাকে। লুনা বলেন, সঙ্গে সঙ্গেই বনানী থানার ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন করি। জিজ্ঞেস করি, গাড়ি থানায় গেল কীভাবে? তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, টহল পুলিশ আমাদের জানিয়েছে, বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে একটি গাড়ি পড়ে আছে। পরে আমরা গাড়ি থানায় নিয়ে আসি। ফের ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই, গাড়িটির মুখ কোনদিকে ছিল। পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাসার দিকে মুখ করা ছিল। গাড়িতে চালক আনসার আলীর মোবাইলটি পাওয়া যায়।

কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় একজন ছাত্রদল নেতা আসেন বাসায়। তিনি জানান, রাত পৌনে ১২টার দিকে গাড়িচালক আনসার আলী তাকে ফোন করে বলেন, তার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই। দ্রুত কিছু টাকা পাঠানোর আকুতি জানান। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই লাইনটি কেটে যায়।

রাতেই আমি বিষয়টি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতাদের জানাই। কথা বলি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও। খবর পেয়ে রাতেই বনানীর বাসায় ছুটে আসেন রিজভী আহমেদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা। সম্ভাব্য সব সোর্সে খোঁজ লাগান তারা। ওদিকে রাতেই বনানীর বাসার চারপাশ ঘিরে রাখে র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ততক্ষণে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের খবর চলে যায় মিডিয়ায়। সকাল হতেই গণমাধ্যম কর্মীরা ভিড় করেন বাসায়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আসেন বাসায়। ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দেন।

স্বামীর খোঁজে আমি র‌্যাব সদর দপ্তর, ডিবি অফিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে যাই। কিন্তু কোথাও তার হদিস মেলেনি। ইলিয়াস আলীকে গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি কোনো সংস্থাই। বাধ্য হয়ে স্বামী নিখোঁজের বিষয়ে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। জিডি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হন বিএনপি নেতারা। হামলা হয় আমাদের বনানীর বাসায়ও। এরপর বাসার সামনের সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। মনিটর করা হয় আমাদের বাসায় যাতায়াতকারীদের।

এদিকে ঘটনার চারদিন পর র‌্যাব সদর দপ্তরের মোশতাক নামে এক কর্মকর্তা যোগাযোগ করেন আমার সঙ্গে। ফোন করে শোনান আশার বাণী। ওই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে, উনাকে (ইলিয়াস আলী) পাওয়া যেতে পারে, আপনারা প্রিপারেশন রাখেন। এরপর ওই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও একদিন ফোন করে একই কথা শোনান।

এর কিছুদিন পর ইলিয়াস আলীকে পাওয়ার আশার বেলুন ফুটো করে দেন ওই র‌্যাব কর্মকর্তা। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদের কাছে যে ইনফেরমেশনটা ছিল সেটা এখন আর নেই। এই বিষয়ে আমরা আর কিছু বলতে পারছি না।  

কয়েকদিন পর আমাকে জনৈক এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন। আপনি ইচ্ছে করলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। কীভাবে সাক্ষাৎ করা যায় সেটাও তিনি বলে দিলেন।

স্বামীর সন্ধান পেতে পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সুযোগ চেয়ে আবেদন করি। অনুমতিও মেলে। আমার দুই পুত্র ও শিশুকন্যাকে গণভবনে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় আমাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপেক্ষা করো, ধৈর্য ধরো, বিষয়টি দেখছি। তখন আমার সন্তানদের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কিছুদিন পর গাজীপুরের পূবাইল থেকে আমার মোবাইলে একটি ফোন আসে। এক নারী ফোন করে জানান, ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যেতে পারে, দ্রুত পূবাইলে আসেন। বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা ও র‌্যাব কর্মকর্তা মোশতাকসহ দ্রুত যাই পূবাইলে। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয়রা জানান, একজন লোককে মাইক্রোবাসে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে ইলিয়াস আলীর সন্ধান আর পাননি।

এরপর আমার কাছে একটি উড়ো খবর আসে- মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়া যেতে পারে। সেখানে র‌্যাব অভিযান চালায়। পরে আমি জানতে পারি, আমাদের বিভ্রান্ত করতেই এমন খবর রটানো হয়।

স্বামীর সন্ধানের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হই। দায়ের করি রিট আবেদন। যোগাযোগ অব্যাহত রাখি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু সব জায়গা থেকেই আসে হতাশার খবর।

ঘটনার কয়েক বছর পর আমার পরিচিত একটি ছেলে এসে আমাকে জানায়, সে এসআইয়ের ট্রেনিং করছিল। তখন তাদের যিনি ট্রেইনার ছিলেন তিনি লেকচার দেয়ার সময় ইলিয়াস আলীর বিষয়টি তুলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বলেন, ট্র্যাকিং করে আমরা ইলিয়াস আলীর সন্ধান বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কোন জায়গা দিয়ে কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে আমরা সেটা করতে পারিনি নানা কারণে।

ওদিকে কয়েক বছর ধরে কিছুদিন পর পর বিভিন্ন অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। তারা জানায়, আমাদের সঙ্গে সরকারের ওপর মহলের ভালো সম্পর্ক আছে। আমরা জেনেছি- ইলিয়াস আলী ভারতের একটি জায়গায় আছেন। আমরা তাকে খুঁজে বের করে দিতে পারবো। এ সময় তারা টাকা-পয়সা খরচ করার অফার দেন। জবাবে আমি তাদের বলি, আগে আমার স্বামীর সঙ্গে আমাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেন। কথা বলতে পারলে বিশ্বাস করবো তিনি জীবিত আছেন। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতেই এসব অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করা হয় এটা আমি নিশ্চিত।

স্বামী ইলিয়াস আলীর সঙ্গে শেষস্মৃতি তুলে ধরে লুনা বলেন, ২০১২ সালের ১৪ই এপ্রিল ছিল পহেলা বৈশাখ। ওইদিন তিনি নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে গিয়েছিলেন। ১৭ই এপ্রিল দুপুরে তিনি বনানীর বাসায় ফিরেন। অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি, তিনি ঘুমাচ্ছেন।

দীর্ঘপথ জার্নি করে ক্লান্ত। তাই আমি তাকে আর ডাকিনি। সন্ধ্যায় বাচ্চাকে নিয়ে আমি মিরপুরে ডাক্তার দেখাতে যাবো তখন তিনি বলেন, আমিও যাবো তোমাদের সঙ্গে। কিন্তু আমি তাকে নিতে চাইনি। ২০ বছরের দাম্পত্য জীবনের সেটাই ছিল আমাদের শেষ কথা। সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে দেখি, ইলিয়াস আলী বাসার নিচতলার বৈঠকখানায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে গল্প করছেন। তখন আর কথা বলিনি। রাত ৮টার দিকে তিনি নিচতলা থেকেই বের হয়ে যান। কোথাও বের হলে সবসময় তিনি তাকে বলে যেতেন। কিন্তু বাসায় লিফট না থাকায় তিনি উপরে আর উঠেননি। পরদিন সকালে অফিস থাকায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

ইলিয়াসপত্নী বলেন, আমাদের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ লোক অন্তত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বর্ণনা জানতে পেরেছি। ঘটনার সময় বনানী থানার একজন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা পাশের জলখাবার হোটেলে খাচ্ছিলেন। বনানীর ২ নম্বর সড়কে সাউথপয়েন্ট স্কুলের সামনে কয়েকজন লোকের ধস্তাধস্তি দেখে  ঘটনাস্থলে হাজির হন তিনি। ছিনতাইকারী ভেবে অপহরণকারীদেরই একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অপহরণকারী সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আইডি কার্ড দেখান। অপহরণকারীরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমক দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে যেতে বলেন। পরে তিনি সেখান থেকে সরে যান।

ঘটনার সময় পাশের পার্কের বেঞ্চে ঘুমিয়ে ছিলেন ডাব বিক্রেতা সোহেল। চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার। এরপর তিনি দেখেন, একটি লোককে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে চার ব্যক্তি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় ওই ব্যক্তিকে কিলঘুষি মারা হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তির পর জোর করে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় ওই ব্যক্তি ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল। পরদিন সকালে জানতে পারি, বনানীর পার্কের পাশের সড়ক থেকে যে ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, তিনিই বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। গাড়িতে উঠিয়ে বনানী এক নম্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই সময় ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের একজন নির্মাণ শ্রমিক পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন আমাকে। ওই নির্মাণ শ্রমিক জানান, ইলিয়াস আলীর গাড়ির পেছন দিকে কালো রঙের মাইক্রোটি ধাক্কা মারায় চালক ক্ষিপ্ত হয়ে নেমে যান এবং মাইক্রো চালকের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মাইক্রো থেকে আরও ৪-৫ জন নেমে গিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালককে জোর করে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরক্ষণেই ৩-৪ জন নেমে গিয়ে প্রাইভেটকারে বসে থাকা ইলিয়াস আলীকেও ধরে গাড়িতে তোলার সময় ধস্তাধস্তির সৃষ্টি হয়। পরে তাকে আর ওই এলাকায় দেখা যায়নি।

কি কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে লুনা বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। তবে তিনি নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন আগে সিলেটের দু’জন ছাত্রদল নেতা রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এজন্য তিনি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া সিলেটের টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে স্বামীর খোঁজ নিতে নিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন লুনা। বর্তমান সরকার ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করবে- সেটা আর তিনি বিশ্বাস করেন না। হয়তো যদি কোনোদিন সরকার পরিবর্তন হয় তখন বের করা যাবে, কারা কীভাবে ইলিয়াস আলীকে নিখোঁজ করেছে। তবে তিনি এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, স্বামী জীবিত আছেন। কখনো তার মাথায় নেগেটিভ চিন্তা আসে না। দীর্ঘ এক দশকে স্বামীর জন্য দুশ্চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। স্বামীকে ছাড়াই একাই সন্তানদের মানুষ করছেন তিনি।

বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশেই একজন সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে প্র্যাকটিস করছেন। পাশাপাশি বাবার নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে যাতায়াত করেন। ছোট ছেলে সায়ার লাবিব গত বছর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একমাত্র মেয়ে সায়ারা নাওয়াল সম্প্রতি এসএসসি পাস করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন।

মতামত-জনগণের কথা বলার কোনো লবিস্ট নেই-বিশিষ্ট কবি ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন এই কলামে লিখেছেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জল-স্থল-অন্তরিক্ষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু লবিস্ট নিয়োগের ঘটনা। কে, কত টাকায়, কোথায় লবিস্ট নিয়োগ করেছেন, লবিস্ট নিয়োগে কী ফল পাওয়া গেছে, লবিস্ট নিয়োগের টাকা কোথা থেকে এসেছে ইত্যাদি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতারা বাগ্‌যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ধারণা করি, লবিস্ট নিয়োগ বিতর্ক ২০২৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। মন্ত্রীদের অভিযোগ, বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে আর সরকার সেই ষড়যন্ত্র রুখতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বিএনপির পাল্টা জবাব, সরকার যে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা হত্যা ও গুমের শিকার হচ্ছেন, সেসব তারা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে তুলে ধরছে।

এই যে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, এর কোথাও জনগণ নেই। মনে হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা বিদেশিদের কাছে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন তারা নিজেদের জনপ্রিয়তাকে স্থায়ী বন্দোবস্ত ভাবে।

তিনি লিখেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের কথাবার্তা স্ববিরোধী। তাঁরা একদিকে বলছেন বিএনপি দেশের জনগণ দ্বারা পরিত্যক্ত এবং মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আন্তর্জাতিক মহলে বন্ধুহীন। অন্যদিকে তাঁরা দাবি করেন, বিএনপির অপপ্রচারের কারণে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব কতো বড় সংকট?-মানবজমিন

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটা বড় অংশই এখন বেকার। পড়াশোনা শেষ করে বছরের পর বছর চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। সম্প্রতি একজন তরুণ ‘ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর বিজ্ঞাপন’ দেয়ার পর করোনা মহামারিতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কতোটা সংকট তৈরি করতে পারে- তার একটা নিদর্শন হিসেবে সামনে এসেছে।

বেকারত্বের হতাশা আর এ সংকট যে এখন কতোটা মারাত্মক; সেটি উঠে এলো উচ্চশিক্ষিত এক তরুণীর অভিজ্ঞতায়। নাম পরিচয় গোপন রেখে ইংরেজিতে মাস্টার্স পাস একজন তরুণী জানান, পড়াশোনা শেষ করতেই তার ২৮ বছর বয়স হয়ে যায়। সরকারি চাকরির বয়স ৩০ বছরের মধ্যে একটি বিসিএস এবং ২০টির মতো সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু মহামারির মধ্যে চাকরির পরীক্ষা বন্ধ থাকা আর বয়স শেষ হবার দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসে তাকে।

পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে একইদিনে ৫টি চাকরির লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয়, দু’টি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। এ ছাড়া দু’একটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আসে। সবমিলিয়ে বেকারত্বের এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

চাকরি প্রত্যাশী এই তরুণী বলেন, ‘বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে আমি আশা নিয়ে বাঁচতে পারছি না যে সামনে পড়াশোনা করবো, পরে এটা হয়নি অন্যটা হবে এরকমও হচ্ছে না। একাধিক পরীক্ষা, তার ওপরে দুর্নীতির কারণে প্রশ্ন আউট হচ্ছে।’‘বিভিন্ন কারণে আসলে আমি অনেকটা হতাশ হয়েই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। আসলে খুব বিষণ্ন। আমি এখন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ নিচ্ছি।’

বাংলাদেশিদের টার্গেট কেন ইতালি!-মানবজমিন

অবৈধ রুট ব্যবহার করে গত বছর কমপক্ষে ৮৬৬৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে প্রবেশ করেছেন। ফ্রোনটেক্স-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিপজ্জনক অবৈধ রুটে ইউরোপে বিশ্বের যেসব দেশের নাগরিকরা প্রবেশ করেন, তার শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ অন্যতম। এসব নাগরিকের বেশিরভাগই ইতালিতে থিতু হতে চান। অনলাইন ইনফো মাইগ্রেন্টস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ইনফো মাইগ্রেন্টসকে সবুজ নামে এক বাংলাদেশি অভিবাসী সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তিনি গত বছর লিবিয়া থেকে বোটে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছেছেন। তিনি বলেছেন, কয়েক বছর আগে আমার বাবা মারা যান। তখনই আমি লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

আট সদস্যের পরিবার আমাদের। সেখানে পরিবারকে ভরণপোষণের জন্য আমিই একমাত্র ব্যক্তি। তাই আমাকে কিছু করতেই হবে, এমন সিদ্ধান্তে আসতে হলো।

বাংলাদেশের ২৫ বছর বয়সী সবুজ ২০২০ সালে লিবিয়া যেতে প্রায় ৪ হাজার ইউরো খরচ করেন। লিবিয়া ছিল তার কাজ খুঁজে নেয়ার জন্য প্রাথমিক গন্তব্য। ওই সময় তিনি ইউরোপে পাড়ি দেয়ার কোনো পরিকল্পনাও করেননি।সবুজ বলেন, আমার পরিবার অনগ্রসর। বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে শরিয়তপুরে একটি গ্রামে ঝিয়ের কাজ করেন মা। আমাদের একটি গরু ছিল। তা বিক্রি করে দিলাম। লিবিয়া যাওয়ার জন্য কিছু ঋণ নিলাম।

দারিদ্র্যের কারণে শৈশবে স্কুলে যেতে পারেননি সবুজ। তিনি লিবিয়া পৌঁছার দু’এক মাসের মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু নিয়োগকারীর কাছ থেকে বেতন পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। পাওনা চাইলেই তাকে প্রহার করা হতো। এমন এক কঠিন অবস্থায় এসে উন্নত জীবনের আশায় বিপজ্জনক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সবুজ। সবুজ বলেন, লিবিয়া থেকে একটি বোটে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আমরা ২০২১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে পৌঁছি। এতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘন্টা। আমাদের বোটে ছিলেন ৯৩ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন ছিলেন আমার স্বদেশি।ইতালি পৌঁছার পর থেকেই রাজধানী রোমে একটি অভিবাসী সেন্টারে বসবাস করছেন সবুজ। স্বপ্ন পূরণের জন্য ইউরোপের এই দেশে একটি কাজ পাওয়ার আশা তার। সবুজ বলেন, লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইতালি নিয়ে দেয়ার জন্য লিবিয়ায় পাচারকারীকে কমপক্ষে দুই হাজার ইউরো দিয়েছি। কিন্তু ইতালিতে পৌঁছার পর আমি এখন পর্যন্ত বেকার। এখানে কাউকে জানিনা। চিনিনা। এখানে কেউ আমাকে কাজ দেয় না। এখনও দেশে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন মা। জানি না আমার জন্য কী ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। 

ইনফো মাইগ্রেন্টস বলছে, অবৈধ উপায়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে যাচ্ছেন। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে জিডিপি ৪০৯০০ কোটি ডলারের ওপরে। এর ফলে বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এখানকার অর্থনীতির আকার দ্বিগুন হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। যদিও কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম হয়ে উঠেছে, তবু এখানকার হাজার হাজার নাগরিক ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে তারা অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটি উন্নত ও নিরাপদ জীবন পাওয়া।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্ডার এজেন্সি ফ্রোনটেক্স প্রকাশিত বার্ষিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অবৈধ পথে গত বছর কমপক্ষে ৮৬৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক প্রবেশ করেছেন ইউরোপে। এর মধ্যে ৭৫৭৪ জনই গিয়েছেন মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুট দিয়ে। ৬০৪ জন গিয়েছেন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুট দিয়ে। ৪৩৭ জন গিয়েছেন পশ্চিম বলকান অভিবাসী রুট দিয়ে।

লিবিয়া থেকে মধ্য ভূমধ্যসাগর দিয়ে যেসব নাগরিক ইউরোপে পাড়ি জমান তাদের সংখ্যার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ফ্রোনটেক্স। তাতে দেখা গেছে, এমন দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। গত মাসে কমপক্ষে ৭ জন বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে পৌঁছানোর সময় মারা গেছেন হাইপোথার্মিয়ায়। এই অবৈধ রুটে এমন মৃত্যু একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশিদের জন্য প্রধান গন্তব্য ইতালি

ফ্রোনটেক্সের পরিসংখ্যান বলছে, অবৈধ পথে যেসব বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন, তাদের বেশির ভাগই গত বছর আশ্রয় নিয়েছেন ইতালিতে। কয়েক দশকে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি। বাংলাদেশি অভিবাসী আরাফাত রহমান। তিনি মৌসুমি ওয়ার্কার ভিসায় গত বছর সার্বিয়া গিয়েছেন। কিন্তু তিনি ইনফো মাইগ্রেন্টসকে বলেছেন, তার আসল গন্তব্য ছিল ইতালি। আরাফাত বলেছেন, সার্বিয়া থেকে ইতালি পৌঁছার জন্য পন্থা বের করার জন্য আমি এরই মধ্যে কয়েক হাজার ইউরো খরচ করেছি। আশা করছি শিগগিরই তা পেয়ে যাবো। তিনি আরও দাবি করেন, বলকান দেশ সার্বিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশি পাচারকারীরা প্রতিজন মানুষকে সার্বিয়া থেকে ইতালিতে পাচার করতে নিচ্ছে চার থেকে ছয় হাজার ইউরো। তার ভাষায়, আমাকে একটি কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য তারা চেয়েছে ১৬ হাজার ইউরো। এই কাজ পেলে মাসে বেতন হিসেবে আমি পাবো ১৬০ ইউরো।

আরাফাত আরও বলেন, সার্বিয়া থেকে ইতালি যেতে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হলো লরিতে করে যাওয়া। কিন্তু এ ব্যবস্থায় যেতে পাচারকারীদেরকে দিতে হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। পায়ে হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দেয়ারও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তা অনেক বেশি ঝুঁকির এবং কম খরচের।

এখনও আরাফাত রহমান ইতালি যেতে সক্ষম হননি। তার সব অর্থ চুরি করে নিয়েছে একজন পাচারকারী। উল্টো তাকে হুমকি দিয়েছে। বলেছে, এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করলে তার জীবন হুমকিতে পড়বে। ফলে সার্বিয়াতেই একটি অভিবাসী সেন্টারে বসবাস করছেন তিনি।

কেন ইতালি?

রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান। তিনি ইনফো মাইগ্রেন্টকে বলেছেন, ইতালিতে বসবাস করছেন প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী। কৃষি, শিপবিল্ডিং এবং রাস্তায় ব্যবসা করা সহ নানা রকম সেক্টরে কাজ করছেন তারা। ইউরোপের অন্য কোনো দেশে এত বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী নেই। তিনি মনে করেন, পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি বিদেশীদের স্বাগত জানায়। তারা মাঝে মাঝে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদেরকে বৈধতা দেয়। শামীম আহসান বলেন, জনগণের মধ্যে একটি ধারণা জন্মেছে যে অভিবাসীদের প্রতি অনেক বেশি নমনীয়তা দেখায় ইতালি। তাই বহু মানুষ বিশ্বাস করে, তারা কোনোভাবে সেখানে গেলে কোনো না কোনো সময় বৈধতা পাবে।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০২০ সাল থেকে ‘সিজনাল’ এবং ‘নন-সিজনাল’ ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়া অনুমোদন করেছে ইতালি সরকার। গত মাসে রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ নয়- বাংলাদেশসহ এমন ৩১টি দেশের জন্য ৬৯ হাজার ৭০০ ভিসা এ বছর ইস্যু করবে ইতালি। তাই বাংলাদেশি শ্রমিকদের উচিত বৈধভাবে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করা। ইউরোপের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন বিষয়ক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস একবার বাংলাদেশ যখন স্বাক্ষর করেছে, ফলে অবৈধ অভিবাসীদের আস্তে আস্তে ফেরত পাঠানো শুরু হবে বলে মনে করেন শামীম আহসান।

ঢাকায় লিভ টুগেদার গ্রুপ, সদস্য হাজার ছাড়িয়েছে-মানবজমিন

মানবজমিনে প্রকাশিত লিভ টুগেদার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ভাবিয়ে তোলার মতো। মানুষের ভেতরের নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক ব্যবস্থার ওপর বড় একটা চ্যালেঞ্জ। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা, সুস্থতার জন্য হুমকি। প্রতিবেদনে যে কথা তুলে ধরা হয়েছে- তা  এরকম, লিভ টুগেদার। দু’টি মন এক হলেই যার শুরু। তবে গোপনে চলে কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে লিভ টুগেদার চলে এলেও বর্তমান সময়ে তাদের একটি গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। এক হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে ওই গ্রুপে। সবাই একই মন-মানসিকতা ও চিন্তাধারার। এই গ্রুপে সদস্য যোগ করার ক্ষেত্রে যাচাই করে নেয়া হয়। গ্রুপের সদস্যদের বেশিরভাগই ঢাকার ধানমণ্ডি, গুলশান, নিকেতন, বনানী, বারিধারায় থাকেন। এসব এলাকায় বাসা ভাড়া সহজেই পাওয়া যায়। বাড়ির মালিক বা কেয়ার টেকার বেশি ঝক্কি-ঝামেলা করেন না। এর বাইরে মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায়ও অনেকে আছেন। তপু, তনয়া,তিথি লিভ টুগেদার করেন। তাদের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বেশির ভাগ মানুষ শুধুমাত্র তাদের জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য লিভ টুগেদার করেন। এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। আবার কেউ কেউ বিয়ের আগে নিজেদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়ার জন্য করেন।

লিভ টুগেদারের ক্ষেত্রে অনেক সময় সামাজিক ও আইনি বাধা সামনে এসে দাঁড়ায়। কারণ যারা লিভ টুগেদার করেন তাদের মধ্যে সব সময় ধরা পড়ার একটা ভয় কাজ করে।

সমাজবিজ্ঞানী নেহাল করিম মানবজমিনকে বলেন,  বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অনেকেরই আছে। তবে সেটা কেউ প্রকাশ করে না। ভারতের এক গবেষণায় বলা হয়েছে- প্রতি ১০ জনের ৮ জনেরই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশেও এরকম অনেক আছে। কিন্তু অনেকেই একসঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে থাকে না। সময়-সুযোগ করে ভালোলাগার মানুষের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, লিভ টুগেদার করাটা অনেকের শখ। এটা রুচিগত ব্যাপার। বাংলাদেশের আইনে আছে কোনো নারী-পুরুষ যদি একত্রে থাকতে চায় তবে তাকে ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে বিয়ে করতে হবে। বিবাহিত ব্যক্তি যদি কোনো বিবাহিত বা অবিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে লিভ টুগেদার করে তবে আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধানও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, দুনিয়ার সব দেশেই কমবেশি এমন ঘটনা আছে। তবে একেক দেশের ধরন ও চর্চা একেক রকম। কারণ, ধর্মীয় ও সংস্কৃতির মূল্যবোধ প্রতিটি দেশে ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়। অনেকেই পরিবার গঠন করে তার শারীরিক চাহিদা মেটাতে চায় না। এর মূল কারণ হলো- পরিবার মানে দায়িত্ব, আত্মত্যাগ, শেয়ার করা। এখানে একে অন্যের দায়িত্ব নিতে হয়। পছন্দ না হলেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। সেক্রিফাইস করতে হয়। একটা সময় মানুষ পতিতালয় বা সেক্সহাউজে গিয়ে তার শারীরিক চাহিদা মেটাতো। কিন্তু এখন এই বিষয়গুলোকে আরও আধুনিক ও সহজ করে লিভ টুগেদার পন্থা বলা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ তার পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে শারীরিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি একাকিত্ব সময়টাও ভালোভাবে কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে বেশি উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতা কমে গেছে। সবাই যে লিভ টুগেদার করছে- এমনটাও না। বিয়ে না করে থাকা বা লিভ টুগেদার কোনোটাকেই আমরা ইতিবাচক ভাবি না।

এ ধরনের ঘটনা সমাজকে এবং পরিবার প্রথাকে ধ্বংস করে দেবে। মানুষকে বিকৃত মানসিকতার দিকে নিয়ে যাবে। 

রিজার্ভ থেকে ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ-যুগান্তর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৮ হাজার কোটি ৫০৮ টাকার সমপরিমাণ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ডলারে ৬২০ কোটি বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এদিকে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া-নেওয়ার জন্য পুঁজিবাজারও একটি ভালো জায়গা। সুতরাং রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া মোটেও উচিত হবে না।

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

দুর্নীতি রুখতে ২৬ বছর চালিয়েছেন ধরনা, যোগীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন সেই প্রতিবাদী শিক্ষক-সংবাদ প্রতিদিন

ভোট আবহে তপ্ত উত্তরপ্রদেশ। সেরাজ্যে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী যোগী আদিত্যনাথ ও অখিলেশ যাদব। ভোট যত এগিয়ে আসছে তত একে অপরের বিরুদ্ধ তোপ দাগছেন বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির দুই শীর্ষ নেতা। কিন্তু তাঁর কাছে অখিলেশ যা, যোগীও তাই। মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। ফলে তিনি যেমন একদিকে যোগীর বিরুদ্ধে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চলেছেন, তেমনই নিজের সীমিত সাধ্যে প্রচার চালাচ্ছেন অখিলেশের বিরুদ্ধেও। তিনি কে?

বিজয় সিং। উত্তরপ্রদেশে প্রতিবাদের পরিচিত মুখ। রাজ্যে ন্যায় শাসনের জন্যে, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের দাবিতে গত ২৬ বছর ধরে ধরনা আন্দোলন করছেন এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বিজয় সিংয়ের মুজাফ্ফরনগরের ধরনা মঞ্চের কথা রাজ্যের সকলের জানা। মূলত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধেই তাঁর আন্দোলন। বিজয়ের দাবি, এখানকার কয়েক হাজার একর জমি দখল করেছে জমি মাফিয়ারা। নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতি।

প্রতিবাদে তিন দশক ধরে সরব বিজয় সিং। সেই সূত্রেই এবার যোগীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজয় বলেন, “হ্যাঁ, আমি বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার কথা ঘোষণা করেছি। গোরক্ষপুরের আর্বান আসনে মনোনয়ন জমা দেবো।”

 

ট্যাগ