ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ ১৮:৪৭ Asia/Dhaka

পোড়া শহর নিয়ে কথা বলার মধ্য দিয়ে গত আসরে আমরা আমাদের আলোচনা শেষ করেছিলাম। বিশেষ করে এখানে যে চার হাজার আট শ বছরের পুরোণো পঁচিশ বছর বয়সী এক রমনীর কৃত্রিম চোখ পাওয়া গেছে সেটি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

পোড়া শহরের একটি কবরে ওই চোখ দাফন করা হয়েছে। এই তথ্য দিয়েই পরিসমাপ্তি টেনেছিলাম আসরের।

পোড়া শহরের পর্যটক আকর্ষণীয় একটি সাইট হলো এই শহরের ঐতিহাসিক গোরস্তান। কি মজার ব্যাপার তাই না? গোরস্তান দেখার জন্যও ভিড় জমায় পর্যটকেরা। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। কারণটি হলো প্রতি বছরই এই গোরস্তানে পুরাতত্ত্ব গবেষকগণ নির্দিষ্ট একটা সময়ে গবেষণামূলক খননকাজ চালিয়ে থাকেন। ওই খননকাজ থেকে নতুন কোনো তথ্য উদঘাটিত হলো কিনা সেটিই দেখা ও জানার আগ্রহ সবার। এই গোরস্তানের একটি কবরে বারোটি মাথার খুলি পাওয়া গেছে। এগুলোর একটি বারো-তেরো বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানের বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। মেয়েটি  হাইড্রো-ক্লে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। দুই হাজার সাত শ পঞ্চাশ কিঙবা মতান্তরে চার হাজার সাত শ পঞ্চাশ বছর আগেকার ঘটনা এটি। সেই সময় এই শহরের ডাক্তাররা ওই মেয়েটির মগজ অপারেশন করেছিলেন। এই ব্রেইন অপারেশনকে পৃথিবীর প্রাচীনতম অপারেশনের নমুনা হিসেবে মনে করা হয়।

সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ অনেক প্রাচীন হবার কারণে এই প্রদেশে ঘুরে ফিরে দেখার মতো ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা প্রচুর। ঐতিহাসিক এরকম আরেকটি শহরের নাম "দাহনে গোলামন"। আমরা এই শহরটিতে বেড়াতে যাবো এবং এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের আরেকটি বিভাগের সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করবো। দাহনে গোলামন শহরটি যাবুল শহর থেকে চুয়াল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উনিশ শ ষাট খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো এই শহরটি পুরাতত্ত্ববিদদের নজরে পড়ে। ওই দশকেই শহরটি নিয়ে চলে গবেষণা ও খননকাজ। ইতালির বিশিষ্ট গবেষক ও পুরাতত্ত্ববিদ ওমবার্তো সেররাতো এই দাহনে গোলামন শহরটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই শহরটির কাছেই একটি প্রণালী রয়েছে। এই প্রণালীটির সাহায্যে ইরানের অভ্যন্তর রুটে যোগাযোগের সূত্র তৈরি হয়েছিল। বলা বাহুল্য দাস বিক্রেতারা এই প্রণালী ব্যবহার করেই আফ্রিকান দাসদেরকে ইরানে নিয়ে আসতো। এ কারণেই এই শহরটির নাম হয়ে গেছে দাহনে গোলামন মানে দাসদের প্রণালী।

শহরটি হাখামানেশীয় শাসনামলের একটি শহর। ইরানের ঐতিহ্য ও সভ্যতার ইতিহাসে এই শহরটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এই শহরটি হাখামানেশীয়দের পরিপূর্ণ সার্বভৌমত্বের অধীন ইরানের একটি শহর যে শহরের প্ল্যানিং মানে নগর পরিকল্পনা করেছিল ইরানের নগরবিদরাই। তাদের পরিকল্পনা অনুসারেই পরবর্তীকালে শহরটি গড়ে উঠেছে। এই শহরের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কোনো টাওয়ার দেখতে পাওয়া যায় না। এর মানে হলো শহরের নিরাপত্তা এতো বেশি সুরক্ষিত ছিল যে পর্যবেক্ষণের জন্য বাড়তি কোনো নিরাপত্তা টাওয়ারের প্রয়োজনই হয় নি।

সিস্তান অঞ্চলের আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করেই এখানকার ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সিস্তানের এক শ বিশ দিনের বাতাসের খ্যাতি রয়েছে। ওই এক শ বিশ দিনের দখিনা বাতাসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে এখানকার বাড়িগুলোর ঘরে প্রবেশ করার মূল দরোজা দক্ষিণমুখি করে নির্মাণ করা হয়েছে। স্থাপনা কিংবা বিল্ডিংগুলোতে পিলারের ব্যবহার বেশি। পিলারগুলো ইটের তৈরি। বিল্ডিংও ইটের তৈরি। বাড়িগুলোর বেশিরভাগই বর্গাকৃতির তবে আয়তক্ষেত্রাকারও কম নয়। ছাদের আকৃতি আবার গম্বুজের মতো। দাহনে গোলামন শহরটি বিভিন্ন বিভাগে শ্রেনীবিন্যস্ত। যেমন এখানে আবাসিক এলাকা যেমন আলাদা তেমনি শিল্পাঞ্চলও আলাদা। এর বাইরেও রয়েছে ধর্মীয় ও সরকারী কর্মকর্তাদের বাসভবন এলাকা। পাবলিক প্লেসও রয়েছে আলাদাভাবে।

এই শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নির্দশন হলো এখানকার ঐতিহাসিক প্রার্থনালয়গুলো। খননকাজ চালিয়ে এই শহরের বালুকাময় এলাকার নীচে আবিষ্কৃত হয়েছে সুবৃহৎ একটি প্রার্থনালয়। এই প্রার্থনালয়টি এ অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনার মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য আলোর ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের অগ্নিকুণ্ডও আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো  পৃথক পৃথকভাবে যেমন পাওয়া গেছে তেমনি জোড়ায় জোড়ায়ও বিভিন্ন মাত্রা এবং আকারে পাওয়া গেছে।

তেমনিভাবে ঘরে ব্যবহৃত বিচিত্র তৈজসও মিলেছে অনেক। ইতিহাসবিদগণ এই শহরকে যিরাক কিংবা যেরাঙ নামে অভিহিত করেছেন এবং এই শহরকে যারনেকায়ি অথবা দেরাঙ্গিয়ানা'র রাজধানী শহর বলে অভিমিত দিয়েছেন। বিভিন্ন শিলালিপিতে যেমন বিস্তুন, তাখতে জামশিদ, শুশ এবং নাকশে রুস্তামসহ জেরাক্সেসের শিলালিপিতেও তার উল্লেখ দেখতে পাওয়া গেছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ