ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ ১৬:১২ Asia/Dhaka

প্রত্যেক দম্পতি তাদের দাম্পত্য জীবনে পৃথক থাকতে চান। কিন্তু অনেক বাবা-মা নব-দম্পতিদের এ সুযোগ দেন না। সংসারের সুখের অঙ্গন অনেক সময় অশান্ত হয়ে ওঠে নব-দম্পতিদের প্রতি বড়দের বা অভিভাবকদের হস্তক্ষেপকামী নীতির কারণে।

অবশ্য দাম্পত্য জীবনের সীমানা এবং নিয়ম-নীতি নির্ধারণে যুব দম্পতিদের অনভিজ্ঞতাও এ জন্য অনেকাংশে দায়ি। এসব বিষয়ে অনভিজ্ঞতা ও অপরিপক্কতার কারণে যুব-দম্পতিদের মধ্যে দেখা দেয় মতবিরোধ। কখনও কখনও স্বামী তার স্ত্রীর পরিবারের প্রতি  স্ত্রীর বা স্ত্রী তার স্বামীর পরিবারের প্রতি স্বামীর অনুরাগকে পরনির্ভরতা বলে মনে করেন। আবার কখনও কখনও স্বামী বা স্ত্রীর বাবা-মায়ের বক্তব্যকে নব-দম্পতির পরিবারের প্রতি হস্তক্ষেপ বলে মনে করা হয়।

স্বামী বা স্ত্রী কিংবা উভয়েই যদি নিজ নিজ পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাহলে তাও সমস্যা সৃষ্টি করে এবং উভয়ই সঠিক পথ থেকে এ কারণে বিচ্যুত হতে পারেন। এ ছাড়াও এর ফলে নিজ নিজ বাবা-মায়ের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে নব-দম্পতির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।  

নব-দম্পতিদের স্বাধীনতা বা স্বনির্ভরতা সামাজিক অগ্রগতির অন্যতম সূচক।  স্বাধীন-স্বনির্ভর ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা ও দুর্বলতাগুলোকে ভালোভাবে বুঝতে পারেন এবং এর ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া তার জন্য সহজ হয়ে পড়ে। অবশ্য স্বনির্ভর বা স্বাধীন থাকা বলতে পরামর্শহীন জীবনকে বোঝায় না। প্রকৃত স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।

জীবনে সফল হওয়া ও স্বাধীন থাকার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক সম্পর্ক।  জীবনের নানা সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে স্বাধীন-স্বনির্ভর মানুষদের যোগ্যতা ও আত্মবিশ্বাস বেশি। কারণ তারা অন্যের সাহায্যের আশায় বসে থাকেন না, বরং নিজেই নিজের সংকট আর সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বেশি মাত্রায় প্রস্তুত থাকেন।

স্বাধীন বা স্বনির্ভর ব্যক্তি অন্যদের প্রত্যাশা পূরণের চেয়েও নতুন নতুন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বেশি পছন্দ করেন।  অবশ্য অন্যরা আপনার স্বনির্ভরতা বা স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেবে –সব সময় এমন প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। এমন প্রত্যাশাকারী সম্ভবত কখনও স্বাধীনতার স্বাদ পাবেন না। অন্যরা আপনার স্বাধীনতাকে তখনই সম্মান করবে যখন আপনার আচরণ থেকে তারা আপনার স্বাধীনতার সীমানা চিনতে পারবে। বিয়ের আগেই সবার উচিত আর্থিক নির্ভরতাসহ বাবা-মায়ের পরিবারের ওপর নানা ধরনের নির্ভরতা থেকে নিজেকে মুক্ত করা তথা নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করা।

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে আমরা ইরানের পরিবার-ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু কথা বলব।  ইরানের পরিবারগুলো সেখানকার গোটা সমাজ-ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হওয়ায় ইরানিরাও পরিবারকে বেশ গুরুত্ব দেন। সমাজের অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের চেয়েও পরিবার বেশি গুরুত্ব পায় ইরানিদের কাছে এবং তাদের কাছে পরিবার-ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হিসেবে স্বীকৃত।  

ইরানের পরিবারগুলোর রয়েছে ইসলামী ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হওয়ার ক্ষেত্রসহ পরিবারের নানা বিষয়ের ওপর ইসলাম ধর্মের গভীর প্রভাব দেখা যায়। ধর্মের সঙ্গে ইরানি পরিবারগুলোর সুদৃঢ় বন্ধনের কারণে এই পরিবারগুলো হয়ে উঠেছে ধর্মীয় প্রথা, রীতি ও নানা আচার-অনুষ্ঠানের উৎস।

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল মহান আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশসহ সুস্থ যৌন-জীবন গড়ে তোলার পাশাপাশি যোগ্য বংশধর উপহার দেয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমসহ সব কিছুকেই মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের উদ্দেশ্যও হল একটি পবিত্র উদ্দেশ্য।

মুমিন ব্যক্তিরা বিয়ে করেন এ কারণে যে তা মহানবীর (সা) সুন্নাত। পরিবার মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় এবং পরিবার থেকেই সন্তানরা সামাজিক নানা কৌশল বা দক্ষতা শেখার সুযোগ পায়। এভাবে সমাজের অগ্রগতি বা বিকাশ ও সুস্থতা অর্জনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখে পরিবার। অন্য কথায় ইসলামী পরিবার-ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল মানুষকে সামাজিক দিক থেকে নানা যোগ্যতার অধিকারী করা এবং খোদা-সচেতনতাসহ নানা বিষয়ে সচেতন করা।

ইরানি পরিবারগুলো ধর্ম-চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এখানে নব-দম্পতির ঘরে যখন শিশু জন্ম নেয় তখন তার দুই কানে আযান ও নামাজের একামতের বাক্যগুলো পড়েন শিশুর দাদা বা পিতা। এভাবে ইরানি পরিবারের শিশু জীবনের শুরুতেই ধর্মীয় বিশ্বাসের সংস্পর্শ পায় এবং এর ফলে তার আত্মা থাকে প্রশান্ত  আর শরীরও থাকে সুস্থ । শিশুর কানে আযান ও নামাজের একামত পড়া হলে শয়তানও দুরে থাকে।

ইরানের পরিবারগুলোতে শিশুর নামকরণ বা আকিকার অনুষ্ঠানও করা হয়। ইরানের কোনো কোনো অঞ্চলে শিশুর জন্মের পর ষষ্ঠ দিনে নামকরণের অনুষ্ঠান পালন করা হয়। নবজাতকের নাম রাখেন তার দাদা বা দাদী পবিত্র কুরআন থেকে নাম বাছাই করার মাধ্যমে। কোনো কোনো পরিবারে এমনও দেখা যায় যে নব-জাতকের বাবা-মা সন্তানের সম্ভাব্য কয়েকটি নাম নির্বাচন করে তা কাগজের মধ্যে লিখে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন পাতার মাঝখানে রেখে দেন। এরপর পরিবারের প্রধান বা অভিভাবককে কুরআন খুলতে বলা হয়। তার হাতে প্রথমেই যেই নামযুক্ত পাতা খুলে যায় সেই নামই চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয় নবজাতকের জন্য।  ইরানের দক্ষিণ খোরাসান অঞ্চলে এ ধরনের প্রথা দেখা যায়। ইরানের বিরজান্দ জেলার নানা অঞ্চলে নব-জাতকদের নাম নির্বাচন করেন স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। নামকরণের পর্ব শেষ হলে পরের দিন তথা শিশুর জন্মের পর সপ্তম দিনে ভোজ-সভার আয়োজন করা হয়। মেহমানরা শিশুর জন্মলাভ উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়ে শিশুর সার্বিক সৌভাগ্য ও মঙ্গল কামনা করেন।

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করার বিষয়ে কয়েকটি পরামর্শ তুলে ধরব। দাম্পত্য জীবনকে স্থায়ী, মজবুত এবং আনন্দময় করে তোলার জন্য দরকার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব, সমঝোতা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পরস্পরের অধিকার রক্ষা করা।  ইসলাম স্বামী ও  স্ত্রীকে দিয়েছে কিছু সুযোগ-সুবিধা বা অধিকার এবং একইসঙ্গে পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব। ইসলাম যেখানেই কারো জন্য কিছু অধিকার নির্ধারণ করেছে সেখানে তার ওপর নানা দায়িত্বও আরোপ করেছে। পবিত্র কুরআনে সুরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: নারীর সঙ্গে পছন্দনীয় আচরণ কর।

ভালবাসা ও দয়া প্রদর্শন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে করে তুলে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ। আন্তরিকতা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ পন্থা এটাই। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ. বলেছেন, দয়া বা সুন্দর আচরণের মাধ্যমে হৃদয়গুলো জয় কর।

পরিবারগুলো যদি ভালবাসা ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে তাহলে কোনো ঝড়-তুফানই সেই পরিবারকে নড়বড়ে করতে পারে না। হযরত আলী-আ. তাঁর স্ত্রী  হযরত ফাতিমার (সা) আচরণ সম্পর্কে বলেছেন, আমি যখনই তার মুখের দিকে তাকাতাম আমার সব দুঃখ বা গ্লানি দুর হয়ে যেত এবং ভুলে যেতাম সব ব্যথা-বেদনা।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ