ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২ ১৮:৩৬ Asia/Dhaka

এই সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ ছেড়ে আমরা অন্য প্রদেশের দিকে যাবো আজ। নতুন এই প্রদেশের নাম সেমনান। বেশ সুন্দর একটি প্রদেশ এটি। আবহাওয়াগত বৈচিত্র যেমন রয়েছে তেমনি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনাও রয়েছে দেখার মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা তো বলাই বাহুল্য। এ কারণেই মোটামুটি সারা বছর ধরেই সেমনানের বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে। যে কথাটি বলা হয় নি তা হলো ইরানের শিল্প এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সেমনান।

এখানে রয়েছে পেস্তা বাদামের সারি সারি বাগান। রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কৃষিক্ষেত-খামার। ইরানের প্রধান দুটি মহাসড়কের মাথায় সেমনানের অবস্থান। ভোগোলিক ও কৌশলগত দিক থেকেও সেমনানের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। বলছিলাম দুটি মহাসড়কের মাথায়-এর একটি হলো তেহরান থেকে পবিত্র নগরী মাশহাদে যাবার পথে অপরটি ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ গোলেস্তান এবং মযান্দারনে যাবার পথে পড়েছে সেমনান। আমরা বরং কথা না বাড়িয়ে সেমনানের দিকে যাত্রা শুরু করি।

সেমনান প্রদেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে মরুভূমি যেমন আছে তেমনি আছে পার্বত্য অঞ্চল এবং বনাঞ্চলও। এই এলাকার কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে এখানকার আবহাওয়াগত পরিস্থিতিও হয়ে উঠেছে বিচিত্র। সেমনান প্রদেশের উত্তরাঞ্চল আলবোর্জ পর্বতমালার উঁচু উঁচু পর্বত প্রান্তের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। এ কারণে এ অঞ্চলে পার্বত্য ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। সেমনান প্রদেশের যতই দক্ষিণে যাওয়া যাবে ততই আবহাওয়াগত উষ্ণতা  বেশি অনুভব করা যাবে। এভাবে দক্ষিণে যেতে যেতে মরু আঞ্চলিক আবহাওয়ার মুখোমুখি হওয়া সম্ভব হবে। বলা হয়ে থাকে যে সেমনান প্রদেশে বিশ হাজার হেক্টরের বেশি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বন্য পশুপাখির জন্য নিরাপদ এলাকাও। এই এলাকা বেশ বড়সড়ো। পুরো প্রদেশের শতকরা তেইশ ভাগেরও বেশি এলাকাই নিরাপদ বা সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত হয়েছে।

এর বাইরেও আনুমানিক আট মিলিয়ন হেক্টরের মধ্যে চারটি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে জাতীয় উদ্যান, জাতীয় প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলি, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং সুরক্ষিত এলাকা। ইরানের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা এসব অঞ্চলের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। এই যে বিশাল অঞ্চলের কথা বললাম এর অন্তত পঁচিশ ভাগই পড়েছে সেমনান প্রদেশের ভেতর। এই বিশাল অঞ্চলে রয়েছে 'পারভার' সংরক্ষিত এলাকা। এই এলাকাটি সেমনান শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আবার শাহরুদ শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলেও রয়েছে 'তুরান' নামের একটি সংরক্ষিত এলাকা। এই এলাকাটি বুনো প্রাণীর অভয়ারণ্য। শাহরুদের উত্তর-পূর্বদিকে রয়েছে 'খোশ-ইলাক' নামের আরেকটি সুরক্ষিত অঞ্চল। বুনো প্রাণীরা এইসব অঞ্চলে শিকারের অত্যাচারের হাত থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। পরিবেশগতভাবে বিশেষ অবস্থা মানে ইকোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য এবং জেনেটিক সম্পদের বৈচিত্র্যের কারণে প্রত্যেকটি এলাকারই বিশেষ স্থান রয়েছে।

সেমনান প্রদেশের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের কথা। এই প্রদেশটির বর্তমান যে ভৌগোলিক অবস্থান প্রাকৃতিক ইতিহাসের দিক থেকে এই এলাকাটির উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলটির সভ্যতার ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। একটা সময় মানে প্রাগৈতিহাসিক কালে সেমনান ছিল ঐতিহাসিক প্রদেশ গোমেস বা কুমেসের অন্তর্গত। কুমেসের প্রসঙ্গ যেহেতু এসেই গেলো সামান্য পরিচিতি না দিলে তো ঝাপসা থেকে যাবে। মাদ হুকুমাত এবং হাখামানেশিয় হুকুমাতের পুরো সময় জুড়েই কুমিশান পার্ত নামক বিশাল প্রদেশের অংশ ছিল। এই যুগপর্বে  সেমনানকে পার্থ এবং মাদ প্রদেশের সীমান্ত শহর হিসেবে বিবেচনা করা হত।

ইসলামি যুগে কুমিশান গোমেস প্রদেশ নামে অভিহিত হতো। গোমেস প্রদেশটি আলবোর্জ প্রদেশের দক্ষিণ উপত্যকায় অবস্থিত ছিল। বর্তমানে সেমনান প্রদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান সেখান থেকে যদি দক্ষিণের মরু অঞ্চলকে বাদ দিয়ে চিন্তা করা হয় তাহলে যেটুকু ভূখণ্ড বাকি থাকবে ভূগোলবিদদের অভিমত অনুযায়ী সেই ভূখণ্ডটুকুই গোমেস প্রদেশ নামে পরিচিত ছিল। ওই প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহরের নাম ছিল দমগন। বর্তমানেও এই দমগন সেমনান প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহর। গোমেস সম্পর্কে মুসলিম ইতিহাসবিদগণ যেরকম বর্ণনা দিয়েছেন তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে এই এলাকাটি ছিল সে সময়কার বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। 'আহসানুত তাকাসিম' নামক গ্রন্থে গ্রন্থকার মোকাদ্দেসি এই গোমেস অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন: কী লিখেছেন সে বিষয়ে আমরা কথা বলবো একটু পর।

গ্রন্থকার মোকাদ্দেসি এই গোমেস অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন:  "গোমেসের অধিবাসীরা পশমী পোশাক এবং পাতলা পোশাক বিশেষ করে সাদা সুতির রুমাল বা হেডব্যান্ড তৈরিতে ব্যাপক দক্ষ। সাদা কাপড়ের পোশাকই বেশি বিক্রি হয় এবং এই শ্রেনীর পোশাকের বেশিরভাগই রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। সে সময় সেমনানের এই সাদা পোশাকের খ্যাতি সর্বত্র ছিল।" মোকাদ্দেসি আরও লিখেছেন: কোমসে তৈরি সাদা রুমালেরও খ্যাতি ছিল ভীষণরকম। এই খ্যাতির কারণ যে কেবল এর বুননগত সারল্য তাই নয় বরং এই রুমালের চারপাশে ছিল এক ধরনের মার্জিন।  তাছাড়া এখানকার রুমালগুলো দেখতেও ছিল বেশ সুন্দর। গুণে এবং মানের দিক থেকেও ছিল শীর্ষে।

আর এইসব খ্যাতি ও বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার রুমালের উচ্চমূল্যের বিষয়টি যে অস্বাভাবিক ছিল না তা বোধ হয় মনে করাই যায়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ