মার্চ ০৩, ২০২২ ১৮:৪৮ Asia/Dhaka

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে কাজার শাসনামল পর্যন্ত সময়পর্বের বিচিত্র ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই সেমনান। বলেছিলাম সেমনান বাজারের কথা এবং এখানকার উপহার সামগ্রী কেনার কথা। বাজারের পাশেই যেহেতু সেমনান জামে মসজিদের অবস্থান সুতরাং জামে মসজিদ নিয়েও আমরা কিছুটা আলোকপাত করেছি।

সেমনান জামে মসজিদ এখানকার ঐতিহাসিক ও মূল্যবান নিদর্শনগুলোর একটি। এই মসজিদটি দেখলেই সেমনান অঞ্চলের সমৃদ্ধি, প্রাচীনত্ব এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। জামে মসজিদ স্থাপনাটিকে সেমনান শহরের প্রাচীনতম ইসলামি স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা যায়। যাই হোক আজকের আসরে আমরা অন্য একটি শহরের দিকে যাবো। এই শহরটি সেমনানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত একটি শহর। নাম হলো দমগন। আমরা এই দমগন শহরের সঙ্গে কিছুটা পরিচিত হবার চেষ্টা করবো সেগুলোর সঙ্গে খানিকটা পরিচিত হবার।

সেমনানের কেন্দ্রিয় শহর থেকে এক শ বিশ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক এই দমগন শহরটি অবস্থিত। দমগন খুবই প্রাচীন নিদর্শনে পরিপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী একটি শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও অনন্য সাধারণ একটি শহর দমগন। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত পুরাতাত্ত্বিক গবেষকগণ, পর্যটকমহলসহ সর্বসাধারণের কাছেই দর্শনীয় একটি অঞ্চল হিসেবে আকর্ষণীয় ছিল এই শহরটি। দমগন শহরের উত্তরে রয়েছে আলবোর্জ পর্বতমালা, দক্ষিণে রয়েছে মরুভূমি। সে কারণে দুই ধরনের আবহাওয়াই জিরাজ করে এই দমগনে। এখানে রয়েছে উর্বর ভূমি। বিশেষ করে ফলফলাদি উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী একটি এলাকা এটি। দমগনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য হলো পেস্তা বাদাম। সমগ্র ইরানে তো বটেই ইরানের বাইরেও দমগনের পেস্তার ব্যাপক সুনাম সূখ্যাতি রয়েছে। পেস্তা ছাড়াও এখানে খরবুজা এবং উন্নতমানের আঙুরের ফলন লক্ষ্য করা যায়। দমগনের জনগণ ফার্সি ভাষায় কথা বলে তবে দমগনের স্থানীয় একটা ঢংয়ে কথা বলে।

ইরানের বহু প্রাচীন শহরগুলোর একটি হলো দমগন শহর। দমগন সিল্ক রোডের পাশে অবস্থিত হবার কারণে এই শহরের গুরুত্ব স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে। এই গুরুত্বের ফলে এই শহরের অনেকগুলো প্রবেশদ্বার লক্ষ্য করা যায়। একইভাবে লক্ষ্য করা যায় অসংখ্য সরাইখানাও। প্রবেশদ্বার বেশি হবার কারণে দমগন শহরকে 'শতদ্বার' শহর নামেও অভিহিত করা হতো। খ্রিষ্টজন্মের চারশত বছর আগেও এই দমগন শহর বেশ বড়ো ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব দুই শ উনপঞ্চাশ সালে আশকানি শাসনামলে তাই দমগনকে রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। খ্রিষ্টিয় প্রথম শতক পর্যন্ত এই শহর তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও গুরুত্ব বজায় রেখেছিল। সেই সময় দমগন ছিল গোমেস প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহর। সে সময়কার বিখ্যাত 'বরু' প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখতে পাওয়া যায়।

এই শহর সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বেশ সমৃদ্ধ ছিল। এখনও সেখানে ঐতিহাসিক বিচারে মূল্যবান বহু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। যেমন এখানকার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে 'গের্দ্-কূহ' কেল্লা, দমগন হেসর টিলা, জামে মসজিদ, ইমামযাদা জাফরের মাজার, তোঘরোল টাওয়ার, তরিখনে মসজিদ, চেশমে আলি কমপ্লেক্স, শাহ আব্বাসি সরাইখানা এবং সিপাহসালার সরাইখানা ইত্যাদি। দমগনের ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে মোটামুটি এগুলোকে ধরা যায়। এগুলোর কোনো কোনোটির বয়স খ্রিষ্টপূর্ব চার শ বছরেরও বেশি। হেসর টিলা তো বিশ্বব্যাপী খ্যাত।

দমগন শহর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে গেলে হেসর টিলা নামের ঐতিহাসিক এই প্রাকৃতিক নিদর্শনটির দেখা মিলবে। ইরানি ঐতিহ্য ও সভ্যতার বিভিন্ন কালপর্বে এই হেসর টিলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জ্ঞানী-গুণীদের মহলে, বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী পুরাতত্ত্ব নিয়ে যারা কাজ করে তাদের কাছে এই হেসর টিলার গুরুত্ব অপরিসীম। খ্রিষ্টিয় উনিশ শ একত্রিশ ও বত্রিশ সালে প্রথমবারের মতো এই টিলায় পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডক্টর এরিখ স্মিথ খননকাজ পরিচালনা করেন। দ্বিতীয়বারের মতো খ্রিষ্টিয় উনিশ শ সাতষট্টি সালে একই বিশাববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ ও খননবিদগণ গবেষণামূলক খননকাজ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন। হেসর টিলায় তৃতীয়বারের মতো খননকাজ চালানো হয় ইসলিামি বিপ্লব বিজয়ের পরবর্তীকালে। ইরানি গবেষকরা ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বেশ কয়েক দফা খননকাজ চালিয়ে সভ্যতার বিভিন্ন পর্বের বিচিত্র উপাদান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে মানব বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিদর্শন তারা আবিষ্কার করেন। তাদের আবিষ্কৃত বিভিন্ন উপাদান উপকরণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়েছে যে এই টিলায় সাড়ে ছয় হাজার বছর আগে মানব বসতি ছিল।

এই টিলার স্বর্ণযুগ ধরা হয় চার হাজার তিন শ বছর আগের সময়পর্বকে। মাটির হৃদয় থেকে মানব বসতির বিচিত্র প্রমাণ ও নিদর্শন এখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। যে সময়ের কথা বলছি তখনকার দিনের স্থাপত্য ছিল ছোটো ছোটো কক্ষ বিশিষ্ট ঘর। সিঁড়ির মাধ্যমে এক কক্ষের সঙ্গে অপর কক্ষের সংযোগ রক্ষার ব্যবস্থা ছিল। একেবারেই সাদামাটা জীবন যাপন করতো তখনকার দিনের মানুষেরা।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ