মার্চ ১৯, ২০২২ ২১:১৫ Asia/Dhaka

বিয়ে করা মানুষের পূর্ণতা ও প্রশান্তির জন্য জরুরি বিষয়। বৈধভাবে দৈহিক ও মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য বিয়ে করা অপরিহার্য। এ জন্য প্রকৃত ঐশী ধর্মগুলো বিয়ে করাকে গুরুত্ব দেয়।

বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিশোরী বা তরুণীরা তাদের কৈশোর বা তারুণ্যের শেষ প্রান্তে এসে বিয়ের কথা ভাবে। তবে ছেলেরা ঠিক এ সময়েই বিয়ের কথা ভাবে না। সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য জৈবিক, মানসিক, বস্তুগত বা আর্থিক ও সামাজিক প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। এরই প্রেক্ষাপটে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন মেয়েদের জন্য বিয়ে করার উপযুক্ত বয়স হল আঠারো থেকে ২৪ এবং ছেলের জন্য বিয়ে করার উপযুক্ত বয়স হল ২৪ থেকে ২৮। স্বামী ও স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান খুব বেশি হওয়া ঠিক নয় বলে তারা মনে করেন। তাদের মতে স্বামী ও স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান বড়জোর পাঁচ থেকে সাত বছর হওয়া উচিত।  আবার অনেকেই বিয়ে করেন নিছক ভাবাবেগ বা আবেগ-প্রবণতা নিয়ে। পাত্রীর বয়স পাত্রের বয়সের চেয়ে ৫ বছরেরও বেশি হলেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। অনেকে ক্ষেত্রে এ ধরনের বিয়েতে মূল লক্ষ্য থাকে ধন-সম্পদ ও বাহ্যিক সৌন্দর্য। তারা বিয়েকে অত্যন্ত মুনাফাকামী বা লাভজনক একটি ব্যবসায়িক ও বস্তুগত লেনদেনের মতই মনে করেন।

সন্তানের বাবা-মা হওয়া পারিবারিক জীবনের এক অনন্য আনন্দ। ইরানি পরিবারগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। ইরানি পরিবারগুলোতে সন্তানের প্রতি সহায়তার ক্ষেত্রে বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন বাবা-মা। সন্তান বাবা মায়ের জন্য অত্যন্ত বড় খোদায়ি উপহার। সন্তান পরিবারের জন্য অনেক বরকত নিয়ে আসে। তারা মুমিনের দৃষ্টিতে বেহেশতি ফুল। মুমিনদের জন্য সন্তান যেন হৃদয়ের ধন।

সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা বাবা-মায়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যা শুরু হয় মাতৃগর্ভে সন্তানের ভ্রূণ গঠনের আগ থেকেই এবং তা জন্মের পর থেকে শৈশব, কৈশোর ও যৌবন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মহানবী-সা. সন্তানের সুশিক্ষার জন্য প্রতিদিন আয়ের অর্ধেক আল্লাহর পথে সদকা দেয়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সন্তানের জন্য সঠিক শিক্ষা-দীক্ষার চেয়ে উত্তম কোনো উত্তরাধিকার নেই।

অতীত যুগে সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নানা ধরনের কল্যাণকর মূল্যবোধের কর্তৃত্ব ছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে বা আধুনিক যুগে স্বামী ও স্ত্রীর সেই প্রথাগত ভূমিকা বা দায়িত্ব পালনের ধারা বদলে গেছে। অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারি সহায়তার কারণে পারিবারিক সংহতি ম্লান হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। তবুও সরকারি সহায়তা পরিবারগুলোর সব সমস্যা সমাধানের মত নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হতে পারেনি এখনও।  সাম্প্রতিক কয়েক দশকে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনও পারিবারিক সংহতি ও সামাজিক মূল্যবোধগুলোকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে।  ইরানি পরিবারগুলোতে বাবা-মায়েরা এখনও সন্তানের নানা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অব্যাহত রেখেছেন।   সন্তানদের প্রতি তাদের দায়িত্ব-অনুভূতি এখনও প্রখর। সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিক আচরণ এবং নানা কাজ ও পেশায় দক্ষ করার ক্ষেত্রে ইরানি বাবা-মায়েরা এখনও বেশি দায়িত্বশীলতা অনুভব করেন অন্য অনেক দেশের বাবা-মায়ের তুলনায়।

দাম্পত্য জীবনে তথা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে অনেক সময় টানাপড়েন দেখা দেয়। ফলে পরস্পরের মধ্যে দেখা দেয় দুঃশ্চিন্তা যা খুবই স্বাভাবিক। তবে এ ধরনে উত্তেজনা বা টেনশন মোকাবেলার উপায় হল পরস্পরের প্রতি ক্ষমাশীলতা যা পারস্পরিক ভালবাসাকে অক্ষুণ্ণ রাখে। ক্ষমা প্রার্থনা ক্রোধ ও প্রতিহিংসাকে দূরে রাখে। ক্ষমা চাচ্ছি –এই বাক্যটি পারস্পরিক মনোমালিন্য ও ক্ষোভকে প্রশমিত করে। স্বামী বা স্ত্রীর কেউ ভুল করে ফেললে ক্ষমা চাওয়া উচিত জীবনসঙ্গীর কাছে। আর জীবনসঙ্গীরও উচিত সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দেয়া। যারা অন্যদের ক্ষমা প্রার্থনায় সাড়া দেয় না ও অন্যদের ভুলকে অগ্রাহ্য করে না তাদেরকে নিকৃষ্টতম মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ। তবে উভয় পক্ষকে চেষ্টা করতে হবে যে ভুল যেন আর না হয় এবং যাতে আবারও ক্ষমা চাইতে না হয়। ক্ষমা প্রার্থনা হওয়া উচিত ভুলের মাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ক্ষমা প্রার্থনার মাত্রা ভুলের মাত্রার সমান হওয়া উচিত এর বেশিও নয় কমও নয়। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে পরিবার একটি চুক্তির মত বিষয়। এখানে যে দুই পক্ষ আছে তার উভয় পক্ষকেই কিছু সামাজিক রীতি ও নানা আইন কানুন মেনে চলতে হয়। এসব বিষয়কে যদি উপেক্ষা করা হয় তাহলে পরিবার টিকবে না। বর পক্ষ ও কনে পক্ষ উভয়েরই উচিত বিয়ের বন্ধনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এইসব বিষয়ের সুরক্ষা করা। স্বামী স্ত্রীর দায়িত্ব অবশ্য এমনও নয় যে একজন যা খুশি তা করবে আর অন্যজন সে-সবই মেনে চলবে। বরং পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে হবে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমঝোতার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর দায়িত্ব বেশি এমনটি ভাবা ঠিক নয়। উভয়েরই সমান মাত্রায় ভূমিকা রাখা জরুরি। যেসব কাজ পরিবারে উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা ও হতাশা সৃষ্টি করে সেসব কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। বাবা মা যেসব সন্তানের অধিকারী হন তা কেবল বাবার বা মায়ের সন্তান নয়। তারা তাদের উভয়েরই সন্তান। আল্লাহ না করুক পরিবারে কোনো কারণে যদি পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও আন্তরিকতা নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে দু পক্ষকেই যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ