সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২২ ১৮:৫৯ Asia/Dhaka

আজকের আলোচনা শুরু করব মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর একটি বাণী শুনিয়ে: তিনি বলেছেন, তিনটি কাজ এক মুসলমানের সঙ্গে অন্য মুসলমানের বন্ধুত্বকে পরিশুদ্ধ ও আন্তরিক করে।

এ তিন কাজ হল: যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বা দেখা হয় তখন হাসিমুখে তার সঙ্গে কথা বলা বা আচরণ করা, তাকে বসতে দিতে বা কাছে আসার জন্য জায়গা করে দেয়া ও সুন্দরতম যে নাম তার পছন্দনীয় সে নামে তাকে ডাকা।  - মহানবীর এই দিক-নির্দেশনা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে তা সংসারের সুখ শান্তি বৃদ্ধির পথ যে প্রশস্ত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে বিয়ে শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। বিয়ে দেহ ও মনে সুস্থতা আনে এবং বিয়ের ফলে আয়ু বেড়ে যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন বিয়ের ফলে অকাল মৃত্যুর বিপদ ১৫ শতাংশ কমে যায়। বিয়ের ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে পড়ে। দেখা গেছে হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে যারা বিবাহিত তারা দ্রুত সুস্থ হন এবং ওষুধ তাদের মধ্যে দ্রুত কাজ করে। 

বিজ্ঞানীরা তিন হাজার ৬৮২ জন হৃদরোগীর ওপর দশ বছর ধরে পরিচালিত সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন: যেসব ব্যক্তির হৃদরোগ রয়েছে ও যাদের বয়স বেশি ও যাদের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ রয়েছে এবং যারা ধূমপায়ী তারা বিবাহিত হওয়ার কারণে এইসব একই সমস্যায় আক্রান্ত অবিবাহিতদের তুলনায় তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার ২৬ শতাংশ কম। এ ছাড়াও যারা বিয়ে করেন তাদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্ণতার মাত্রাও অবিবাহিতদের তুলনায় অনেক কম থাকে। বিবাহিতরা অবসর গ্রহণের পর অবিবাহিতদের তুলনায় বেশি সুখ অনুভব করেন। বিবাহিতা নারীরাও অবিবাহিতাদের চেয়ে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে বেশি সুস্থ থাকেন, বিশেষ করে তারা যদি পারিবারিক মূল্যবোধ ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। 

এবারে যথারীতি ইরানি পরিবার-ব্যবস্থা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরব।  ইরানি পরিবারগুলোতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও সময় কাটানোর প্রথা এখনও বহাল তবিয়তে প্রচলিত।  এ ধরনের পারস্পরিক যোগাযোগ ও দেখা-সাক্ষাৎ পারস্পরিক স্নেহের বন্ধন ও প্রীতি-সৌহার্দকে জোরদার করে। সমাজবদ্ধ জীবনে মানুষের মধ্যে খারাপ ভাবনা বা দুশ্চিন্তা খুব কমই আসে। সামাজিক নানা অনুষ্ঠানের ভিড়ে ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে মানুষ ভাবার সময়ও খুব কম পায়। আপনজনদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভাব্য হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধপরায়নতা –এসবের মাত্রাও কমিয়ে দেয় ও বাড়িয়ে দেয় পরস্পরের প্রতি অনুরাগ ও শ্রদ্ধাবোধ। অনেকে প্রিয়জনদের সঙ্গে ও বাবা-মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেই দেখা-সাক্ষাতের পর্ব সম্পন্ন করতে চান এবং এতেই বাবা-মা সন্তুষ্ট থাকেন বলে মনে করেন। কিন্তু বাস্তবতা হল টেলিফোন-সংলাপ, ই-মেইল, চ্যাট বা সংক্ষিপ্ত বার্তা বিনিময় ও চিঠি লেখা ইত্যাদি মাধ্যম কখনও  প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের বিকল্প হতে পারে না।  দেখা গেছে সরাসরি সাক্ষাৎ পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে প্রফুল্ল করে এবং পরোক্ষ যোগাযোগে বিষণ্ণতার বিপদ দ্বিগুণ হয়ে পড়ে। 

আপনজনদের সঙ্গে সাক্ষাত ও সুখ-দুখের কথা বলা এবং সংলাপ ও মত বিনিময় মানুষকে কিছু সময়ের জন্য হলেও পেরেশানি থেকে মুক্ত রাখে। পরিবারের সদস্যদের ছবি দেখাও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।  দেখা গেছে যারা সমাজবদ্ধতা ভালবাসে ও সামাজিক সহায়তা দিতে অভ্যস্ত তারা ঘর-কুনো ও বিচ্ছিন্নতা-প্রিয় মানুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন ও অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ হন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত-বিনিময় ও নানা অনুষ্ঠান উপলক্ষে একত্র হওয়ার ঘটনায় তাদের মধ্যে অনুরাগ বাড়ে ও একাকীত্বের চেতনা কমে যায়। প্রত্যেক মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অন্যদের ভালবাসা পেতে চায় ও ভালবাসা দিতেও চায়। ইরানিরাও এর ব্যতিক্রম নন। তাই সব দেশেই পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও সমাবেশ বেশ জরুরি। নানা ধরনের তথ্য বিনিময়ের জন্য ও সুস্থ সম্পর্কের জন্য পারিবারিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক রক্ষা অপরিহার্য।

আজকাল অনেক নারী ও পুরুষ ঘরের ও বাইরের নানা কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে তারা বাহ্যিক সাজ-সজ্জার সময় পান না। অথচ পরিপাটি থাকা ও সুন্দর সাজে সজ্জিত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের অন্যতম মাধ্যম। ইসলাম ধর্মের নির্দেশনায় স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট রাখতে সুন্দর সাজে সজ্জিত হতে বলা হয়েছে। স্বামীদেরকে বলা হয়েছে যে স্ত্রীরা যেন তাদের পোশাক নির্বাচন করেন অথবা স্ত্রীর পছন্দের আলোকে যেন স্বামী তার পোশাক পরিধান করেন। স্ত্রীরও উচিত স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা। মহানবী-সা. বলেছেন, সেরা নারী তারাই যাদের দিকে তাকিয়ে তাদের স্বামীরা আনন্দিত হন। ইমাম সাদিক আ. বলেছেন, স্ত্রীর কেবল গলার একটি হার থাকলেও তা স্বামীকে দেখানোর জন্য পরা উচিত।

পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করা খুবই ভালো কাজ তবে তা যেন পরপুরুষকে বা পরনারীকে আকৃষ্ট করার আশায় করা না হয়। যদি এমন অশুভ উদ্দেশ্যে তা করা হয় তা হবে মহাপাপ। অবশ্য স্বামীর বা স্ত্রীর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুগন্ধি ব্যবহারকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয় পবিত্র এ ধর্ম।

মহানবী (সা) বলেছেন, স্ত্রীর ওপর স্বামীর অন্যতম অধিকার হল সবচেয়ে সুগন্ধময় দ্রব্য ব্যবহার করে নিজেকে সুগন্ধময় করবে স্ত্রী। 

স্বামী বা স্ত্রীকে আকৃষ্ট করার অন্যতম বড় কৌশল হল নিজের চেহারাকে সুসজ্জিত বা পরিপাটি করা। এ কাজের লক্ষ্য কেবল স্বামী বা স্ত্রীর মন জয় করা নয় তার প্রতি শ্রদ্ধাও এতে প্রকাশ পায়। পরিবারের সদস্যদের মানসিক সুস্থতা ও প্রশান্তির জন্য ঘরের পুরুষের উচিত চেহারা ও পোশাক-পরিচ্ছদকে সুসজ্জিত রাখা। মহানবী-সা. এ বিষয়ের ওপর বেশ জোর দিতেন। দুঃখজনকভাবে অনেক স্বামী ও স্ত্রী ঘরের বাইরে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বা বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ব্যাপক সাজ-গোছ করলেও নিজের সহধর্মী বা সহধর্মীনীর সামনে সবচেয়ে অসুন্দর পোশাক ও চেহারা নিয়ে হাজির হন!#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ