সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ ২১:০৫ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা, আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি চিঠিপত্রের সাপ্তাহিক আয়োজন 'প্রিয়জন'। সপ্তাহ ঘুরে আজও চিঠিপত্রের ঝাঁপি নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আমরা তিনজন। আমি নাসির মাহমুদ, আমি আকতার জাহান এবং আমি আশরাফুর রহমান।

আশরাফুর রহমান: প্রত্যেক আসরের মতো আজকের অনুষ্ঠানও শুরু করব একটি বাণী শুনিয়ে। ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন, "মানুষের অন্তর একটা আয়নার মতন। প্রতিটা পাপকর্মের সাথে সাথে এতে একটি করে কালো দাগ পড়তে থাকে এবং এভাবে দাগ পড়তে পড়তে শেষমেষ এমন অবস্থা হয়ে যায় যে, খোদার নাফরমানী ছাড়া একটি দিনও পার হয় না।"

আকতার জাহান: আমরা সবাই পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করব- এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে নজর দিচ্ছি চিঠিপত্রের দিকে।

আসরের প্রথম মেইলটি এসেছে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল রেডিও ক্লাব থেকে। আর পাঠিয়েছেন ক্লাব সভাপতি বিধান চন্দ্র টিকাদার।

তিনি লিখেছেন, "প্রিয়জন রেডিও তেহরানের একটি অসাধারণ অনুষ্ঠান। এখানে আমরা অনুষ্ঠান সম্পর্কিত আমাদের মতামত জানিয়ে থাকি। আর রেডিও তেহরান আমাদের পাঠানো মতামতগুলো খুবই মূল্যায়ন করে থাকে। তাইতো নিয়মিত অনুষ্ঠান শুনে মতামত না পাঠিয়ে থাকতে পারি না। ২৯ আগস্ট প্রচারিত প্রিয়জন অনুষ্ঠানে বাচিকশিল্পী শিমুল মুস্তফার কণ্ঠে কবি জসিম উদদীন-এর 'প্রতিদান' কবিতাটি অসাধারণ লেগেছে। এমন সুন্দর সুন্দর কবিতা পাঠ আগামীতেও শুনতে চাই।"

নাসির মাহমুদ: প্রিয়জন সম্পর্কে আপনার মতামত জেনে ভালো লাগল। আর চিঠিপত্রের এ আসরে আপনি কোন্‌ কোন্‌ কবিতা বা গান শুনতে চান- তা লিখে জানালে প্রচার করতে সুবিধা হবে। তো, চমৎকার চিঠিটির জন্য বিধান চন্দ্র টিকাদার- আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আসরের পরের মেইলটি এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ইসলামপুর থেকে।

আশরাফুর রহমান:  আর পাঠিয়েছেন তরুণ মৈত্র- তাই না? 

নাসির মাহমুদ: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। তরুণ দা অনেকদিন পর আমাদের কাছে মেইল পাঠালেন।

আকতার জাহান: তো কী লিখেছেন তিনি- শ্রোতাদেরকে পড়ে শোনান।

নাসির মাহমুদ: হ্যাঁ, পড়ছি। তিনি লিখেছেন, "রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগকে আমাদের অন্তরে ধারণ করেছি। কারণ এ বেতার নিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দেয়। এটি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি। রেডিও তেহরান শ্রোতাদের কথা ভেবে এখনও শর্টওয়েভে অনুষ্ঠান চালু রেখেছে- যা প্রশংসার দাবিদার।"  

চিঠির একাংশে তিনি জানিয়েছেন, গত ২৭ আগস্ট কলকাতায় একটি শ্রোতা সম্মেলনে বাংলা বিভাগের ভারত মনিটর নাজিম উদ্দিন রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের কিছু উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেইসাথে তিনি তার ইরান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

আশরাফুর রহমান: তরুণ মৈত্রকে ধন্যবাদ চমৎকার একটি বিষয় আমাদের কাছে লিখে জানানোর জন্য। আশা করি মাঝেমধ্যে লিখবেন।  

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ঘোড়াদাইড় গ্রামের মধুমতি বেতার শ্রোতা সংঘ থেকে ফয়সাল আহমেদ সিপন পাঠিয়েছেন পরের মেইলটি। তিনি বাংলাদেশের সমসাময়িক একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, "পাঁচ টাকা করে জ্বালানি তেলের দাম কমায় জনগণের স্বার্থ রক্ষা হয়নি বলে মনে করি।  কারণ এতে না কমবে পরিবহনের ভাড়া, না কমবে কোনো পণ্যের দাম। মাঝখান থেকে পরিবহন মালিকরা ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এতে জনগণের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার উপায় থাকল না।"

আকতার জাহান: ফয়সাল আহমেদ সিপনের মতামতটি তুলে ধরা হলো। আশা করি আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কেও লিখবেন।

নাসির মাহমুদ: বাংলাদেশের কুমিল্লার ঝাকুনীপাড়া থেকে মাহফুজুর রহমান মাহফুজ পাঠিয়েছেন এবারের মেইলটি।

সালাম, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাবার পর তিনি লিখেছেন, "বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। তাই ইরানে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আছে কি না- তা জানতে ইচ্ছে করছে। আপনাদের নিকট অনুরোধ, ইরানে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকলে তার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রচার করবেন। "

আশরাফুর রহমান: ভাই মাহফুজ, ইরানে মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে আলাদা কোনো প্রতিবেদন করার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, সারাবিশ্বের মতো ইরানেও মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয়। এদেশের সবগুলো ব্যাংকই মোবাইল ও ইন্টারনেটে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ব্যাংকের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করে থাকে।

আকতার জাহান: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার নওপাড়া শিমুলিয়া থেকে নিজামুদ্দিন সেখ পাঠিয়েছেন এবারের মেইলটি।

দীর্ঘ বিরতির পর পাঠানো এই মেইলে তিনি ১ সেপ্টেম্বর প্রচারিত অনুষ্ঠান সম্পর্কে মতামত জানিয়েছেন। লিখেছেন, "পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, বিশ্ব সংবাদ, দৃষ্টিপাত, রংধনু, কথাবার্তাসহ সমস্ত অনুষ্ঠান শুনলাম। কিন্তু আশরাফ ভাইয়ের গ্রন্থনা ও প্রযোজনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানটি ছিল অনবদ্য। প্রিয় কবির লেখা কবিতা, ছড়া, গান এমন সুন্দরভাবে পরিবেশিত হলো যা ভাষায় প্রকাশে আমি ব্যর্থ। আমার প্রিয় কবিকে নিয়ে অসাধারণ সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য আশরাফ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।"

নাসির মাহমুদ: একই অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ শাহাদত হোসেন পাঠিয়েছেন এই মেইলটি।

তিনি লিখেছেন, "রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে যেসব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হল প্রিয়জন আর দ্বিতীয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হল রংধনু আসর। রংধনুর প্রতিটি আসর গল্প, কথিকা ও শিশুদের গান-আবৃত্তিতে ভরপুর থাকে। ১ সেপ্টেম্বরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ওইদিন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি তথ্যবহুল কথিকা প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে, মনে হচ্ছিল কথিকা নয়, যেন একটা ছায়াছবি দেখছি। হৃদয় নিংড়ানো এমন একটি তথ্যবহুল অনুষ্ঠান উপহার দেয়ায় রেডিও তেহরানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।"

আশরাফুর রহমান: কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে চমৎকার মতামত জানানোয় নিজামুদ্দিন সেখ ও শাহাদত হোসেন আপনাদের দু'জনকেই অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এভাবেই প্রেরণা দিয়ে যাবেন।

আকতার জাহান: বেশকিছু চিঠির জবাব তো দেওয়া হল। এবার নাহয় সরাসরি কোনো শ্রোতাবন্ধুর মতামত শোনা যাক।

নাসির মাহমুদ: হ্যাঁ, ভালো কথা মনে করেছেন আপনি। এ মুহূর্তে আমরা কথা বলব বাংলাদেশের এক শ্রোতা বোনের সঙ্গে। প্রথমেই তার পরিচয় জানা যাক।

আশরাফুর রহমান: শ্রোতাবন্ধুরা, এবার আমরা রেডিও তেহরানের ৪০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে লেখা একটি স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধের চুম্বক অংশ তুলে ধরব। এটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া খনিজ শিল্পাঞ্চল থেকে মৌলভীর ডাঙ্গা বিশ্ব বেতার শ্রোতা সংঘের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খন্দকার এইচ আর হাবিব।

তিনি লিখেছেন, “১৯৮৯ সালের ২৪শে জুলাই নৈশ অধিবেশনে কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলায় তরজমা অনুষ্ঠানের মুগ্ধতায় অভিভুত হয়েই রেডিও তেহরানের সঙ্গে আমার প্রথম সম্পর্কের সূত্রপাত। রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি মুসলিম দেশের বেতার কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও সকল ধর্মের শ্রোতাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই সকল ধর্ম বিশ্বাসী শ্রোতাদের আস্থা অর্জনে সদা তৎপর। সেইসাথে তামাম দুনিয়ার ইসলাম ও মুসলমানদের কথা বলিষ্ঠভাবে প্রচার করে দৃঢ়তা ও ন্যায়ের ভূমিকায় অগ্রগামী পদচারণা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বের অন্যান্য বেতারের কর্মীরা বড় বেশি যান্ত্রিক পক্ষান্তরে আইআরআইবি সংশ্লিষ্টদের আছে যথেষ্ট ঐকান্তিক আন্তরিকতাসহ পরম মমত্ববোধ। তাই শ্রোতাদের সহজেই কাছে টেনে নেয় রেডিও তেহরান।”

আকতার জাহান: সিনিয়র শ্রোতা খন্দকার এইচ আর হাবিবের কথাগুলো বেশ ভালো লাগল। তার পুরো লেখাটি আমাদের ওয়েবসাইটের মতামত বিভাগে প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহীরা পড়ে নিতে পারেন।

এবারের মেইলটি এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে। আর পাঠিয়েছেন  এস এম নাজিম উদ্দিন।

তিনি লিখেছেন, “রেডিও তেহরান বাংলা অনুষ্ঠানের ঝুলিতে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের সমাহার আমাকে মুগ্ধ করে তোলে। সপ্তাহের বিভিন্ন দিন, নানা স্বাদের অনুষ্ঠানের পসরা সাজিয়ে আমাদের সামনে হাজির করে রেডিও তেহরান। গত ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক পরিবেশনা ছোটদের 'রংধনু' অনুষ্ঠানের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিদেশি গল্প শুনলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের ছোট্টবন্ধু আফিয়া ইবনাত ইলার কণ্ঠে কবি সুকুমার রায়ের লেখা বিখ্যাত কবিতা 'জীবনের হিসাব' বেশ ভালো লেগেছে। শিশু-কিশোরদের জন্যে এ অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হলেও বড়দের জন্যেও সমান উপযোগী বলে মনে করি।”

চিঠির শেষাংশে নাজিম ভাই একটি প্রশ্ন করেছেন। জানতে চেয়েছেন- রংধনু আসরে যে ছোট্ট সোনামনি ঘোষণা দেয়, তার পরিচয় কী?

নাসির মাহমুদ: রংধনু আসরে যে ছোট্টবন্ধুর রেকর্ডকৃত ঘোষণাটি বাজিয়ে শোনানো হয় তার নাম নাদিয়া। সে একাধিকবার আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল এবং রংধনু আসরে গানও শুনিয়েছিল। তার বাড়ি বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায়। তো, রংধনু আসর সম্পর্কে ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি প্রশ্ন করায় নাজিমউদ্দিন ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।   

বাংলাদেশের বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সারাক ইন্টারন্যাশনাল রেডিও লিসনার্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এম আব্দুর রাজ্জাক পাঠিয়েছেন এবারের মেইলটি।

তিনি লিখেছেন, “রেডিও তেহরানের সাথে আমার পরিচয় দীর্ঘ ২০ বছর আগে থেকে। যেদিন লেখা শুরু করি তার কিছুদিনের মধ্যেই ইরান থেকে শুভেচ্ছা চিঠি আর বিভিন্ন স্টিকার ম্যাগাজিন পেয়েছিলাম। এছাড়া, রেডিও তেহরান থেকে পূর্বে আমার ঠিকানায় মহাগ্রন্থ আল কোরআন পাঠানো হয়েছিল যা আমার জীবনের সবচাইতে বড় পাওয়া। রেডিও তেহরান সামনের দিকে এগিয়ে চলুক সবার ভালোবাসা নিয়ে- এটাই প্রত্যাশা।”

আশরাফুর রহমান: স্মৃতিচারণমূলক লেখাটির জন্য আব্দুর রাজ্জাক ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আমাদের বর্তমান অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কেও লিখবেন।

তো শ্রোতাবন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়েছে একটি গান। 'প্রভু' শিরোনামের গানটি লিখেছেন মারিয়া সুলতানা। সুর করেছেন এবং গেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ শিল্পী ইকবাল হোসেন জীবন। 

আকতার জাহান: শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা গানটি শুনতে থাকুন আর আমরা বিদায় নিই প্রিয়জনের আজকের আসর থেকে। 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ