নভেম্বর ২৬, ২০২২ ১৯:৫৭ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা ? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। প্রত্যেক আসরের মতো আজও রংধনুর আসর সাজিয়ে তোমাদের মাঝে হাজির হয়েছি আমি গাজী আব্দুর রশীদ এবং আমি আকতার জাহান।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, অনেকেই আছে যারা  অনুমতি না নিয়ে হুটহাট করে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়ে। অন্যের ঘর কিংবা বাড়িতে ঢুকার আগে যে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন, সেটা তারা বুঝতে চায় না। হঠাৎ করে একটা লোক কোনো ঘরে ঢুকে পরার ফলে বিবৃতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ইসলাম ধর্মে অন্যের গৃহে প্রবেশের জন্য অনুমতি নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। 

শুধু প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়দের ঘরেই নয়, মা-বাবার রুমে, বোনের রুমে, কিংবা বোন ভাইয়ের রুমে প্রবেশের ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হবে। কারণ, প্রত্যেক মানুষেরই একটা ব্যক্তিগত দিক রয়েছে, যা অন্যদের নিকট প্রকাশ হওয়া কখনোই কাম্য নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "কারো গৃহে প্রবেশের আগে তিন বার অনুমতি প্রার্থনা করবে। যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, তবে ঠিক আছে, নইলে ফিরে যাবে।"  

অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি সব সভ্য সমাজে শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও এর পরোক্ষ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত কিলদাহ ইবনে হাম্বল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, 'একবার আমি রাসুলের (সা.) কাছে গেলাম। এরপর আমি সালাম না দিয়ে সরাসরি তাঁর কাছে গেলাম।' অতঃপর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, 'তুমি ফিরে যাও এবং এরপর সালাম দিয়ে বলো, আমি প্রবেশ করতে পারি?'

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করাকে রাসুল (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি সাহাবি কিলদাহ ইবনে হাম্বলকে আবার বাইরে গিয়ে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার আদেশ দিলেন এবং অনুমতি নেওয়ার ধরন ও পদ্ধতি কী হবে, সেটাও শিক্ষা দিয়ে দেন।

বন্ধুরা, তোমাদের অবগতির জন্য বলছি, রাসূলুল্লাহ (সা.)ও যখন কারো বাড়িতে যেতে চাইতেন তখন তিনি ঘরের বাইরে থেকে গৃহবাসীকে সালাম দিতেন। ঘর থেকে সালামের জবাব ও প্রবেশের অনুমতি পেলে তিনি সেই ঘরে প্রবেশ করতেন।

এখানে আরেকটি বিষয় বলা দরকার আর তা হলো, অনেকেই আছে যারা অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে দরজার কাছে আওয়াজ দেয়।  দরজায় আওয়াজ করার পর যখন ভেতর থেকে জানতে চাওয়া হয়-‘কে?’  তখন জবাবে বলে- ‘আমি’। এই অদ্ভুত  জবাবকেও নিরুৎসাহিত করেছেন রাসূলেখোদা। তাই কেবল 'আমি' না বলে নিজের নামটাও বলা উচিত।

তো বন্ধুরা, আসরের এ পর্যায়ে আমরা অন্যের ঘরে প্রবেশের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে একটি সত্য কাহিনী শোনাবো। এরপর থাকবে একটি গান। আর সবশেষে থাকবে মিয়ানমারপ্রবাসী এক বাংলাদেশি বন্ধুর সাক্ষাৎকার।  আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান।  

মদীনায় এক সাহাবীর বাগানে সামারাহ বিন জুনদার নামের এক ব্যক্তি একটি খেজুর গাছ লাগিয়েছিল। ওই সাহাবী তার পরিবার-পরিজন নিয়ে সেই বাগানেই একটি বাড়ী তৈরি করে তাতে  বাস করতেন। সামারাহ মাঝেমধ্যে তার খেজুর গাছটি দেখাশোনার করার জন্য অথবা খেজুর তোলার জন্য ওই সাহাবির বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতো। একবার ওই সাহাবী সামারাহকে বললেন, " অনুমতি ছাড়া বেপরোয়াভাবে ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়।"

সামারাহ এ কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলে বাড়ির মালিক বাধ্য হয়ে মহানবী (সা.)-এর খেদমতে এসে অভিযোগ করলেন। তিনি বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! এ লোকটি অনুমতি ছাড়াই আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। আপনি তাকে একটু বলে দিন যেন সে ঘরে প্রবেশ করার আগে শব্দ করে যাতে আমার পরিবারের লোকের তার দৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।'

রাসূলে আকরাম (সা.) সামারাহকে ডেকে বললেন, "তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে, তুমি অনুমতি না নিয়েই অন্যের বাড়িতে প্রবেশ কর। ভবিষ্যতে কারো বাড়িতে প্রবেশ করার আগে আওয়াজ দিয়ে তোমার আগমন সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেবে। মনে রেখ কারো বাড়িতে তার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা উচিত নয়। " 

সামারাহ রাসূলের এ নির্দেশও মানতে অস্বীকৃতি জানালো। এবার রাসুলেখোদা বললেন, 'আমার কথা যদি তোমার পছন্দ না হয় তাহলে তুমি তোমার গাছটি বিক্রি করে দাও।' লোকটি এ প্রস্তাবেও রাজি হলো না।

রাসূলেখোদা বললেন, 'তুমি যদি এ কাজ কর তাহলে বেহেশতেও তোমাকে একটি ফলের গাছ দেয়া হবে।' এবারও লোকটি গাছ বিক্রি করতে অস্বীকার করলো। সে তার গোয়ার্তুমিতে অনড় থাকলো। সে বললো, আমি গাছটি বিক্রিও করবো না, আর বাগানে প্রবেশের সময় কারো কাছ থেকে অনুমতিও নেবো না।'

লোকটি সব কথা শুনে রাসূল (সা.) বললেন, 'তুমি একজন অনিষ্টপ্রিয় ও পাষাণ হৃদয়ের মানুষ। জেনো রেখ, ইসলামে কাউকে কষ্ট দেয়া বা কারো ক্ষতি করার অধিকার দেয়া হয়নি।'

এরপর নবীজী বাগানের মালিককে লক্ষ্য করে বললেন, 'যাও বাগান থেকে খেজুরের গাছটি উপড়ে ফেলো।' গাছটি কাটা হয়ে গেলে রাসুলেখোদা সামারাহকে বললেন, যাও আল্লাহর যমীন খোলা আছে। যেখানে মন চায় সেখানে গিয়ে গাছ লাগাও।' ( সূত্র-ওয়াসায়েল, ৩য় খণ্ড,শহীদ মোতাহারী)  

বন্ধুরা, এ ঘটনাটি থেকে তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো যে, অন্যের বাড়িতে প্রবেশের আগে অনুমতি নেয়ার ব্যাপারে ইসলামে কত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে! তোমরা যারা ছোট তারাও কিন্তু হুট করে বড়দের ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।  নাবালক শিশু অথবা ক্রীতদাসের জন্যও তিন সময়ে অনুমতি নেওয়া জরুরী। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলছেন, 

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিনটি সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে; ফজরের নামাযের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বস্ত্র শিথিল কর তখন এবং এশার নামাযের পর। এ তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। তবে এ তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোনো দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের নিকট তো সর্বদা যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মত (সর্বদা) অনুমতি প্রার্থনা করে। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াত সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” (সূরা নূর-২৪:৫৮-৫৯)

তো বন্ধুরা, মহান আল্লাহর এই নির্দেশের আলোকে তোমরাও যে কারো ঘরে প্রবেশের আগে সালাম দেবে এবং অনুমতি  নেবে। এর মাধ্যমে গৃহবাসী যেমন খুশী হবে তেমনি সমাজে নেমে আসবে শান্তি, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ববোধ।

বন্ধুরা, আসরের এ পর্যায়ে রয়েছে সালাম নিয়ে একটি গান। গানের গীতিকার বিলাল হোসাইন নুরি, সুর করেছেন আল মিজান আর গেয়েছে সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদের শিশু শিল্পী সাবা, ইমন, তাহিয়া, স্বাধীন, রুবাইয়াত ও জান্নাত।

সালাম নিয়ে চমৎকার শিক্ষণীয় গানটি শুনলে। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এক নতুন বন্ধুকে।  

তো শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো আবারো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর। কথা হবে আবারো আগামী সপ্তাহে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৬