ডিসেম্বর ০৫, ২০২২ ১৬:১৮ Asia/Dhaka
  • গাজায় ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের একটি চিত্র
    গাজায় ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের একটি চিত্র

এমন অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছে যাদের দীর্ঘ জীবনের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা মানবাধিকার ইস্যুকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে। বিশেষ করে পাশ্চাত্যের সরকার ও রাজনৈতিক মহল মানবাধিকার ইস্যুকে সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার করছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে কথা বলবো। আশা করি শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গ পাব।

বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে সন্ত্রাসী ও স্বৈরাচারী সরকারগুলো বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে অন্তত দুই দশক ধরে অন্য দেশের ওপর দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। আগ্রাসন চালিয়ে তারা ওইসব দেশের জনগণের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা শোকানুষ্ঠানেও বোমা হামলা চালিয়ে তারা মানুষ হত্যা করছে। এসব আগ্রাসী শক্তি শুধু মানবাধিকারের দোহায় দিয়ে সীমাহীন অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ওইসব জনপদে হত্যাকাণ্ড ছাড়াও হাজার মানুষকে শরণার্থীতে পরিণত করা, তাদেরকে অপমান অপদস্থ করা এবং তাদের ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সত্যিকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এবং আগ্রাসী শক্তিগুলোর প্রতারণার বিষয়টি চিহ্নিত হওয়া খুবই জরুরি।

বাস্তবতা হচ্ছে, মানবাধিকার বিষয়টি বর্তমানে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে এবং এ কারণে মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন দিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ে পশ্চিমা সরকারগুলোর স্বেচ্ছাচারী আচরণের কারণে পাশ্চাত্যের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে যে যুদ্ধাপরাধ চলছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে যদি ওই একই অবস্থা আজ আমেরিকা কিংবা পাশ্চাত্যের কোনো একটি দেশে বিরাজ করতো তাহলে অসংখ্য ইশতেহার প্রকাশ, বিবৃতি প্রকাশ কিংবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে হুলুস্থূল কাণ্ড বাধিয়ে দিত।

গত প্রায় দুই দশক ধরে আমেরিকা ও ন্যাটো সামরিক জোট আফগানিস্তান জবর দখলে রেখে শুধু যে নিজেদের বিপুল অর্থ ও জানমাল খুইয়েছে তাই নয় একই সাথে যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশটির জনগণও হামলার শিকার হয়েছে এবং বহু আফগান নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। আফগানিস্তানে একদিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তাণ্ডব অন্যদিকে পাশ্চাত্যের দখলদার শক্তিগুলোর ভুল হিসাব নিকাশের কারণে আফগানিস্তানে বহু মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটিতে চরম নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের আনাচে কানাচে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি হাত রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা মানবাধিকার রক্ষার দোহায় দিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যা, অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ, ইরানসহ অনেক দেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা আরোপ এসবই মার্কিন মানবাধিকার লঙ্ঘনের নমুনা।

প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন সরকার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে বিগত বছরগুলোতে সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। মার্কিন সেনারা সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আল কায়দা গোষ্ঠীর মোকাবেলার অজুহাতে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে দেশটি দখল করে নেয়। প্রায় দুই দশক ধরে জবর দখল চলাকালে ন্যাটো ও মার্কিন সেনাদের হাতে হাজার হাজার আফগান নাগরিক নিহত হয়েছে। বিদেশি সেনাদের উপস্থিতির ফলে আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিস্তার ছাড়াও নিরাপত্তাহীনতা, সন্ত্রাসবাদের বিস্তার এবং মাদক চাষ ও উৎপাদনের ভয়াবহ বিস্তার ঘটে।

এভাবে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনের গাজা ও ইয়েমেনের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার পাশ্চাত্য সেখানে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। মানবাধিকারের বিষয়ে তাদের দ্বিমুখী নীতির বিষয়টি এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই।

২০০৯ সালের ৪ মে আফগানিস্তানের ফারা প্রদেশে এক হামলায় ১৪৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।  এ ছাড়া ২০১০ সালের ২৩ জুলাই কান্দাহার প্রদেশে এক হামলায় ৫২ জনের বেশি নারী ও শিশু নিহত হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কুন্দুজের একটি হাসপাতালে বিমান হামলায় ৪২ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। এসব ঘটনা আফগানিস্তানে বেসামরিক মানুষ হত্যায় মার্কিনীদের হাত থাকার সামান্য কিছু নমুনা।

আফগানিস্তানের ঘটনায় শুধু যে মার্কিনীদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে তাই নয় একই সাথে যারা গত দুই দশকে মানবাধিকার রক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে যে আগ্রাসন চালিয়েছে তাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ন্যাটো ও মার্কিন সেনাদের ভুল হিসাব নিকাশের কারণে গত দুই দশকে বহু আফগান নাগরিক নিহত হয়েছে এবং বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ছিল গোপনে।

যুক্তরাষ্ট্রের বহু সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তারা এটা স্বীকার করেছেন যে, এখনো আল কায়দা গোষ্ঠী আফগানিস্তানে তৎপর রয়েছে এবং আফগানিস্তানে তারা ফের শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় মার্কিন সেনারা ও ন্যাটো বাহিনী গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করলেও উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো কেন এখনো তৎপর রয়েছে সেটাই আফগানিস্তানের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সমাজের প্রশ্ন। এমনকি গত চার বছরে আফগানিস্তানে দায়েশ বা আইএস জঙ্গি সন্ত্রাসীদের অবস্থানও জোরদার হয়েছে।

এ প্রশ্নের জবাবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত ২০ বছরে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ তো নেয়নি বরং তাদেরকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য তাদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরোধী সব রাষ্ট্রকে কব্জায় আনা এবং এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করে।

যদিও মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু গত ২০ বছরে তারা ওই দেশে ব্যাপক অপরাধযজ্ঞ চালালেও পাশ্চাত্য বিশ্ব ছিল সম্পূর্ণ নীরব এবং এভাবে তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়। কিন্তু তারপরও আমেরিকা ও ন্যাটো জোট বিভিন্ন দেশে তাদের অবৈধ লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিথ্যা বিবৃতি প্রচার করে আন্তর্জাতিক সমাজকে ধোঁকা দিত। প্রকৃতপক্ষে, অন্যান্য অনেক কিছুর মতো মানবাধিকার বিষয়েও পাশ্চাত্য দ্বিমুখী আচরণ করায় এর গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশ নিজেদেরকে স্বাধীনতা, সভ্যতা ও মানবাধিকারের সূতিকাগার বলে মনে করে। অথচ তাদেরই মিত্র আমেরিকা ও কানাডার মতো দেশগুলো মানবাধিকার ইস্যুতে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ