জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ ১৭:৪২ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের সরকারি দল আওয়ামী লীগ সম্প্রতি ২২ তম জাতীয় সম্মেলন করেছে। নিয়মিত সম্মেলন-নিশ্চয়ই ভালো একটি বিষয় তবে বড় কোনো চমক ছিল না। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

তিনি বলেন, মানুষ থাকে না যে আশা নিয়ে বাঁচে। শেষ পর্যন্ত সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জনগণ রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে যে ধরনের বক্তব্য প্রত্যাশা করেছিল তার ধারে কাছেও তারা থাকেনি।

বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদ বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য যে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে সেই আওয়ামী লীগ আজকে মানুষের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যখন নিয়মতান্ত্রিক পথে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কিংবা সরকার পরিবর্তনের পথ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে তখন এ ধরনের কাউন্সিলে ওনাদের মুখ থেকে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাবার্তা একেবারেই বেমানান।

সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দেশ এবং জনগণকে দেবার কিছু নেই সেটি এবারের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আরেকবার তারা প্রমাণ করলেন।

সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব সাইফুল হক, সম্প্রতি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২ তম জাতীয় সম্মেলন হয়ে গেল। দশমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন ওবায়দুল কাদের। তো সম্মেলনে সম্পর্কে কি বলবেন?

সাইফুল হক: সরকারি দল আওয়ামী লীগ যে সম্মেলন করেছে সেটি নিয়মিত সম্মেলন। এটি নিশ্চয়ই ভালো একটি বিষয়। কিন্তু ঢাকা শহরের একটি বড় অংশকে প্রায় অবরুদ্ধ করেই সম্মেলন করলেন। তারা গোটা প্রশাসন ও রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে যেভাবে এই সম্মেলনটা করলেন, অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ  সড়ক বন্ধ করে দিয়ে সেই ধরনের সুযোগ বিরোধী দলের করার কোনো সুযোগ  এখনও পর্যন্ত নেই। ফলে দেশের মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর সম্মেলনে বড় কোনো চমক নেই। আর একটা বিষয় এখন পর্যন্ত স্পষ্ট যে  আমাদের বড় দলগুলোর মধ্যে প্রধান নেতৃত্বের বিকল্প গড়ে ওঠেনি। এবং দলগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে পর্যবসিত হয়েছে। যে কারণে চারদশকের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদকও হিসেবে পরপর তিনবার ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচন করা হয়েছে।

রেডিও তেহরান: জনাব সাইফুল হক, আওয়ামী লীগের সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ দিক কি ছিল?

সাইফুল হক: গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই সম্মেলনে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে  যে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সেই সংকট উত্তরণের আশাপ্রদ তেমন কোনো কথা আসেনি।   মানুষ থাকে না যে আশা নিয়ে বাঁচে। শেষ পর্যন্ত সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জনগণ রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে যে ধরনের বক্তব্য প্রত্যাশা করেছিল তার ধারে কাছেও তারা থাকেনি। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য যে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে সেই আওয়ামী লীগ আজকে মানুষের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যখন নিয়মতান্ত্রিক পথে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কিংবা সরকার পরিবর্তনের পথ যখন  প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে তখন এ ধরনের কাউন্সিলে ওনাদের মুখ থেকে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাবার্তা একেবারেই বেমানান।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দেশ এবং জনগণকে দেবার কিছু নেই সেটি এবারের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আরেকবার তারা প্রমাণ করলেন।

রেডিও তেহরান: জ্বি জনাব সাইফুল হক, সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশকে উন্নত করতে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে নষ্ট হবে না। কারো হাতে তুলে দেবন না। তো প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সম্পর্কে কি বলবেন?

সাইফুল হক: দেখুন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গত পনের বছরেই বলা হচ্ছে যে –সরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১২/১৩ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। যখন রাষ্ট্রীয় কোষাগার একধরণের খালি হয়ে যাচ্ছে। যখন আমাদের সমষ্ঠিক অর্থনীতির একটা ভয়াবহ বিপর্যয়, যখন অর্থনীতিতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, যখন রিজার্ভে নজিরবিহীন ঘাটতির জায়গা শুরু হয়েছে সেরকম একটা বাস্তবতাতে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বললেন সেটি তথ্যভিত্তিক নয়।

রেডিও তেহরান: জনাব সাইফুল হক, প্রধানমন্ত্রী বললেন  ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। জনগণ তা মেনে নেয়নি। তো ভোট চুরি এবং ভোটের অধিকার নিয়ে বর্তমান সরকারের গত দুই টার্ম এবং বর্তমান টার্মের অবস্থা সর্ম্পকে কি বলবেন?

সাইফুল হক: প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কৃত্তিম আশাবাদ তৈরির চেষ্টা করেছেন- ইতোমধ্যে আমরা দেখব এই সরকার ভোটের অধিকার বা গণতান্ত্রিক অধিকারই হরণ করেননি আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার যে প্রশ্ন সেটাও আজকে বিপন্ন হয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা যখন ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদেরকে আরেক মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় রাখতে হবে তখন....! তাদের এসব কথাবার্তা সত্যের অপলাপ। মানুষ এসব কথাবার্তা গ্রহণ করেনি। নেহাতই রাজনৈতিক গলাবাজি ছাড়া  মানুষ অন্য কোনোভাবে দেখেনি।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা এবারের কাউন্সিলে বারবার করে বললেন! কিন্তু আমরা কিভাবে বুঝব এটি? যেখানে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। ভোটের অধিকার নেই। মানুষের পছন্দের দল বা প্রার্থীকে বেছে নেবার সুযোগ নেই। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে কালো আইন মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করে সে মানুষ কীভাবে স্বাধীন হবে, সে মানুষ কীভাবে স্মার্ট মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে! এগুলো স্ববিরোধীতা ছাড়া আর কিছু নয়। আগে বলতেন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা। এখন বলছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বেন। এসব শব্দের চাতুরি দিয়ে তাদের শাসনামলে যে চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট  ও নৈরাজ্য ঢাকার চেষ্টা করছে- আমরা যেটাকে বলছি একটা ফ্যাসিবাদ সতের কোটি মানুষের ওপর চেপে আছে। তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়ার জন্য এগুলো কিছুটা আত্মরক্ষার প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে এইসব শব্দ-বাক্য বলা  হচ্ছে যার সাথে বাস্তবতার দূরবর্তী কোনো সম্পর্ক নেই। এ প্রসঙ্গে শেষ কথা যেটি বলব সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে।

বিরোধী দলগুলোকে সরাসরি মোকাবেলা করার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলা, গুম খুনসহ সন্ত্রাসীর একটা দৌরাত্ম আমরা লক্ষ্য করছি।

রেডিও তেহরান: জনাব সাইফুল হক আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

সাইফুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ