জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ ১৪:৩৫ Asia/Dhaka

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান- সিরিয়া এবং ইরাকের সন্ত্রাসীঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের বেলুচিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় হামলা চালিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। তবে সে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার আবদুল আউয়াল ঠাকুরের সঙ্গে।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম। উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ইরান- পাকিস্তানের ভেতরে তৎপর একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এরপর পাকিস্তান ইরানের ভেতরে অনেকটা পাল্টা হামলা চালিয়েছে যা নিয়ে দু দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: যেভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে-সেটা হচ্ছে ইরান এবং পাকিস্তান। পরস্পর প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি মূলত তালেবান বিদ্রোহ বা তালেবান আন্দোলন থেকেই মূলত শুরু হয়েছিল। সেখানে নানা ধরনের ঘটনা এবং তার বিকাশ হতে হতে  এখন পরিস্থিতি একটা ভিন্নতর রূপ নিচ্ছে একথা মনে করার যথেস্ট কারণ রয়েছে।

বিষয়টি যদি এভাবে দেখা হয় যে ইরান এবং পাকিস্তান দুটি মুসলিম দেশ এবং  বর্তমান বিরোধ ভ্রাতৃঘাতি। আর এ ধরনের বিরোধকে সমর্থন করা কিংবা উসকে দেয়া কোনো অবস্থাতেই সংগত নয়। তবে বিষয়টির বাস্তবতায় ইরান বলেছে-পাকিস্তানের ভেতরে ইরানবিরোধী সন্ত্রাসীদের দমনের কথা বলেছে পাল্টা পাকিস্তানও একই কথা বলেছে এবং একই কাজ করেছে। দুটো কাজই কূটনৈতিকভাবে সমাধানের যোগ্য নয় বলে প্রাথমিক পর্যায়ে মনে করেছিল। তবে এরই মধ্যে  বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছেছে।

তবে যেকথাটি আগে বলছিলাম, সেটি হচ্ছে কূটনৈতিকভাবে সমাধান অযোগ্য বিবেচিত হলে যে সরাসরি আক্রমণের দিকে যেতে হয় তাহলে সরাসরি সেটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করে। অর্থাৎ একটি দেশ আরেকটি দেশের প্রতি আস্থাশীল নয়। তাহলে দুদিক থেকেই প্রশ্নই আসবে-দুটি দেশই ইসলামি রাষ্ট্র, দুটি দেশই মুসলিম রাষ্ট্র-সুতরাং দুটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে বিরোধের অর্থ হচ্ছে অন্যপক্ষ যারা ইসলামকে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে না তাদের জন্য এটা হাস্যকর ব্যাপার। এই ঘটনায় তাদের তালি বাজানোর মতো একটা বাস্তবতা তৈরি  হতে পারে। ফলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে রাষ্ট্রের মধ্যে বা যাদেরই থাক না কেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা সঙ্গত নয়। কারণ সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাস হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের অস্ত্র। তারাই ইসলামকে সন্ত্রাসবাদী বানানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয় এবং কাজ করে। ফলে দুটি রাষ্ট্রেরই উচিত তাদের অভ্যন্তরে যে কোনো পক্ষের সন্ত্রাসীই থাক না কেন সেইসব কর্মকাণ্ডকে বন্ধ করার জন্য কার্যকর এবং আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে।

রেডিও তেহরান: জনাব ঠাকুর, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট বিশেষ করে ফিলিস্তিন সংকট থেকে সেখানকার জনগণকে উদ্ধারের জন্য ইরান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই সময় ইরানের ভেতরে হামলা দেশটিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। আপনার কী মনে হয়?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: ফিলিস্তিন বা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের যে সমর্থন সেটি অবশ্যই মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে যে ফিলিস্তিনি জনগণ অস্বাভাবিক বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের জন্য বিশ্বের সব মুসলমানদের এগিয়ে আসার যৌক্তিকতা, প্রয়োজনীয়তা এবং বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও তারা কাজটি করেনি। আর এ ক্ষেত্রে ইরান যে কাজটি করেছে নিঃসন্দেহে তা প্রশংসনীয়। কোনোভাবেই এই কাজকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আজকে ফিলিস্তিনের গাজাবাসী মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। মানবতার সেখানে চরম লঙ্ঘন হওয়ার সত্ত্বেও বিশ্ব বিবেক কাঁদে না। বিশ্ব বিবেকের যে নিষ্ঠুরতা তার বিরুদ্ধে ইরানের অবস্থান সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে এই ঘটনার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আছে বা ইসরাইলের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে কিংবা গাজাবাসীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান অবস্থান নিয়েছে কিনা সে বিষয়টিও আলোচনার দাবি রাখে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বিশ্বের মুসলমানদের জন্য ঐক্যই বড় কথা। আর সেই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে কুরআন এবং সুন্নাহ। আর কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যদি আমরা শাসন করতে চাই তাহলে যেকোনো বিরোধকে সহজভাবে মিমাংসা করা যায়। অবশ্যই একথা বলতে হবে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের ভূমিকাকে ক্ষুণ্ণ করা এবং তাদেরকে কোণঠাসা করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার বিষয়টি কোনো বিবেচনাতেই খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। জনাব আবদুল আউয়াল ঠাকুর সাক্ষাৎকারের শেষ প্রান্তে এসে জানতে চাইছি,  ভ্রাতৃপ্রতীম দুই দেশের এই সংকট নিরসনে চীন মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। আপনার কী মনে হয় চীন সফল হবে?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, চীন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে। এমনকি পাকিস্তানে যখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চরম আকার  ধারণ করেছিল তখনও চীন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং ঐতিহাসিক। ফলে বলা যায় চীন আন্তরিক হলে ও সক্রিয় হলে সংকট নিরসনে চীনের মধ্যস্থতা কাজে আসবে। চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে পাকিস্তানে। সেই দিক থেকে চীন আন্তরিক হলে এই সংকটের সমাধান হওয়া সম্ভব। চীন কিন্তু দুটো বিষয়ের কোনো অংশ নয়। তৃতীয় পক্ষ বা সালিশকারী হিসেবে তার ভূমিকা ইতিবাচক হতে পারে সেটা মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে।

রেডিও তেহরান: জনাব, আবদুল আউয়াল ঠাকুর সাম্প্রতিক সময়ের একটি গুরুত্ব বিষয় ইরান-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ।

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: আপনার মাধ্যমে রেডিও তেহরানের শ্রোতাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৪

ট্যাগ