সুন্দর জীবন- পর্ব ২৪ (ভুল স্বীকার করুন)
আমরা সবাই যোগাযোগ-দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে চাই। কারণ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত ক্ষেত্রসহ সর্বত্রই এই দক্ষতার প্রভাব রয়েছে।
যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশে আমাদেরকে সব রকমের যোগাযোগেই সাবলীল ও দক্ষ করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাবলীলভাবে কথা বলা ও লেখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোনো কিছু বুঝে পড়া এবং মন দিয়ে শোনাও খুব জরুরি। আপনি যা বলছেন, তা আরেকজন বুঝতে পারছে কি না, কিংবা আপনি অন্যের কথা বুঝতে পারছেন কি না- দুটিই যোগাযোগ দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। অফিসে নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে গেলেও সবার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের ক্ষমতা থাকতে হবে। সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করাও আপনার ব্যক্তিগত দক্ষতার মধ্যে পড়ে। সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকা কিংবা প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলার অভ্যাস দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার জন্য তাই বাড়াতে হবে আবেগীয় দক্ষতা। সহকর্মীর সাফল্যে তাকে অভিনন্দন জানান ও উৎসাহিত করুন। এতে সম্পর্কে সরলতা বাড়বে। একসঙ্গে কোনো কাজ করতে গেলে সকলের মতামত নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। আগ বাড়িয়ে নিজেই সব করে ফেলতে যাবেন না।
নিজের ভুল হলে তা স্বীকার করুন সঙ্গে সঙ্গে। ভুল শুধরে নিয়ে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এটি অন্যের নিকট আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। যেকোনো যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনি শুধু বলে গেলে হবে না। লেখার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনি যা বলছেন বা লিখছেন, সেটা যার উদ্দেশে বলা বা লেখা হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারছেন কি না, তা আপনাকে জানতে হবে। নিজে কথা বলবেন অবশ্যই, তবে তার আগে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার অভ্যাস করুন। কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় তা গুরুত্বের সঙ্গে শুনুন। প্রসঙ্গের বাইরে কথা বলতে যাবেন না। মনে রাখবেন একজন মনোযোগী শ্রোতা খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। যে কথা বলছে তাকে বলতে দিন, তার কথা শোনা শেষ হলে আপনার বক্তব্য গুছিয়ে বলুন। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করুন। তবে নিজের বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য কখনো জোর খাটাতে যাবেন না। আপনার বক্তব্যের পক্ষে জোরালো যুক্তিগুলো তুলে ধরুন সুন্দর করে। সবসময় কথা বলবেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। তবে আচরণে অহংকার বা জেদ যেন প্রকাশ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
কর্মক্ষেত্রসহ সব অঙ্গনেই সব ধরণের পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রয়োজনে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। আপনি কোথায় কোন কথা বলছেন, আপনি যে কথাগুলো বলতে চাচ্ছেন তা সেখানে বলা উচিত হবে কি না এগুলো আগে থেকেই ভেবে নিতে হবে। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে সঠিক স্থানে সঠিক কথা বলতে হবে, অন্যের শরীরী ভাষা পড়তে জানতে হবে। একজন শ্রোতার শরীরী ভাষা থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন কি না কিংবা বুঝতে পারছেন কি না। কথা বলার সময় অযথা হাত পা নাড়া কিংবা চিৎকার করা উচিত নয়। সঠিক ভাষাগত দক্ষতাও জরুরি। ভাষা নির্ভুল বলার পাশাপাশি ভাষায় আঞ্চলিকতা থাকলে তা পরিহার করতে হবে। শুদ্ধ ভাষা, স্পষ্ট উচ্চারণ ও কথা বলার মোহনীয় ভঙ্গি আপনার যোগাযোগকে আরোও সাবলীল করে তুলবে। মনে রাখবেন, কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য প্রথমেই নজর দিতে হবে উপস্থাপন ভঙ্গির উপর। অন্যের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে ভদ্রভাবে। সঠিক ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধ যেন আপনার কথাবার্তা ও চালচলনে ফুটে ওঠে শতভাগ, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিচিত্র প্রয়োজনে আপনার লিখিত যোগাযোগের প্রয়োজনও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সঠিক প্রয়োজনটি যেন লেখার মাধ্যমে সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে তা লক্ষ্য রাখা জরুরি। লেখা গোছালো হতে হবে এবং ভুল বানান পরিহার করতে হবে। এর পাশাপাশি লেখার তথ্যগুলো সঠিক কিনা তা যাচাই করে নিন বারবার। যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশের জন্য বেশি বেশি পড়াও জরুরি। যারা অনেক পড়েন, তারা অনেক বিষয় সম্পর্কে খোঁজ রাখেন। কাগুজে বই-সাময়িকী-সংবাদপত্র হোক, কিংবা ইন্টারনেটে ই-পত্রিকা, ই-সাময়িকী বা পেশা-বিজ্ঞান-ব্যবসা-বিষয়ক কোনো পোর্টালই হোক না কেন, নিয়মিত চোখ রাখলে সাম্প্রতিক সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য যখনই কোনো লেখা পড়ছেন, মাথায় ‘ফাইভ ডব্লিউ-এইচ’ নামের সূত্রটি মনে রাখবেন। ফাইভ ডব্লিউ-এইচ হলো হু, হোয়াট, হোয়্যার, হোয়েন, হোয়াই ও হাউ। লেখাটি লেখক কেন লিখেছেন, কার জন্য লিখেছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, কোন কোন বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে, আপনি লিখলে কীভাবে লিখতেন-এসব দিকগুলোতে মনোযোগ দিন।
আপনি যত বেশি পড়বেন, যত জানবেন, কথা বলার সময় আপনি তত আত্মবিশ্বাস পাবেন। জানার ঘাটতি থাকলে বুঝিয়ে বলা ও শুনে বোঝা—দুটি কাজই কঠিন হয়ে যায়। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য বক্তৃতা দেওয়া বা নিজের ভাবনা উপস্থাপন করার কৌশলও জানতে হবে। আপনি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে চাইলে এ ক্ষেত্রে যারা সুনাম কুড়িয়েছেন তাদের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন। শুধু অনুসরণ করা নয়, সফলদের কাছ থেকে আইডিয়া গ্রহণ করে নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করে আপনার উপস্থাপনাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন আপনি। যোগাযোগ দক্ষতার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো চর্চা। ক্রিকেট-ফুটবল-ব্যাডমিন্টন, কিংবা অন্য যেকোনো খেলোয়াড়রা যেমন সব সময় চর্চার মধ্যে থাকেন তেমনি যোগাযোগ–দক্ষতাও প্রতিদিন চর্চার মাধ্যমে বিকশিত হয়। তাই চর্চার দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
সব ক্ষেত্রেই দক্ষ যোগাযোগের চর্চা বজায় রাখুন। সাধারণ একটি ই-মেইল লেখা থেকে শুরু করে বক্তৃতা দেওয়া-প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিজের স্বকীয়তা রাখতে হবে। বন্ধুকে ই–মেইল পাঠাচ্ছেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন, এসব ক্ষেত্রেও দক্ষ যোগাযোগের চর্চা করুন। তাহলে আপনি অন্যত্রও সহজেই সফল হতে পারবেন। যেকোনো কিছুর শুরুর দিকে দুর্বলতা থাকে, ভুল থাকে। ভুল থেকেই শিখতে হবে। আপনি হয়তো কোথাও বক্তৃতা দিয়েছেন, একটু ভুল হয়েছে। ভুল দেখে অন্যরা হাসতে পারে, কটু কথা বলতে পারে-এসব নিয়ে মন খারাপ করলে চলবে না। একটি ডায়েরিতে নোট নেওয়ার মাধ্যমে যেসব ভুল হচ্ছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারেন। এভাবে আপনি হয়ে উঠবেন যোগাযোগ ক্ষেত্রে একজন দক্ষ ব্যক্তি।
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।