সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
সুন্দর জীবন-পর্ব ৩১ (বই পড়ে শিশুদের শোনান)
আপনার সন্তান হয়তো একা একা বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এমনও হতে পারে সে সহজেই অপরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। এতে চিন্তার কিছু নেই। আপনি আপনার সন্তানকে সহযোগিতা করুন। তাকে নানা ধরণের পরিবেশে নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ করে দিন।
মনে রাখবেন বাবা-মা তথা অভিভাবকের পক্ষ থেকে শিশুর ভুল ধরা ও সংশোধন করে দেওয়ার মাত্রা যেন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে না পৌঁছায়। শিশুদেরকে সব ভুল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, শিশুরাও ভুল করতে পছন্দ করে না। তবে তাদের ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। ভুল করার কারণে তারাও বিব্রত বোধ করে, হতাশ হয়ে পড়ে, হীনমন্যতায় ভোগে। ভুল হবেই। কখনো ভুল করেনি- এমন শিশুর নজির নেই। শিশুকে নিজের কথা বলার সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে বাবা-মাকে। যখন শিশুদের সঙ্গে কথা বলবেন তখন তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলুন এবং তাদের জবাবের জন্য অপেক্ষা করুন। শিশুরা যেহেতু বাবা-মাকে অনুকরণ করে সেজন্য কথা বলাসহ তাদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। বর্তমানে বাবা-মায়েরা সন্তানদেরকে ব্যস্ত রাখতে টেলিভিশনের নিত্যদিনের অনুষ্ঠানমালাকে ব্যবহার করছে যাতে তারা সন্তানদের ব্যস্ত রেখে নিজেদের কাজগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ পায়। আমাদেরকে অবশ্যই টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
শিশুদেরকে নিজে থেকে নতুন কাজ করার সুযোগ দেওয়া জরুরি। বড়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের দক্ষতা বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আপনি যখন আপনার শিশু সন্তানকে বই পড়ে শোনাবেন তখন তাকে বইয়ে থাকা ছবিগুলোও দেখান, ছবিগুলো দেখিয়ে বিষয়বস্তু তুলে ধরুন। এর ফলে সে দ্রুত বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। শিশুকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে উৎসাহিত করুন, কিছু না বুঝলে যাতে প্রশ্ন করে বুঝে নিতে সাহস পায় সে পরিবেশ তৈরি করুন। এর ফলে শিশুদের মধ্যে কল্পনা শক্তি বাড়বে। ভাষা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে শিশুরা। শিশুদেরকে এমনভাবে প্রশ্ন করুন যাতে সে এক কথায় জবাব না দিয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরার সুযোগ পায়। ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সে চিন্তা করতে শিখবে এবং যুক্তি তুলে ধরবে। খুব অল্প বয়সী শিশুদেরকে যখন বই পড়ে শোনাবেন তখন অবশ্যই কিছু কিছু শব্দ ও বাক্য পুনরাবৃত্তি করবেন। আমরা সবাই জানি একটি শব্দ ও বাক্য বারবার শুনলে তা বুঝতে সহজ হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা মুখস্থ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় শিশু নিজেও কথা বলা এবং যোগাযোগের কৌশল শিখতে পারবে।
আপনি যখন আপনার সন্তানের সঙ্গে তার ভুলগুলো নিয়ে কথা বলবেন তখন তার সঙ্গে একটু সময় নিয়ে কথা বলুন এবং তার মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এরপর কারণ উল্লেখ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। এই কাজের জন্য অনেক ধৈর্য প্রয়োজন, কিন্তু মনে রাখবেন আপনার এই ধৈর্য অনেক ভালো ফল দেবে। দীর্ঘ মেয়াদে সন্তানের ওপর ভালো প্রভাব ফেলবে। আপনার সন্তানও শিখবে কীভাবে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে হয়। আপনার সন্তান এর মাধ্যমে যোগাযোগের কৌশল শিখবে এবং যুক্তি ও আলোচনা করার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করবে। সন্তানেরা যখন কিশোর বয়সী তখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেও সতর্ক থাকতে হবে। তরুণদেরকেও আচার-আচরণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এর ফলে উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে। মোটকথা সন্তানের কথা শোনার অভ্যাস গড়তে হবে।
শুধু শ্রবণের ধৈর্য থাকলেই হবে না, সন্তান কথা বলার সময় অ-মৌখিক যে বার্তা পাঠাচ্ছে সেটাও উপলব্ধি করতে হবে, বুঝতে হবে। মূল বার্তা বোঝার জন্য উভয় বার্তাই জরুরি। এই ধরণের দক্ষতা বাড়াতে অনুশীলন করতে হবে। নিজের বক্তব্য ও মতামত প্রকাশে সামর্থ্য, নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তরুণদেরকে ভীতু হিসেবে নয় বরং সাহসী হিসেবে গড়ে তুলুন। সন্তানকে শেখাতে হবে তাদেরও অধিকার রয়েছে, অধিকার রক্ষায় সচেতন থাকতে হবে। প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। অন্যের আবেদন বা বক্তব্যের বিষয়ে ভদ্রভাবে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করায় দোষের কিছু নেই এবং প্রয়োজনে 'না' বলতে হবে। প্রয়োজনে 'না' বলার গুরুত্ব সন্তানদেরকে বোঝাতে হবে। নিজের আবেগ-অনুভূতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরি। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও কথা বলার সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুদেরকে নানা পরিস্থিতি মোকাবেলার যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করুন।
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।